লকডাউনেও স্কুল খোলা!

বিশেষ প্রতিনিধি: কঠোর লকডাউনের কারণে অপ্রয়োজনে বাইরে বের হলেই জরিমান আদায় করছে ভ্রাম্যমান আদালত। সরকারি নির্দেশনা না মানলেই নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। করোনার প্রভাবে যেখানে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে চলছে ঠিক সেই মুহুর্তে এসাইনমেন্টের নামে বেতন আদায়ের কৌশল অবলম্বন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে আনতে বাধ্য করছে ফতুল্লা থানাধীন কাশীপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় অবস্থিত হাজি উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অথচ সেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্কুলের অভিভাবকরা বলেছেন, প্রশাসন কিভাবে ব্যবস্থান নিবে। কারণ প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি দুইজনই আওয়ামীলীগ নেতা। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সাহস নেই উপজেলা প্রশাসনের। তাছাড়া স্কুলের সভাপতি এমপি সাহেবের কাছের লোক। এমপির সুনজর থাকায় ইউনিয়ন পরিষদে বিনা ভোটে চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে তো আর প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে না। যেখানে সাধারণ মানুষ অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে সেখানে ছাড় দেয়া হচ্ছে প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে।

গত সোমবার হাজি উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভীড় দেখে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন ও পরিক্ষার ফি আদায় করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে সদর উপজেলার ইউএনও মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষককে বেতন নেয়া বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু এঘটনায় এখনো পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

সূত্র বলছে, স্কুলটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. সাইফুল্লাহ বাদল। এমনকি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়ূন কবীর রতনও থানা আওয়ামীলীগের পদে রয়েছেন। তাই দলীয় পদের দাপটে কঠোর লকডাউনেও স্কুল খোলা রেখে বেতন ও পরিক্ষার ফি আদায় করেছিলেন কর্তৃপক্ষ।

স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, তিনটি ভবনেই শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বকেয়া বেতন এবং এসাইনমেন্ট পরীক্ষার জন্য ফি বাবদ ৩২০ টাকা হারে আদায় করছে। মাঠের ভেতর সাংবাদিকের প্রবেশ দেখেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হুমায়ূন কবীর রতন গেইটে থাকা দাড়োয়ানকে গালমন্দ করছেন কিভাবে শিক্ষার্থীরা ভেতরে প্রবেশ করলো। উনার ভাবটা এমন ছিলো যে “উনি ভাজা মাছটুকু উল্টিয়ে খেতে জানেন না”।

সন্তানের স্কুলের বকেয়া বেতন ও এসাইনমেন্ট ফি দিতে আসা এক “মা” বলেন, কঠোর লকডাউনের মধ্যে এভাবেই পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছি। তার উপর স্কুল থেকে বকেয়া বেতনের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। অনেকটাই নিরাশার মাঝে আছি। গতকাল এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা ধার করে এনে স্কুলের বেতন ও এসাইনমেন্ট ফি বাবদ ১৫২০ টাকা পরিশোধ করলাম।

৭ম শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী জানান, আগে এসাইনমেন্টের প্রশ্নের উত্তর স্কুলে জমা দিতে আসলে ম্যাডাম তা জমা নিতে চায়নি বকেয়া বেতনের জন্য। আমি ম্যাডামকে অনুনয় করলে সে উক্ত এসাইনমেন্টের উত্তরটুকু জমা রেখেছিলেন। আজও এসেছি আরেকটি এসাইমেন্টের উত্তর নিয়ে। বেতন এনেছো এমন প্রশ্নের জবাবে উক্ত শিক্ষার্থী বলেন, আব্বু অনেক চেষ্টা করেছিলেন টাকার জোগানোর কিন্তু পারেনি। তাহলে তোমার কাগজতো জমা নিবে না,এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে ম্যাডাম বুঝিয়ে বলবো।

বকেয়া বেতন ও এসাইনমেন্টের টাকার জন্য চাপের কথা অনেক শিক্ষার্থী বললো তার পরিবারের সমস্যার কথা কিন্তু তা শুনতে নারাজ স্কুল কর্তৃপক্ষ।

করোনাকালে স্কুল খোলা এবং বেতন ও এসাইনমেন্টের টাকার জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি এতো চাপ প্রয়োগ কেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাজী উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.হুমায়ূন কবীর রতন বলেন, এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এম.সাইফুল্লাহ বাদল সাংবাদিকদের কাছে কিছু না বলতে নির্দেশ দিয়েছেন। উনি তো প্রধান শিক্ষক না উত্তর তো আপনার কাছেই জানতে চাইবো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ স্কুলে বাদল সাহেবই অল ইন অল। করোনাকালে যেখানে দেশে সর্বত্র কঠোর লকডাউন চলছে এবং সাধারন মানুষকে অতিপ্রয়োজনীয় কাজ ব্যতিত ঘর থেকে বের না হতে নির্দেশনা রয়েছে সেখানে আপনি কোমলমতি শিক্ষার্থীগুলোকে বাসা থেকে বের করে স্কুলে আনছেন কেন? উত্তরে তিনি বলেন, ওরা এসাইনমেন্টের প্রশ্ন নিতে এসেছে। তাছাড়া আমরাতো একটি বিজ্ঞপ্তিও সাটিয়ে দিয়েছি ওরা আসে কেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভাই আমরাতো ২১টি এসাইমেন্টের জন্য মাত্র ৩২০ টাকা নিচ্ছি অথচ মর্গ্যান স্কুলে তো একই পরিমানে এসাইমেন্টের জন্য দুই ধাপে ১০০০ টাকা আদায় করছে এবং তারা শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের জন্য ১২০০ টাকা হারে আদায় করছে। আপনারা সেখানে যান না কেনো।

এ বিষয়ে হাজি উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজি কমিটির সভাপতি আলহাজ এম.সাইফুল্লাহ বাদলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা’র মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি একটু খবর পেয়েছিলাম পরে ফোন করে তা বন্ধ করে দিয়েছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ