নারায়ণগঞ্জ মেইল : সোনারগাঁওয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুল ভূঁইয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করা মামলায় বারদী ইউনিয়নের মেম্বার দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু ডাকাতের ৫ সহযোগীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত ।
সোমবার ( ২৭ জুলাই ) দুপুরে ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসীনের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন । সোনারগাঁও থানা মামলা নং ১৩(৭)২০ । এর আগে জেলা গোয়েন্দা শাখা ( ডিবি ) পুলিশ ৫ আসামির ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন ।
ভার্চুয়াল কোর্টে বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী এড. আনিসুর রহমান দিপু । আর আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে মামলার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন চেয়ে শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ও এড. জসিম উদ্দিন । বাদী পক্ষের আইনজীবী এড. আনিসুর রহমান দিপু আসামিদের রিমান্ডের জন্য জোড়ালো ভাবে তথ্য প্রমাণ সহকারে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন । এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরাও রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে ৩ রিমান্ড মঞ্জুর করেন ।
রিমান্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন, সোনারগাঁও উপজেলাধীন বারদী ইউনিয়নের মান্দারপাড়া গ্ৰামের নুরা ডাকাত ওরফে নুরা পাগলার ছেলে ফাহিম ( ১৮), একই এলাকার শাফির ছেলে সোলেমান ( ২০), মছলন্দপুর গ্ৰামের আবু সিদ্দিকের ছেলে আমান উল্লাহ ( ৪২) , খলিলের ছেলে আলম ( ৪৫), চেঙ্গাকান্দি গ্ৰামের তাহের আলীর ছেলে ইকবাল ( ৩৫) ।
এছাড়াও গত ( ২২ জুলাই ) বুধবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন । অল্প ভোটের ব্যবধানে সে পরাজিত হয় । এলাকার নিরহ জনগণের পক্ষে কাজ করে সুনাম অর্জন করেছে । একটি কুচক্রী মহল তার জনপ্রিয়তা ঈষ্বায়িত হয়ে তার ক্ষতি করতে ষড়যন্তে লিপ্ত হয় । সম্প্রতি বারদী ইউনিয়নের শান্তি বাজারে স্থানীয় আঃ মতিনের জমি পাশ্ববর্তী হাবু ডাকাত জোর পূর্বক দখল করার চেষ্টা চালায় । এ নিয়ে গত ১২ জুলাই সোনারগাঁও থানায় একটি বিচার সালিশ বসে। সালিশে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনসহ ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আব্দুল মতিনের পক্ষে সব কাগজপত্র সঠিক পায় সালিশকারীরা। পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সরেজমিনে তদন্ত করে বিচারের রায় দেবেন বলে বৈঠকে জানানো হয়। পরে ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সরেজমিনে ওই জমি দেখতে যান। জমির মালিক দাবিদার আব্দুল মতিনের পক্ষে ছিলেন যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জমির স্থান ত্যাগ করার পরপরই দুপুরে আমিনুল ইসলামকে একা পেয়ে ডাকাত সর্দার হাবু ও তার ছেলে আশিক সহযোগী শাহজালাল ও ডালিমসহ ১০-১২ জনের একটি দল রামদা, ছোরা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল ও লোহার রড নিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে । এসময়ে আমিনুল ইসলামের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অবস্থার বেগতিক দেইখ্যা ডাকাত হাবুসহ লোকজনের হাতে দেখা ককটেল বিস্ফোরণ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে । প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় । বর্তমানে আমিনুল ইসলাম বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।
প্রসঙ্গত, বারদী ইউনিয়নের মেম্বার দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু ডাকাত । শান্তি বাজার এলাকায় হাবু ডাকাতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। তার দলে রয়েছে বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক ডাকাত । ডাকাত সর্দার হাবুর বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানাসহ বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, চুরি, মাদক, অস্ত্রসহ রয়েছে ১০টিরও অধীক মামলা । এছাড়াও একাধিকবার পুলিশ তাকে ডাকাতি ও গরু চুরির মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন। গত বছরের ২০ অক্টোবর ডাকাতি মামলায় বারদী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে গ্ৰেপ্তার করে সোনারগাঁও থানা পুলিশ । পরে সেই মামলায় আসামি বের হয়ে আসেন ।