নারায়ণগঞ্জ মেইল: ক্ষমতাশীন দল হলেও নারায়ণগঞ্জে একটা শক্ত অবস্থান তৈরীতে ব্যর্থ হয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। মূলত: উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরুর দ্বন্দের কারনেই শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে স্পষ্ট বিভক্তি বিরাজমান। নেতাদের বিভক্তির কারনে কর্মীদের মাঝেও বিরাজ করছে চরম বৈরীভাব। ফলে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পরেও নারায়ণগঞ্জে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে পারেনি আওয়ামীলীগ।
অপরদিকে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে সাংগঠনিকভাবে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠন করে থানা ও উপজেলা কমিটি গঠনের প্রকৃয়া চলমান রয়েছে। মহানগর বিএনপির কমিটিও খুব শীঘ্রই নতুন করে সাজানো হবে। সেইসাথে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও আগের চেয়ে বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ। বলা হয়ে থাকে ক্ষমতাসীণ দলটির জন্মও হয়েছে এই নারায়ণগঞ্জে। ইতিহাসে বর্র্ণিত রয়েছে, জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবদি দলটির যতো আন্দোলন সংগ্রাম, তার উৎপত্তি হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে। পরবর্তীতে যা সারাদেশে আন্দোলনের জোয়ার তুলেছে। এই কারণে নারায়ণগঞ্জকে রাজনীতির আতুড়ঘর হিসেবে দাবী করা হয়ে থাকে। তবে সাংগঠনিক ভাবে দলটি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চাইতে ভালো অবস্থানে থাকলেও দলীয় কোন্দল দলটির ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে তৃণমূলকে শঙ্কিত করে তুলছে। নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৩টিতেই রয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি। এরা হলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে গাজী গোলাম দস্তগীর (বীর প্রতীক), নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম বাবু এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জেলার প্রভাবশালী নেতা একেএম শামীম ওসমান। তিনজনেই স্ব স্ব আসনে বেশ প্রভাবশালী। নিজেদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণাবলি দিয়ে ওই সংসদীয় আসনগুলোতে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কমিটি গুলোকে একক নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তারা।
এদিকে তিন সাংসদের বাইরেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কিছুটা আধিপত্য রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দুইবারের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর। ফলে ৩ এমপি ও মেয়র, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে এই ৪টি শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ করে থাকে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে। এতে করে এ জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন গ্রুপিং রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি নেতাকর্মী এদের কারো না কারো অনুগামী হিসেবে রাজনীতি করে যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের বিভক্তি মূলত দুই প্রভাবশালী নেতার দ্বন্দের বহি:প্রকাশ। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান আর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীর পরিবারের দ্বন্দ নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগকে কার্যত দুটুকরা করে রেখেছে। একই দলের রাজনীতি করলেও এ দুই নেতার অনুসারীরা এখনো কোন কর্মসূচিতে এক হতে পারেননা। একই কর্মসূচি দুই ভাগে পালন করেন তারা। ফলে নেতাদের কারনে বিভক্ত হয়ে পরছে কর্মীবাহিনী, শক্তি হারাচ্ছে আওয়ামীলীগ।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এখন রয়েছে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। দলকে সংগঠিত করতে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে চলছে ব্যাপক রদবদল। নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সকল কমিটি। ফলে আন্দোলন সংগ্রামে ঝিমিয়ে পরা নেতাকর্মীরা এখন পুনরায় জেগে উঠেছে এবং শক্তি বাড়াচ্ছে দলের।