নারায়ণগঞ্জে ইজারা ছাড়াই হাট দখল!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে হাট দখলের অভিযোগ উঠেছে। আর এভাবে হাট দখলের কারণে প্রতিবছর সিডিউল বিক্রির সময় উপজেলা প্রঙ্গনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে। তাই সংঘর্ষ এড়াতে এ সকল অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের।

শুক্রবার (৯ জুলাই) সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সৈয়দপুর কয়লা ঘাট হাটে ইতিমধ্যে কোরবানীর পশু উঠতে শুরু করেছে। অথচ এখনো হাটের ইজারাই দেয়া দেয়নি। শুধু গরু উঠানোই নয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্রেতাদের হটে আসতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কয়লা ঘাটের মত শহীদ নগরের পাঠাননগর হাট, কাশীপুর অস্থায়ী পশুর হাটসহ সব কয়টিই দখল করে ইতিমধ্যে বাঁশ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার কয়লা ঘাট পশুর হাটটি দখলে নিয়েছেন হাট সন্ত্রাসী রুস্তম আলী। পাঠাননগর হাটটি প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমানের নাম ভাঙিয়ে দখল করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।

কাশীপুরের হাটটি দখল করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল। মূলত হাটগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে হাটের বিষয় এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। হাট ইজারার কোন বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ হয়নি। যদি এখনই কেউ হাট দখল করে তাহলে বিষযটি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া সিডিউল বিক্রি নিয়ে কোন প্রকার সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটে সেই বিষয়টিও নজর রাখা হবে।

জানা গেছে, পবিত্র ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে পশুর হাট নিয়ন্ত্রন নিতে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তৎপর হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে হাট দখল নিয়ে চলছে গ্রুপিং। কেউ কেউ এখনই পোস্টার ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করছেন। তবে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পশুর হাটগুলো নিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা তেমন সুফল না পেলেও উপজেলার হাটগুলো নিয়ে ঝামেলা করে থাকে। যার ফলে প্রতিবছরই সদর উপজেলায় হাটের টেন্ডার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আসছে। আগামী ২১ জুলাই ঈদ হওয়ায় এখনো হাটের বিজ্ঞপ্তি দেয়া না হলেও হাট দখলে নেমে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। মূলত প্রতিবছরই কৌশলে হাটের ইজারা পেয়ে থাকেন ক্ষমতাসীনরাই। কেননা অন্য কাউকে সিডিউল ক্রয় করতে দেয়া হয়না। তাই নাম মাত্র মূল্যে হাটগুলো ইজারা দেয়া হচ্ছে।

বিশেষ করে সদর উপজেলার হাট ইজারার ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে বেশি হয়ে থাকে। পাশপাশি সিডিউল ক্রয় নিয়ে ক্ষমতাসীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে থাকে। গত বছর সিডিউল ক্রয়কে কেন্দ্র করে সদর উপজেলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। যদিও সেই সময় সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতার অভিযোগ ছিল। তবে এবারও কি সংঘর্ষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, নিয়ম তান্ত্রিকভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও মূলত এবারও সদর উপজেলার ১১টি হাটই ক্ষমতাসীনদের দখলে থাকবে বলে আশঙ্কা সকলের। গতবার অনেকেই সিডিউল ক্রয় করতে গেলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয় অথবা ক্রয় করতে দেয়া হয় না। এখনো হাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি না হলেও ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীনরা হাট বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মূলত ক্ষমাসীন দলের নেতারা সিন্ডিকেট করে হাটগুলো নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছেন। যার ফলে সরকার বিপুল অংকের টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেটের মধ্যমে নামমাত্র মূল্যে হাটগুলো ইজারা নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠে অস্থায়ী পশুর হাটের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সদর উপজেলা। গত বছর কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন খালি মাঠে অস্থায়ী পশুর হাটের দরপত্রের আহবান করা হয়েছিল। অথচ সেই মাঠটি সরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন রেখে কাশিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন খালি মাঠ বলা হয়েছিল বিজ্ঞপ্তি। গত বছর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে নামমাত্র অর্থে অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারা দেয়া হয়েছিল। এবারও ইজারা দেয়ার আগেই তারা হাট দখলের সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ