নারায়ণগঞ্জ মেইল: র্যাব-১১ এর অভিযানে বহুমুখী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার হলেও এই চক্রের আরো দুইজন মূলহোতা এখনো অধরা রয়েছে বলে জানা গেছে। যারা কখনো মানবাধিকার কর্মী আবার কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানী, চাঁদাবাজী, প্রতারণাসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার বিকেলে র্যাব-১১ চালিয়ে বহুমুখী প্রতারণার মূলহোতা প্রদীপ চন্দ্র বর্মণ ও আনিসুর রহমান নামের দুইজন প্রতারককে গ্রেফতার করে। তবে এই চক্রের সদস্য ফেরদৌসী আক্তার রেহানা ও জহিরুল ইসলাম সাগর এখনো অধরা রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতারক ফরদৌসী আক্তার রেহানার বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
সূত্রে প্রকাশ, বহুমুখী প্রতারক চক্রের মূলহোতা প্রদীপ চন্দ্র বর্মণ ওয়াকিটকি সেট, মনোগ্রাম সম্বলিত জ্যাকেট ও হ্যান্ডকাফ দেখিয়ে নিজেকে একাধারে ‘সমাজের জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’ তালাশ নিউজ টিভি-৭৯ ও দৈনিক সত্যের সংগ্রাম পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে পরিচয় প্রদান করে থাকে এবং সে ভুয়া আইডি কার্ড তৈরি করে, ট্রাফিক পুলিশ ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চাকুরীর আশ্বাস দিয়ে এবং তার কথিত টিভি চ্যানেল ও ‘সমাজের জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার’ অন্যান্য সদস্যপদে ও নিউজ চ্যানেলের জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে সরল বিশ্বাসী মানুষের কাছ থেকে চাকুরী প্রদানের আশ্বাস দিয়ে পরিকল্পনা মাফিক বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিত বলে জানায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রদীপ চন্দ্র বর্মণের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতো ফেরদৌসী আক্তার রেহানা ও জহিরুল ইসলাম। ফেরদৌসী আক্তার রেহানা আগে এড. মজিদ খন্দকারের মুহুরী হিসেবে কাজ করতেন। পরে প্রদীপ চন্দ্র বর্মণের সাথে পরিচয় হওয়ার পর প্রতারনা চক্র গড়ে তুলে। ফেরদৌসী আক্তার রেহানা জহিরুল ইসলামকে এই চক্রে যুক্ত করেন।
এদিকে প্রতারক প্রদীপ কুমার বর্মনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিশেষ করে তার অপর দুই সহযোগী কথিত মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ফেরদৌসী আক্তার রেহেনা ও জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট পড়তে থাকে। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জে ছড়িয়ে-ছটিয়ে থাকা এ ধরনের প্রতারকদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন নারায়ণগঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজ।
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলাধীন স্বস্তাপুরের বাসিন্দা ফেরদৌসী আক্তার রেহানার এক ছেলে ও এক মেয়ে থাকলেও স্বামীর সাথে সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। তবে স্বামী না থাকলেও সহযোগী জহিরুল ইসলামকে নিয়েই প্রতারণা ফাঁদ পেতে সাধারণ মানুষদের হয়রানী করে আসছেন তিনি, এমনটাই অভিযাগ রয়েছে। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে শহর জুড়ে দাবড়িয়ে বেড়াতো তারা দুইজন। নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি জেলাতে এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছেন।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরশেনের ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছিলেন সাইদা আক্তার শিউলি নামের এক নারী। ঐ মামলার ২নং আসামী হলেন ফেরদৌসী আক্তার রেহানা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে সাঈদা আক্তার ওরফে সায়েদা শিউলি নামক এক নারীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে কূৎসা রটানোর অভিযোগে কাউন্সলির মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদসহ ফেরদৌসী আক্তার রেহানার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ফতুল্লা মডলে থানায় মামলা হয়েছিল। অভিযোগে রয়েছে, সায়েদা শিউলিকে ফেরদৌসী আক্তার রেহানা উনি ফেসবুকে লাইফে এসে অকথ্য ভাষায় মন্তব্য করে সম্মানহানি করেছেন। এমনকি মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে শিউলির বাড়িতে গিয়ে তার অনুপস্থিতিতে হয়রানি করেছে।
এদিকে আরও জানা গেছে, ফেরদৌসী আক্তার রেহানার সহযোগি জহিরুল ইসলাম ছিলেন সায়েদা শিউলির সাবেক স্বামী। তাই খোরশেদ ও সায়েদা শিউলির বিষয় জানাজানি হলে সক্রিয় হয়ে উঠেন প্রতারক চক্রের মূলহোতা ফেরদৌসী আক্তার রেহানা। প্রদীপ চন্দ্র বর্মণ ও আনিসুর রহমান গ্রেফতারের পর দ্রুত ফেরদৌসী আক্তার রেহানা ও জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর মামলার আসামি ফেরদৌসী আক্তার রেহানার গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।