নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও অসংখ্য ভূমিদস্যুতার অভিযোগে অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীন উরফে আল জয়নাল ফের আলোচনায় আসতে চাইছেন। শনিবার (২২ মে) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন করেছেন ভূমিদস্যু জয়নাল। এক সময় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষক জয়নাল ভোল পাল্টে জাতীয় পার্টির নেতা হয়ে শহর দাপিিয়ে বেড়াচ্ছেন। শহর জুড়ে সচেতন মহলের এখন একটাই প্রশ্ন- ভূমিদস্যু জয়নালের নেপথ্যে রসদ যোগাচ্ছেন কারা! একের পর অপকর্ম করে গেলেও সাবেক এই জামায়াত নেতার অপ্রতিরোধ্য গতিই এই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকারী বেসরকারী জায়গা দখল করে চিহ্নিত ভূমিদস্যু হিসেবে আবির্ভূত হলেও বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। সামান্য ফুটপাতের হকার থেকে জয়নালের কোটিপতি হওয়ার নেপথ্যে কারা রয়েছেন সেটিই এখন জানতে চায় নগরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এককালে ফুটপাতে বসে হোসিয়ারি মালামাল বিক্রি করতেন তিনি। কাজ করেছেন বন্দর এলাকায় রিকশা গ্যারেজেও। সেই সাধারণ জয়নাল হঠাৎ করেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বনে যান জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নাল। নগরীর বুকে সুবিশাল অট্টালিকা আল জয়নাল প্লাজা গড়ে হয়ে উঠেন বিশিষ্ট শিল্পপতি। একজন হকার থেকে শিল্পপতি হয়ে উঠা জয়নালকে নিয়ে গত দেড় দশকে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। কখনও জঙ্গি কানেকশন, জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মামলার আসামি, কখনও হেফাজতের পৃষ্ঠপোষক, কখনও কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের নেতা, এমন অনেক কথাই হয় এই রহস্যময় জয়নালকে ঘিরে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে চাষাড়া এলাকায় রাজউকের জমি দখল করে বহুতল মার্কেট নির্মাণের অভিযোগে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় পরদিন থেকেই আবারও নির্মাণকাজ শুরু করেন। যা এখন আল জয়নাল ট্রেড সেন্টার নামে নগরীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওই একই বছর সকালে কারাগারে গিয়েও আবার বিকালে বাসায় এসে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তৎকালীন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস জুয়েলে দায়ের করা একটি মামলায় সকালে তাকে আদালতে পাঠানো হলেও বিকেলেই তিনি বেরিয়ে আসেন।
এ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে জামায়াত ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত জয়নাল আবেদীনের ভাগিনাকে পুলিশ আটক করে। তখনই পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয় জয়নাল আবেদীন জামায়াত ইসলামীকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। পরে জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাও করে।
কিন্তু জয়নাল আবেদীন এখন নিজেকে জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টাও করেন। জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক থেকে কার ছায়াতলে থেকে জাতীয় পার্টির নেতা হয়ে গেলেন আল জয়নাল- সে রহস্যের জাল এখনো উন্মোচিত হয়নি।
সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের সামনের একটি জায়গা জোর করে দখল করে নেন জয়নাল। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। ঐ বছরই নবীণ বরণ অনুষ্ঠানে এসে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানও মহিলা কলেজের জায়গার জন্যে রাস্তার নামার হুশিয়ারী প্রদান করেন। কিন্তু তবুও বহাল তবিয়তে বিতর্কিত এই ব্যবসায়ী।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েলের নির্মানাধীণ দেয়াল ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ উঠে জয়নালের বিরুদ্ধে। একই দিনে জয়নালের বাহিনী সেখানকার এক জুটের গোডাউনে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে মারধর করে ৩ লাখ টাকা লুটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।