নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান গড়তে তৎপর রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সলিনা হায়াত আইভী। কিন্তু আওয়ামীলীগের নেত্রী হলেও মেয়র আইভীর সঙ্গে আওয়ামীলীগ বিরোধীদের সাথেই বেশি সুসম্পর্ক। শহরে বিভিন্ন ইস্যুতে যারা কর্মসূচী পালন করে সরকারের কড়া সমালোচনা করে আসছে তারাই মেয়রের ঘনিষ্টজন। শুধু তাই নয়, সরকার দলীয় নেতা কিংবা কাউন্সিলরদের প্রতি নাখোশ থাকলেও বিএনপির নেতা কিংবা কাউন্সিলর হোক তাদের সাথে মেয়রের সুসম্পর্ক। সিটি কর্পোরেশন কিংবা ব্যক্তিগত প্রতিটি কাজেই মেয়রের সঙ্গী হিসেবে উপস্থিত থাকছেন বিএনপির ক্যাডার ও জোড়া খুনের আসামী হাসানের স্ত্রী বিভা হাসান। বিভা হাসানকে প্যানেল মেয়রও বানিয়েছেন মেয়র আইভী। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় নেতাদের কোন পাত্তা দেন না মেয়র আইভী। কিন্তু বাম রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা, বিএনপি নেতাদের সাথে মেয়রের সুসম্পর্ক রয়েছে। অথচ গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন সেলিনা হায়াত আইভী।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীকে ঘিরে আওয়ামী লীগের যে দু’টি বলয় তৈরি হয়েছে, তারা মাঝে-মধ্যেই শক্তি পরীক্ষায় নেমে দলের ও ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের মুখে কালি লেপে দিচ্ছে। দুই পরিবারের লড়াইয়ের শুরু প্রায় পাঁচ দশক আগে। দুটি পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরীক্ষিত পক্ষ। খান সাহেব ওসমান আলীর পরিবার আর আলী আহমেদ চুনকার পরিবার প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। সেই জেরটা আরো জোরালো হয় ১৯৮০ সালে। এরপর থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম দ্বন্দ্ব চলে আসছে। দ্বন্দ্বের কারণে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একসময় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ একক ভাবে সাংসদ শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রনে থাকলেও বর্তমানে রাজনীতির মাঠে নিজের অবস্থান শক্ত করছেন মেয়র আইভী।
তবে অভিযোগ রয়েছে, দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়ে আওয়ামীলীগ বিরোধীদের সাথে বেশি সুসম্পর্ক রয়েছে মেয়র আইভীর। আওয়ামীলীগ বিরোধীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন মেয়র আইভী। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগকে সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল করতে শামীম-আইভীর দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাচ্ছে বিরোধীরা। বিগত সময়ে সাংসদ শামীম ওসমানের জন্য বিরোধীরা নারায়ণগঞ্জে শক্তির জানান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আওয়ামী বিরোধী মেয়র আইভীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে শেল্টার দিচ্ছে। এতে করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করেছেন মেয়র আইভী। কিন্তু এতে করে দলেরই ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বিভিন্ন সময়ে ত্বকী মঞ্চের অনুষ্ঠানে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্য দেয়ার কারণেই রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরী হচ্ছে। তবে সেক্ষেত্রে শামীন অনুসারিরাও পিছিয়ে নেই। পাল্টা জবাবও দিচ্ছে তারা। এতে করে নারায়ণগঞ্জে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি ২নং রেইল গেইট লঞ্চ ঘাটে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৮ বছরে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ‘আলোর ভাসান’ অনুষ্ঠানে ওসমান পরিবারকে নিয়ে মেয়র আইভীর বক্তব্যে ক্ষুব্ধ শামীম অনুসারিরা। ঐ অনুষ্ঠানে সাংসদ সেলিম ওসমান, সাংসদ শামীম ওসমান, সালমা ওসমান লিপি ও আজমেরী ওসমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন মেয়র আইভী ও ত্বকী মঞ্চের নেতারা। এমনকি রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানায় মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানায় বলে ওসমান পরিবারকে উদ্দেশ্য করে আইভী মন্তব্য করেন। এদিকে, মেয়রের বিরুদ্ধে জিউস পুকুর দখলের চেষ্টা, মাসদাইর কবরস্থান সংলগ্ন মাদ্রাসা ভেঙ্গে ফেলা, বাগে জান্নাত মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত, ডিআইটি মাসজিদ ভাঙ্গার চেষ্টার উঠে। জিমখানায় ৫৩৯ বছরের পুরাতন মোঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদের সম্পদ দখলের অভিযোগে মেয়রের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিল মসজিদ কমিটি। সর্বশেষ রহমত উল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিল। তবে প্রতিটি কর্মসূচী পালনের ক্ষেত্রে সাংসদ শামীম ওসমানকে উস্কানী দাতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন মেয়র আইভী। আর মেয়র আইভীকে সমালোচনা থেকে বাঁচাতে আওয়ামীলীগ বিরোধীরা সহযোগীতা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।