তৃণমূলের আক্ষেপ, রাজনীতিতে কি পেলেন খোকন সাহা!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। কর্মী বান্ধব এই রাজনীতিবীদ ১৯৭৫ সালে ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন। পেশাগত জীবনে আইনজীবী খোকন সাহা দীর্ঘ সময় পার করেছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। তিন মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পার করছেন দুই যুগ। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে একই পদে দুই যুগ সময় পার করছেন দাবি করেছেন অ্যাড. খোকন সাহা। রাজনৈতিক জীবনে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব কষতে গেলে এই প্রাপ্তিই তার কাছে সবচেয়ে ‘সুখকর’ মন্তব্য খোদ খোকন সাহার।

তবে তৃণমূল মনে করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে খোকন সাহার অবদান অনস্বীকার্য। বটবৃক্ষের মতো তিনি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাথার উপর ছায়া দিয়ে গেছেন। কর্মী গড়ার কারিগর হচ্ছেন এড. খোকন সাহা। তার হাত ধরে নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠেছে আওয়ামীলীগের বিশাল কর্মীরাহিনী। সেইসাথে অনেক আক্ষেপও রয়েছে তৃণমূলের, আর সে আক্ষেপ হলো নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রাখা খোকন সাহা শুধু দিয়েই গেলেন, বিনিময়ে তিনি কি পেলেন! একজন রাজনীতিবীদের স্বপ্ন থাকে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করা। কিন্তু এড. খোকন সাহা জনপ্রতিনিধি না হয়েও জনগনের সেবা করে যাচ্ছেন দিনরাত।

জানা যায়, চলমান মহামারি করোনা ভাইরাসের সূচনা লগ্নে গত বছরের লকডাউন শুরুর পর থেকেই জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারমহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছেন। সেই সাথে লকডাউনে কর্মহীন অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন। যার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে এখানো। যেখানেই কারো সমস্যার কথা শুনতে পান, সাথে সাথেই ছুটে যান এবং সম্ধাানের চেষ্টা করেন।

রাজনীতির শুরুর বিষয়ে এড. খোকন সাহা বলেন, “আমি তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ঘুম থেকে উঠে রেডিওতে মেজর ডালিমের কণ্ঠে ‘স্বৈরাচার শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’ শুনতে পেলাম। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড আমি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারি নাই। আমি তখন নগন্য কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগে যোগদান করি। নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। তখন রাজনীতিতে অনেক ক্রাইসিস। রাজনীতি করতে লোক পাওয়া যাইতো না। ’৭৬ সালে এক মিলাদের দোয়ায় বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উচ্চারণ করতে ইমাম ভয় পাচ্ছিলেন। অনেক চেষ্টার পরও দোয়ায় বঙ্গবন্ধুর নাম বলানো গেল না। পরের বছর আরেকটা মিলাদের আয়োজন করা হলো। অনেক নেতাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অতিথির মাত্র তিনজন এসেছিলেন। পরে তোলারাম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বাণিজ্য শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলাম। সভাপতি হলো বন্ধু আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল।

নারায়ণগঞ্জে রাজনীতির অবস্থা তখন খুব ঘোলাটে ছিল। আমি আমার নেতা শামীম ওসমানের বাবা সামসুজ্জোহা সাহেবের আশীর্বাদে রাজনীতি করতাম। আড়াইহাজারের সম্মেলনে আমার নেতা সামসুজ্জোহাকে পরাজিত করা হয়েছিল। তারপর তোলারাম কলেজ নির্বাচনে আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, জোহা সাহেবকে ছাড়তে হবে। শামীম ওসমানকে ভিপি ক্যান্ডিডেট করার সিদ্ধান্ত নিলাম। জিএস ক্যান্ডিডেট ছিল জাহাঙ্গীর আলম। সেখানে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হলো।

১৯৯৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবার নারায়ণগঞ্জ শহর (সিটি) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সে সময় সভাপতি ছিলেন শামীম ওসমান। এরপর ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরে ২০১৩ সালে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে সম্মেলন ছাড়াই আরও একবার মহানগর (শহর থেকে মহানগর নামকরণ) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। টানা তিন মেয়াদে দুই যুগ পার করছেন এই রাজনীতিক।

নিজেকে সারা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রবীণতম সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন খোকন সাহা। তিনি বলেন, টানা ২৪ বছর কোন ইউনিটে কেউ সাধারণ সম্পাদক থাকতে পারে নাই।

রাজনীতির বাইরে পেশাগতভাবে খোকন সাহা একজন আইনজীবী। নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতে বেশ নামডাক রয়েছে তার। জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। ছিলেন দুইবারের সাধারণ সম্পাদক। তার রাজনীতি কিংবা পেশাগত জীবনে যেখানেই নেতৃত্ব দিয়েছেন সেখানেই সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে দেখা গেছে বেশিরভাগ সময়। এ নিয়ে তিনি নিজেও বলেন, “আমি সভাপতি হতে চাইতাম না। সাধারণ সম্পাদক হতেই ভালো লাগে। কাজ করা যায়।”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ