নারায়ণগঞ্জ মেইল: একের পর এক নাটকীয়তার জন্ম দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। বিশেষ করে পাঁচটি থানা কমিটি গঠনে জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন সংগঠনের আহবায়ক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। প্রায় প্রতিটি থানা কমিটিতেই সদস্য-সচিব মামুন মাহমুদের একক আধিপত্য দেখা যাচ্ছে। আর এর পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে বাতাসে। জেলা বিএনপি’র একাধিক সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, মামুন মাহমুদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তৈমুর কমিটি গঠন কার্যক্রমে দর্শকের ভূমিকায় চলে গেছেন। আর এই সুযোগে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ।
এদিকে টাকায় কেনা কমিটিতে মূল্যায়ন পাচ্ছেন না আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া ত্যাগী নেতাকর্মীরা। টাকার জোরে অনেক হাইব্রিড নেতা চলে আসছেন নেতৃত্বে। তাই ক্ষোভ বিরাজ করছে প্রতিটি থানার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। এসব হাইব্রিড নেতাদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীরা ইতিমধ্যেই অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। এমনকি টাকার জোরে অখ্যাত কেউ কমিটির নেতৃত্বে এলে গণপদত্যাগের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে তৈমুরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজের পর নিজের পছন্দমত প্রার্থী দিয়ে মোটামুটি দাঁড় করে ফেলেছেন পাঁচটি থানা কমিটির রূপরেখা। রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁ, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে থানা কমিটি গঠনে আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও যুগ্ম-আহ্বায়ক পদের জন্য চলছে টাকার খেলা। টাকা না থাকায় অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা বাদ পড়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে টাকা দিয়ে হাইব্রিড অনেকে চলে আসছেন নেতৃত্বে। যেটাকে ভালো চোখে দেখছেন না রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
অধ্যাপক মামুন মাহমুদের খসড়া কমিটিতে রূপগঞ্জ থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক হতে যাচ্ছেন অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন। এ পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই প্রবীণ আইনজীবীর হাতেই যাচ্ছে রূপগঞ্জ বিএনপির নেতৃত্ব। তার সাথে সদস্য সচিব হিসেবে দেখা যাবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েমকে। তবে এই পদের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক জেলা যুবদল সভাপতি মোশারফ হোসেন ও আশরাফুল হক রিপন। তবে শেষ পর্যন্ত আনোয়ার সাদাত সায়েমের ভাগ্যেই শিকে ছিড়তে যাচ্ছে।
আড়াইহাজার থানা বিএনপিতে কিংমেকার নজরুল ইসলাম আজাদের জয়জয়কার। থানা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনের আধিপত্য খর্ব করে আজাদ নিজ বলয়ের লোক দিয়ে থানা কমিটি করে ফেলছেন। আড়াইহাজার থানা বিএনপি’র আহবায়ক হতে যাচ্ছেন নজরুল ইসলাম আজাদের চাচা লুৎফর রহমান আব্দু আর সদস্য সচিব হচ্ছেন থানা যুবদলের আহবায়ক জুয়েল আহমেদ।
সোনারগাঁ থানা বিএনপি’র আহ্বায়ক হচ্ছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান আর সদস্য সচিব হতে যাচ্ছেন মোশারফ হোসেন। আহবার পদে আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিকল্প না থাকলেও সদস্য সচিব পদে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। দাসপুর থানা বিএনপি’র সভাপতি সেলিম হক রুমি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এ পদের জন্য। এছাড়া সোনারগাঁ থানা যুবদলের আহবায়ক শহিদুর রহমান স্বপনও রয়েছেন আলোচনায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক পদে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ এর প্রথম পছন্দ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি আর সদস্য সচিব আবদুল হাই রাজু।
থানা বিএনপি’র কমিটি গঠনে সবচেয়ে বেশি নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে ফতুল্লা থানা কমিটি গঠন নিয়ে। এপদে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফতুল্লার আহ্বায়ক হতে যাচ্ছেন জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল আর সদস্য সচিব পদে বহাল থাকছেন বর্তমান সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা। যদিও ফতুল্লার শিল্পপতি মোঃ শাহ আলম নেপথ্যে থেকে অনেক চেষ্টা করেছিলেন বিতর্কিত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে নেতৃত্বে আনতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর ধোপে টেকেনি।