বিক্রমপুর থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলায় রূপান্তরের ইতিবৃত্ত

বিশেষ প্রতিনিধি: আজকের মুন্সিগঞ্জ জেলা এক সময় বিক্রমপুরের নামে ভারতবর্ষে পরিচিত ছিল। এ বিক্রমপুর ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। রাজা বিক্রমাদিত্য অথবা বঙ্গরাজ চিত্রসেন বিক্রমপুর নগরীর স্থাপন করেন। এখন থেকে ১০০০ বছর আগে যে বঙ্গরাজ্য সভ্যতার সূচনা হয় সে বঙ্গরাজ্যের রাজধানী বিক্রমপুর।

প্রাচীনকালে বিক্রমপুর ছিল এক বিশাল এলাকার নাম। মুঘল যুগে বিক্রমপুরের আয়তন ছিল ৯০০ বর্গমাইল। বৃটিশ শাসনামলে বিক্রমপুরকে আরো ছোট করা হয়। তখন বিক্রমপুরের আয়তন দাড়ায় ৪৮৬ বর্গ মাইল। সমগ্র মুন্সীগঞ্জ জেলা, মাদারীপুর জেলা, শরীয়তপুর জেলা, ফরিদপুরের পূর্বাংশ,
নারায়ণগঞ্জ সদর, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ বিক্রমপুরের অন্তর্গত ছিল। অর্থাৎ ঢাকার শ্যামপুর থেকে বরিশালের উত্তর সীমান্ত পর্যন্ত ভূ-ভাগই প্রাচীন বিক্রমপুর নামে অবহিত হতো। উত্তর নিরক্ষরেখার ২৩ ডিগ্রী ১৪ ইঞ্চি থেকে ২৪ ডিগ্রী ২৮ ইঞ্চি কলার মধ্যে, পূর্ব দ্রাঘিমা ৮৯ ডিগ্রী ৪৫ ইঞ্চি ও ৯০ ডিগ্রী ৫৬ ইঞ্চি কলার মধ্যে বিক্রমপুর অবস্থিত।

১৮৪৫ সালে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় রূপান্তরীত হয়। তখন মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর, রাজাবাড়ী ও মুলফতগঞ্জ এ চারটি থানা নিয়ে ১৮৪৫ সালের মে মাসে মুন্সীগঞ্জকে বৃটিশ সরকার মহকুমায় উন্নীত করে।
১৮৬৯ সালে পদ্মার গতি পরিবর্তনে মুন্সীগঞ্জ ছোট হয়ে যায়। অর্থাৎ ১৮৬৯ সালের আগে পদ্মা মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের ১০০ মাইল পশ্চিম দিয়ে প্রবাহিত হতো। পদ্মা মুন্সীগঞ্জের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় রাজাবাড়ী ও মুলফতগঞ্জ থানা মুন্সীগঞ্জ মহকুমা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাখেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত হয়। রাজাবাড়ী ও মলফতগঞ্জ থানায় ৪৫৮টি গ্রাম ছিল। পদ্মাই মুন্সীগঞ্জকে ছোট করে দেয়।

১৮৮২ সালে মুন্সীগঞ্জ মহকুমা থেকে নারায়ণগঞ্জকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ মুন্সীগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত ছিল। ১৯১৪-১৫ সালে বৃটিশ সরকার টঙ্গীবাড়ী, সিরাজদিখান ও লৌহজং থানা বৃদ্ধি করে। ফলে মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর, লৌহজং, সিরাজদিখান ও টঙ্গীবাড়ী মিলে পাঁচটি থানা করা হয়। ১৯৪৮ সালে গজারিয়া থানাকে কুমিল্লা থেকে কেটে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় সংযুক্তি করা হয়। ফলে মুন্সীগঞ্জ মহকুমায় ছয়টি থানা নিয়ে পূণর্বিন্যাস হলো। অতঃপর এরশাদ সরকার ১৯৮৪ সালের ১মার্চ মুন্সীগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করেন। এই হলো মুন্সীগঞ্জের সরকারী দলীল পত্র। এর আগ পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ ছিল ঢাকা জেলার একটি মহকুমা।
বিক্রমপুর থেকে কিভাবে মুন্সীগঞ্জ হলো এ বিষয়টি নিয়ে অনেকের কৌতুহল রয়েছে। ১৮৪৫ সালে মুন্সীগঞ্জ মহকুমা হলেও মুঘল আমলে “মুন্সীগঞ্জ” নামের সূচনা ঘটে হয়তো। সুলতানী আমলের ১৪৬৯ সালে বিক্রমপুর সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের আয়ত্তে চলে আসে। ১৬৬০ সালে আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মুন্সীগঞ্জ “ইদ্রাকপুর কেল্লা” নির্মাণ করেন মীর জুমলা।

মুন্সীগঞ্জ শহরের উত্তর পাশে ইছামতি ও ধলেশ্বরী নদীর নিকটে “ইদ্রকাপুর নামে একটি গ্রাম রয়েছে। এ গ্রামটি কেন্দ্র করেই “গঞ্জ” বা শহর গড়ে ওঠে। বিক্রমপুরের রাজধানী শহর রামপালের কাজীকস্বা গ্রামে এক বিখ্যাত মুসলিম জমিদার বা ফৌজদার বাস করতেন।তার নাম মুন্সী হায়দার হোসেন।আবার কারো কারো মতে মুন্সী এনায়েত আলী জমিদারী করতেন। ইদ্রাকপুর গ্রামটি মুন্সী হায়দার হোসেনের অথবা এনায়েত আলীর নামে হয়েছে। তাদের যে কারো নামের প্রথমাংশ “মুন্সী” দিয়ে শহরের নাম করে হয় মুন্সীগঞ্জ। এশিয়াটিক ছোছাইটির বাংলাপিডিয়ায় মুন্সীগঞ্জ নামের উৎপত্তির কথা এভাবে বলা হয়েছে
During the Mughal rule the present munshiganj town incloding the outlaying areas was known as Idrakpur which was named after then the mughal Faujder Idrak a village on the Out skirts of Munshiganj twon is still Known as Idrakpur. During the British rule Idrakpur was renamed as munghiganj after the name of munshi Enaet Ali, Local zaminder and the in habitant of the village Kazikasba in Rampal.

আর ১৮৪৫ সালের মে মাসে মুন্সীগঞ্জ মহকুমা হলে বৃটিশ সরকারের সকল রাজস্ব বিভাগের নকশা, দলিল, পর্চা, মৌজা- খতিয়ান ও সেরেস্তায় মুন্সীগঞ্জ নাম স্বীকৃত ও লিপিবদ্ধ করা হয়। অদ্যবধি বিক্রমপুরের এ অংশ মুন্সীগঞ্জ নামেই খ্যাত। মুন্সীগঞ্জ জেলার আয়তন ৩৮১ বর্গমাইল। মুন্সীগঞ্জের উত্তরে ধলেশ্বরী নদী, নারায়নগঞ্জ, বুড়িগঙ্গা নদী ও ঢাকা জেলা, পশ্চিমে ঢাকার দোহার নবাবগঞ্জ ও পদ্মা নদী, দক্ষিণে পদ্মা নদী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা, পূর্বে চাঁদপুর ও কুমিল্লা জেলা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ