নারায়ণগঞ্জ মেইল: ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের তান্ডবের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত তান্ডব চালিয়েছিল হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ঠিক একইরকমভাবে গত ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইলে তান্ডব চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকরা। ২৮ মার্চের পর ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ইস্যুতে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার পর পুলিশ হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। এরই মধ্যে নারায়ণলগঞ্জ হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে করে অনেক নেতা আত্মগোপনেও চলে গেছে। কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন জেলা হেফাজতে ইসলামের আমীর (সভাপতি) ও শহরের ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও মহানগর কমিটির সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। এদের মধ্যে ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে শিমরাইলে যে তান্ডব চালিয়েছিল তার ইন্ধনদাতা হিসেবে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের নাম রয়েছে। অথচ এখনো অনেকটা দাপটের সাথে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। যেখানে ইউনিয়ন পর্যায়ের হেফাজত নেতারাও গ্রেফতার আতংকে রয়েছে।
এদিকে, নতুন করে হেফাজতে ইসলামের আরও দুই শ’ নেতার তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই তালিকা ধরে রাজধানী ঢাকার বাইরেও অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি এই অভিযান চালাচ্ছে। সেই তালিকায় নারায়ণগঞ্জের একাধিক নেতার নাম রয়েছে বলে জানাগেছে। মূলত প্রতিনিয়ত গ্রেফতার, গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা ও নজরদারীর ভয়ে এরইমধ্যে ভেঙে পড়েছে দলটির শীর্ষ কমান্ড। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে তালিকা ভাগ করে দেওেয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের ধরতে ডিবির একাধিক দল অভিযানও শুরু করেছে। পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্স র্যাবও ঢাকার বাইরের শীর্ষ হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএমপিতে দায়ের হওয়া মামলার অনেকে আসামি ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। তাদেরও ধরতে অভিযান চলছে। আমাদের গোয়েন্দা পুলিশ তাদের নজরদারী এবং গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে কিছু কিছু আসামিকে ধরতে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে রিকুইজিশন দিচ্ছি। তারা গ্রেফতার করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে।’ ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আইনভঙ্গকারী কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনও ছাড় নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, নতুন তালিকায় মোট ১৯৪ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধ শতাধিক নেতা চট্টগ্রামের। এর বাইরে কক্সবাজার, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়খালী ও মুন্সীগঞ্জের একাধিক হেফাজত নেতার নাম রয়েছে। আর সেই তালিকায় ফেরদাউসুর রহমান কিংবা আব্দুল আওয়ালের নাম রয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলায় হেফাজতের নেতারা গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক নেতাই আত্মগোপনে চলে গেছে।