নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে একটি প্রচলিত বাক্য হচ্ছে ‘ত্যাগের কোন মূল্যায়ন নেই’। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে জীবন দিয়ে দিলেও কমিটিতে পদ পদবী মেলে না কিন্তু সারা বছর ঘরে বসে থেকেও নাকি গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী দখলে নেওয়া যায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে। আর এ গল্পের বাস্তব উদাহরন চোখের সামনে দেখিয়ে দেয় তৃণমূল। গত এক যুগেও নারায়ণগঞ্জের রাজপথে যাকে একদিনের জন্যেও দেখা মিলেনি, সেই রিয়াদ মো: চৌধুরীকে সব সময়ই কমিটি গঠনের বেলায় বাড়তি মূল্যায়ন করা হয়। যা তৃণমূলের কাছে এখনো একটি বড় রহস্য হয়ে আছে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতেও রয়েছে রিয়াদ মো: চৌধুরীর নাম অথচ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বহু পোড় খাওয়া নেতাকে রাখা হয়নি সে কমিটিতে। আর তাই ক্ষোভের সঙ্গে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন ‘রিয়াদ চৌধুরী চাঁন কপাইল্যা, তাইতো পদ পদবী তার ঘরে চলে আসে।’
সূত্র মতে, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আর ক্ষমতার স্বাদ পায়নি বিএনপি। প্রয় ১৫ বছর ক্ষমতাহীন থাকায় দলটির নেতাকর্মীদের অবস্থা একেবারেই নাজুক। তারউপর সরকারী দলের হামলা মামলায় দিশেহারা দলটির শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের অবস্থাতো বর্ননাতীত। গত এক যুগের রাজনীতিতে বেশীরভাগ সময়ই ঘরবাড়ি পরিবার পরিজন ছেড়ে পালিয়ে যাযাবর জীবন যাপন করতে হয়েছে তাদের। সেই সাথে মামলা হামলার শিকার হয়ে জেল জুলুম আর কারাবরনের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ। আর শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জে অজস্র নেতাকর্মী সামাজিক অর্থনৈতিক কিংবা পারিবারিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছেন।
সরকারী দলের সীমাহীন অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেও রাজপথে দলের অবস্থান ঠিকই ধরে রেখেছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নিয়মিতই কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। কখনো পুলিশের লাঠিচার্জ কখনোবা গ্রেফতার, তবুও আন্দোলন থেকে বিরত রাখা যায়নি দল পাগল এসব কর্মী সমর্থকদের। দলের টানে আর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শকে বুকে লালন করে জাতীয়তাবাদী চেতনা বাস্তবায়নের সংগ্রামে তাই অকুতোভয় যোদ্ধার মতো লড়ে গেছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রায় প্রতিটি নেতাকর্মী।
কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও কয়েকজন বিএনপি নেতা ছিলেন ব্যতিক্রম। তারা বিএনপির পদ পদবীধারী নেতা হলেও রাজপথে তাদের কখনো খুঁজে পাওয়া যায়না। তেমনি একজন হলেন সাবেক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য রিয়াদ মো: চৌধুরী, যাকে গত ১৫ বছরে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে খুঁজে পাননি নেতাকর্মীরা। আন্দোলন সংগ্রামতো দুরের কথা, দলের প্রতিষ্ঠাতা কিংবা চেয়ারপার্সনের জন্যে ঘরের চারদেয়ালের ভিতরে একটি দোয়া মাহফিলেরও আয়োজন করেননি রিয়াদ চৌধুরী। বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরা যখন পুলিশের ভয়ে পলাতক, তখনও তিনি দিব্য গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ফতুল্লায় পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নেই তেমন কোনো রাজনৈতিক মামলা, তাই আদালতের বারান্দায়ও দেখা মিলেনা এই সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবীদের। বরং তার বিরুদ্ধে সরকারী দলের সাথে আতাঁত করে ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এদিকে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে দেখা না মিললেও কমিটি গঠনের বেলায় ঠিকই রিয়াদ চৌধুরীর নামটা উঠে আসে প্রথম সারিতে। ঘরে বসে থেকে আর সরকারী দলের নেতাকর্মীদের সাথে ব্যবসা বানিজ্য চালিয়েও বিএনপির কমিটিতে পদ পেয়ে যান রিয়াদ চৌধুরী। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতেও জায়গা করে নেন রিয়াদ, যেখানে ৪১ সদস্যের কমিটিতে ঠাঁই মিলেনি অনেক জাঁদরেল নেতাদেরও। আর তাই যারা নেপথ্যে থেকে রিয়াদ মো: চৌধুরীর মতো নিস্ক্রিয় নেতাদের দিয়ে বিএনপির পদ বানিজ্য করছেন, তাদের প্রতি ধিক্কার জানিয়েছে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা।