জৈষ্ঠ্যের দাবদাহে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে অস্বাস্থ্যকর শরবত!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: বেশ ক’দিন ধরে সারা দেশেই চলছে প্রচণ্ড তাপদাহ। নারায়ণগঞ্জেও প্রচণ্ড গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। এই গরমে তৃষ্ণা মেটাতে অনেকেই ফুটপাতের বিভিন্ন দোকানের অস্বাস্থ্যকর ঠাণ্ডা শরবত ও জুস পান করছেন। দোকানিরাও তৃষ্ণার্ত গ্রাহকদের সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন লেবুর শরবত, বেল, পেঁপে, আখ, মাল্টা, আঙ্গুরের ঠাণ্ডা জুস। এসব পানীয়কে চিকিৎসকরা বলছেন অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত। তাদের মতে, এসব শরবত-জুস পানে তৃষ্ণা মিটলেও স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি বাড়ছে। এসব পানীয়তে টাইফয়েড, কলেরা, ও ডায়রিয়ার মতো রোগের জীবাণু রয়েছে বলেও তারা জানান।

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গ্রীষ্ম এলেই ভ্যানগাড়িতে করে শুরু হয় জুস কিংবা ঠাণ্ডা পানীয় বিক্রির প্রতিযোগিতা। একটি পানির ফিল্টারের মধ্যে বরফ, কয়েক শ লেবু ও ‘ড্রিংক পাউডার’ নিয়েই চলে এই পানীয় তৈরির প্রক্রিয়া। রাস্তার পাশে এসব পানীয়র মধ্যে লেবু আর ড্রিংক পাউডারে তৈরি পানীয় বেশ জনপ্রিয়। শুধু লেবুর পানি এক গ্লাস ৫ টাকা এবং এই ড্রিংক পাউডার মেশানোর লেবুর পানি প্রতি গ্লাস ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে কিংবা শহরের যেকোনো অলিগলিতে দেখা মিলছে এসব ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি দরে এক বস্তা লেবু কেনেন তারা। ওয়াসার লাইনের পানি আর মাছের জন্য তৈরি বরফ সংগ্রহ করলেই হয়ে যায় সারাদিনের ব্যবসা। গরমে সাধারণ মানুষের এই ধরনের পানীয়ের চাহিদা বেশি হওয়ায় নগরীর চাষাড়া, খানপুর, দুই নাম্বার গেট, এক নাম্বার গেট, রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল, বিভিন্ন মার্কেটের সামনেসহ পুরো নারায়ণগঞ্জের আনাচে-কানাচে বিক্রি হচ্ছে এসব অস্বাস্থ্যকর পানীয়। এসব শরবতে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শরবত বিক্রেতা বলেন, গরমে মানুষ লেবুর পানি বেশি খায়। চাহিদা বেশি বলে বিক্রিও বেশি হয়। অনেকেই এখন এই ব্যবসা করেন। সামান্য পুঁজিতেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়।

পানির বিশুদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়াসার লাইনের পানি। সমস্যা নাই, সবাই খায়। আমরাও খাই।’

দিনে প্রায় ৬০০ মানুষ এই শরবত বিক্রি হলেও এসব ভ্যান গাড়িতে গ্লাস থাকে ৩-৪টি। একজনের খাওয়া শেষ হলে সেই গ্লাস সাধারণ পানি দিয়ে ধোয়ার পর সেই গ্লাসে আবারও পরিবেশন করা হচ্ছে আরেকজনকে। আবার লেবুর রস যেই যন্ত্র দিয়ে চিপে বের করা হচ্ছে, তাতেও ময়লা জমে থাকতে দেখা গেছে।

শরবত বিক্রেতা সঙ্গে কথা বলতে বলতে দোকানে একজন গ্রাহক আসেন। তিনি শরবত দিতে বললেন। লেবুর রসের সঙ্গে প্যাকেটের ‘ড্রিংক পাউডার’ মিশিয়ে বানানো শরবত পানের সময় কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা প্রতিদিনই খাই। গরমে শুধু পানি না খেয়ে একটু ভিন্ন স্বাদের পানি খাওয়ার জন্য এটি খাই। যদিও বাইরের খোলা পানীয় এভাবে খাওয়া উচিত নয়। অনেকদিন ধরেই তো খাচ্ছি। এখন পর্যন্ত কিছু হয়নি।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বছরের মার্চ-এপ্রিল এবং জুন-জুলাই মাসের দিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। ফুটপাতের খোলা খাবার ও পানীয়ই এর বড় কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকদের মতে, ‘গরমে পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য জরুরি। রাস্তার পাশে যে পানি পাওয়া যায় সেটা তো অস্বাস্থ্যকর। এসব পানির মাধ্যমে টাইফয়েড, কলেরা, ডায়রিয়ার জীবাণু খুব সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে যে খুব সিভিয়ার ডায়রিয়া হচ্ছে। লেবুর যে পানি রাস্তার পাশে বিক্রি হয়, সেখানে দেখা যাচ্ছে পানির কন্টেইনারটেই ঠিকমতো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। গ্লাসগুলো ঠিকমতো ধোয়া হচ্ছে না। ফলে জীবাণু থেকেই যাচ্ছে। একই গ্লাস বারবার ব্যবহারের ফলে একজনের জীবাণু আরেকজনের মধ্যেও যাচ্ছে। হয়তো কোনও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি খাচ্ছেন, সেই গ্লাস ভালো করে না ধুয়ে যখন আরেকজন সুস্থ মানুষ খাচ্ছেন, তখন জীবাণু খুব সহজেই সুস্থ মানুষটির শরীরে প্রবেশ করতে পারছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে সহজেই সংক্রমিত হচ্ছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ