নারায়ণগঞ্জ মেইল: টানা তৃতীয়বারের মত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসলেও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতারা রয়েছেন বিপাকে। হাইব্রীড ও অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে দলের ত্যাগী এখন বিপাকে। ‘ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়িত করা হবে’ বিগত দিনে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন দিয়ে আসছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়িত করা হচ্ছে না।
সম্প্রতি আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিল। ঐ কমিটিগুলোতে দলের ত্যাগীদের বাদ নিয়ে হাইব্রীড নেতাদের পদ দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে নতুন করে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দলের ত্যাগী নেতারা। দলের ত্যাগী নেতারা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা হাইব্রীড নেতাদের পক্ষে কাজ মাঠে নেমেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে একজন সাংসদ বিভিন্ন সভ-াসমাবেশে পুরানো চেয়ারম্যানদের পুনরায় নির্বাচিত করতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন। অথচ এদের অধিকাংশই অযোগ্য ও সাধারণ ভোটারদের অপ্রিয় মানুষ হলেও ঐ সাংসদ অনেকটা জোর করেই সাতজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে চাইছেন। জাতীয় পার্টির ঐ সাংসদের বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতারাও হতাশ হয়েছেন।
সূত্রে প্রকাশ, টানা তের বছর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় দলের সুবিধাবাদি ও অনুপ্রবেশকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের। মূলত নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বহিস্কারের কোন প্রকার পদক্ষেপ শীর্ষ নেতারা গ্রহণ না করায় মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতাদের উপর ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে। বরং অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যস্থা না দিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে সহযোগি সংগঠনের নেতারা নিজেদের মধ্যে কোন্দল টিকিয়ে রাখাসহ প্রকাশ্যে না হলেও আড়ালে আবঢালে এক নেতা আরেক নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছে। বিভিন্ন আড্ডা খানায় কিংবা চা স্টলের সমানে নিজেরা সমানে অন্য নেতার বিরুদ্ধে বিষোদগার করলেও অনুপ্রবেশকারীদের বেলায় মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, দলের শীর্ষ নেতারা হাইব্রিড, কাউয়া, কিংবা অনুপ্রবেশকারীদের দল থেকে বের করার জন্য যত সোচ্চার হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে বিভিন্ন কায়দায় অনুপ্রবেশকালীরা স্থান করে নিচ্ছেন। এদের ব্যপারে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের যেন কোন মাথা ব্যথা নেই। আওয়ামীলীগে ত্যাগী নেতাদের ঠাঁই দেয়ার জন্য দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলেও দেখা যাচ্ছে কোথায়ও দলীয় প্রভাব আবার কোথায়ও টাকার জোরে ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করে নিচ্ছেন প্রভাবশালীরা। আর এ কারণে দলের প্রতি মমতাবোধ হারিয়ে ফেলতে বসেছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
নারাূয়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের একাধিক ত্যাগী নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাঠে ময়দানে কিংবা আন্দোলন সংগ্রামে আমরা থাকলেও ক্ষমতার স্বাধ নিচ্ছে সেই প্রভাবশালীরাই। উদাহরণ হিসাবে বলেন, রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়েছেন গোলাম দস্তগীর গাজী, আর সাধারণ সম্পাদক তারই আস্থাভাজন মোঃ শাহজাহান ভূইয়া। গোলাম দস্তগীর গাজীর একাধারে এমপি ও মন্ত্রী। অপরদিকে শাহজাহান ভূইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান। আড়াইহাজারে সভাপতি হয়েছেন নজরুল ইসলাম বাবু। যিনি একই এলাকার সংসদ সদস্যও। সম্প্রতি ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিএনপি-জামাতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল এমন ব্যক্তিদেরও পদ দেয়া হয়েছে। দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ নিয়ে জামাতের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত কাশীপুরের আশরাফুল আলমকে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিতর্কিত ও হাইব্রীড নেতারা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। আর তাদের সমর্থন দিচ্ছেন প্রভাবশালী নেতারা। এতে করে বার বার অবমূল্যায়িত করা হচ্ছে ত্যাগী নেতাদের।