নারায়ণগঞ্জ মেইল: অপরাধীদের অভায়ারণ্য হিসেবে পরিচিতি ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় গত ২৮ জুন রাতে ইসদাইর রেললাইন ও চাষাঢ়া রেলস্টেশনে মাদকের স্পট থেকে মাসোহারা আদায় করাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় খুন হয়েছিল রুবেল নামে এক রাজমিস্ত্রি। স্থানীয় সূত্র জানাগেছে, ‘জয়যাত্রা ক্লাব’ নামে একটি ক্লাবে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা মাসোয়ারা দিতো মাদক ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ক্লাবের নামে আরো বেশি টাকা দাবী করে ক্লাবটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এনিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় মাসোহারা আদায় করাকে কেন্দ্র করে মাদককারবারী শামীম, রকি ও মানিক গ্রুপের সাথে ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার জামান, সোহাগ ও শিমুল গ্রুপের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। সেই সংঘর্ষেই রুবেল নিগত হয়।
জানা যায়, ওই সংঘর্ষে রাজমিস্ত্রী রুবেল হত্যাকা-ের ঘটনায় দায়েকৃত মামলায় উভয় পক্ষের ৩৩ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছি। ওই মামলায় এখনো পর্যন্ত ১৪জন গ্রেফতার হলেও এই হত্যা কা-ের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত জয়বাংলা ক্লাবের সভাপতি ওয়াদ্রিব অনন্ত ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ এরা দুইজনই প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। গত কয়েকদিন আগেও চাষাড়া চত্বরে চটপটি থেকে দেখা গেছে ওয়াদ্রিবকে। ওয়াদ্রিব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদের শশুর বাড়ির আত্মীয় হলেন ওয়াদ্রিব। তাই ওয়াদ্রিবের জন্য বিশেষ তদবির করায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। অনেকটা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদের পরিবারও প্রভাবশালী। সাজ্জাদের বাড়ি কাশীপুর হলেও বসবাস করেন চাষাড়াতেই। মূলত বিশেষ তদবির থাকায় হত্যাকা-ে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও পুলিশ ওয়াদ্রিব ও সাজ্জাদকে গ্রেফতার করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
এদিকে, গ্রেফতারদের মধ্যে ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার ফারুক হোসেন শিমুল ফতুল্লা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন মাসুমের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত। চাষাঢ়া রেলস্টেশন ও ইসদাইর রেললাইন এলাকার বিভিন্ন মাদক স্পট থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা শিমুল ও তার সহযোগিরা মাসোহারা আদায় করতো বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে, চাষাঢ়া রেলস্টেশন ও ইসদাইর রেললাইন এলাকার মাদক ব্যবসায়ী শামীম, মানিক ও রকিসহ তাদের সহযোগিরা ইসদাইরে বিশাল সন্ত্রাসী গ্যাং তৈরী করেছিল।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, কিশোরগ্যাংয়ের আধিপত্ত বিস্তার ও বিভিন্ন সেক্টর দখলের লক্ষ্যে এমন একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে ইসদাইরে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা শিমুল, তার সহযোগি জামান, সোহাগ এবং মাদক ব্যবসায়ী শামীম ও মানিক গ্রুপ ছাড়াও রয়েছে কাপুরাপট্টি এলাকার মাদক ব্যবসায়ী পেটকাটা রকি, ইসদাইর এলাকার পায়েল, কমল, মানিক, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী কিশোরগ্যাং হাসান, উজ্জল, খান বাবু, অনন্ত ও মুরগি মামুন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে থানায় মামলা ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, রুবেল হত্যাকা-ের মূলহোতা ওয়াদ্রিব ও সাজ্জাদকে পুলিশ গ্রেফতার না করায় সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা প্রভাবশালীদের তদবিরের কারণে অপরাধ করেও দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওয়াদ্রিব ও সাজ্জাদ।