নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। পৌরসভার চেয়ারম্যান ও টানা দ্বিতীয়বারের মত সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে উন্নয়ণ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে জিম খানার লেক নির্মাণ, বাবুরাইল খাল খনন, বন্দরের রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ণ, কদম রসূল সেতু নির্মাণের উদ্যোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন তিনি। তবে অবকাঠামোর উন্নয়ণ হলেও নাগরিক সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। ফুটপাতে হকার, মশার যন্ত্রনা, কুকুরের আতংক ও শহরে ময়লার স্তুপের কারণে কাঙ্খিত সুবিধা থেকে নগরবাসী বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে রয়েছে, শহরের ফুটপাত হকার মুক্ত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। তবে সম্প্রতি জেলা পুলিশের তৎপরতায় শহরের ফুটপাত হকার মুক্ত হয়েছে। তবে এব্যাপারে জেলা পুলিশকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কোন প্রকার সহযোগীতা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। বছর ডেঙ্গুর প্রভাবে গোটা দেশ যখন নড়েচড়ে বসে, তখন মশক নিধনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন তোড়জোড় চালালেও নতুন বছরের শুরু থেকেই মশক নিধনে ঝিমিয়ে পড়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নাসিকের প্রতিটি এলাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে মশার উপদ্রব। দিনের বেলায় মশার উপদ্রব কিছুটা কম হলেও সন্ধ্যের পর থেকেই মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠে নগরবাসী। সচেতন মহলের অভিযোগ, মশক নিধনে নাসিকের নিয়ম মাফিক কর্মকান্ড পরিচালিত না থাকায় দিনকে দিন মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। কিছু কিছু এলাকায় দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রব বেশ চোখে পড়ার মতো।
সিটি এলাকা হওয়া সত্বেও নগরীর ব্যস্ত সড়কগুলোর পাশেই পরে থাকে হোটেল ও গৃহস্থালী পঁচা বাশি খাবার এবং ময়লা আবর্জনা। যেখান থেকে মৃত পশু পাখির উচ্ছিষ্ট টেনে হিচড়ে সড়কের উপড় ফেলে খাচ্ছে একদল কুকুর। আবর্জনার স্তূপ থেকে নির্গত হচ্ছে পঁচা দুর্গন্ধ। পাশেই নাকে মুখে হাত চেপে যাতায়ত করছে সাধারণ মানুষ। চিরচেনা এই চিত্রটি দেখা যাবে নগরীর ব্যস্ততম সড়ক নবাব সিরাজ উদ দৌলা, নবাব সলিমুল্লাহ এবং বঙ্গবন্ধু সড়কের বেশ কিছু স্থানেই। সড়কের আশপাশে কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থায়ী কোন ডাষ্টবিন না থাকায় যত্র তত্র আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে স্থানীয়রা। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রাপথে সাধারণ যাত্রীদেরকে। গৃহস্থালী ও ঘরোয়া হোটেল রেস্টুরেন্ট ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়গনিষ্টিক সেন্টারে রোগীদের কাজে ব্যবহৃত ইনজেকশন, রক্তমাখা চাদর ইত্যাদি বস্তু পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে পূর্বে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পরেও স্থায়ী ডাষ্টবিন নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে নগরীর ব্যস্ততম সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনার জন্য স্থায়ী ডাষ্টবিনের বিষয়টি এখনো অবদি রয়ে গেছে পরিকল্পনাধীন।
অপরদিকে হাইকোর্ট থেকে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কুকুর নিধনে নাসিকের অনীহার কারণে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। নাসিকের প্রতিটি পাড়া মহল্লাতেই মূর্তমান আতংক হয়ে দাড়িয়েছে কুকুর আতংক। দলবেধে ছুটে চলা এসব প্রাণীগুলো দিনকে দিন এতোটাই ভয়ানক হয়ে উঠছে যে, সড়কপথে চলতে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন সচেতন মহল। আর বিষয়টি নিয়ে নাসিক কর্মকর্তারা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে সামনে দাড় করিয়ে দেয়ায় সমস্যাটির সঠিক সমাধান খোঁজে পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ফলে প্রতিনিয়তই কুকুর আতংক নিয়ে পথ চলদে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। নগরীর উন্নয়নে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দর-সিদ্ধিরগঞ্জের বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। উদ্দেশ্য ছিল মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ও একটি সৌন্দর্য্যবান্ধব নগরী উপহার দেয়া। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, নাসিক গঠনের পর প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারেনি নাসিকবাসী। বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুদ্ধ সচেতন মহল।