নারায়ণগঞ্জ মেইল: নগরীর হকারদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘদিন দোকান নিয়ে ফুটপাতে বসতে না পারায় অবশেষে হকার্সরা বেশ কদিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালানোরপর সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিকী আন্দোলন করতে যাওয়ারপরই পুলিশের সাথে শুরু হয় বচসা।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) নারায়ণগঞ্জ শহরে হকাররা বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে তারা। এ নিয়ে পুলিশ ও হকারের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ হকারদের নিভৃত করার চেষ্টা করলে তাদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করারও ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী ও সাধারণ পথচারী আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় হকার ইস্যুতে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে নগরবাসী।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়ক, নবাব সলিমউল্লাহ সড়কের কয়েকটি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে হকাররা। হকারদের অভিযোগ, ফুটপাতে বসে বিনা বাধায় ব্যবসা করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। আটক করে হকার নেতা আসাদুল ইসলামকে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েকশ’ হকার রাস্তায় নেমে আসে। তারা বঙ্গবন্ধু সড়কের উভয় পাশের অন্তত দশটি স্থানে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষুব্দ হকাররা। এতে প্রায় ঘন্টাব্যাপী বঙ্গবন্ধু সড়কসহ আশেপাশের সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন আশেপাশের মার্কেটগুলোর দোকানিরা।
এদিকে অবরোধের খবর পেয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবাস চন্দ্র সাহা, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান, পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। পুলিশ চাষাঢ়ার সাধু পৌলের গীর্জার সামনে এসে পৌছালে তাদের উদ্দেশ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে হকাররা। পরে পুলিশের ধাওয়ায় স্থান ত্যাগ করেন তারা। পরে পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। পুলিশ যখন সাধু পৌলের গীর্জার সামনের আগুন নেভাচ্ছিল ঠিক তখন গ্রীনলেজ ব্যাংকের মোড়ে আবারও অগ্নিসংযোগ করে অবরোধ করে বিক্ষুব্দ হকাররা। এ সময় লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল হাতে অবস্থান নিতে দেখা যায় হকারদের। সেখানে গিয়েও আগুন নেভায় পুলিশ। সন্ধ্যার পরে শহরের নবাব সলিমউল্লাহ সড়কসহ আরও কয়েকটি স্থানে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে হকাররা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, সাঁজোয়া যান, জলকামান মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবাস চন্দ্র সাহা এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, হকাররা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। তাদের নিভৃত করতে গেলে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তবে কেউ গুরুতর আহত হননি। ঘটনাস্থল থেকে হকার নেতা আসাদুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে জেলার উর্ধ্বতন এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ করেছে। বিক্ষোভরত হকারদের উপরে কোনো ধরনের লাঠিচার্জ করা হয়নি।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসা হকারদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে নিয়মিত বঙ্গবন্ধু সড়কে টহল দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশ দেখলে দৌড়ে সড়কের কোনো গলির ভেতর আর সরে গেলেই ফুটপাতে দখল নিচ্ছে হকাররা। এভাবেই চলছিল হকার ও পুলিশের ইদুর-বেড়াল খেলা। তবে গত ২ মার্চ থেকে লাগাতার পুলিশের কঠোর অবস্থানের বিরুদ্ধে সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে হকাররা। গত ৭ মার্চ বিক্ষুব্দ হকাররা বঙ্গবন্ধু সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। হকাররা বলছেন, রোজগারের তাগিদে তারা ফুটপাতে বসে ক্ষুদ্র ব্যবসা করছেন। তাদের পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা অন্যায়। তবে পুলিশ বলছে, ‘হাইকোর্ট ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী ফুটপাত মানুষের চলাচলের জন্য। ফুটপাতে বসে কাউকে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কেউ করতে চাইলে তাতেও বাধা দেওয়া হবে না। তবে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে পুলিশ আইনানুগভাবে কঠোর ভূমিকায় থাকবে।’
শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত হকার মুক্ত রাখার দীর্ঘদিনের দাবি নগরবাসীর। এই দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মানুষের অবাধে চলাচল নিশ্চিতের জন্য ফুটপাত হকার মুক্ত রাখার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। এ নিয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সবুজ, পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি। এই ঘটনার জন্য নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানকে দায়ি করেন সিটি মেয়র আইভী। হকার ইস্যুতে পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিক মহল।