বার নির্বাচন: দুই সাবেক সভাপতির কাঁধে গুরু দায়িত্ব

নারায়ণগঞ্জ মেইল: আগামী ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুট প্যানেলই তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কোন রকম দূর্ঘটনা না ঘটলে দুই প্যানেলের ১৭ জন করে মোট ৩৪ জন প্রার্থী আগামী সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করবেন তাদের নির্বাচনী গণসংযোগ। নির্বাচনে ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও তাদের নেপথ্যে রয়েছেন দুই সাবেক সভাপতি যাদের কাঁধে রয়েছে এই দুই প্যানেলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরু দায়িত্ব। আওয়ামী লীগ সমর্থীত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মোহসীন-মাহবুব প্যানেলের নেপথ্য কারিগর হিসেবে রয়েছেন সাবেক সফল সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল এবং বিএনপি সমর্থীত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট এর হুমায়ুন-কামাল প্যানেলের নেপথ্য নায়ক হলেন নারায়ণগঞ্জ বারের সাবেক সফল সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। এ দুজন নি র্বাচনে অংশ না নিলেও পর্দার অন্তরালে থেকে প্যানেলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করবেন।

সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি শুধু নয়, সমগ্র বাংলাদেশের আইনজীবী সমিতির ইতিহাসে বিরল একটি ঘটনার জন্ম দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও দল থেকে তাকে সভাপতি পদে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো এড. আবদুল বারী ভূইয়াকে আর আওয়ামীলীগ থেকে সভাপতি পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন শক্তিশালী প্রার্থী এড. আনিসুর রহমান দিপু। এ দুই দলীয় সভাপতি প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর থেকে আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি যেখানেই গেছেন সাফল্য তার পিছন পিছন গেছে, যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলেছে। নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে তৈরী হয়েছে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। এক সময় যে এড. তৈমূর আলম খন্দকার সভাপতি পদে তাকে মনোনয়ন দেননি, সেই তৈমূর আলম খন্দকারকেই ক্লিন বোল্ড আউট করে দিয়েছেন কোর্ট রাজনীতি থেকে। গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্বাচনে এড. তৈমূর আলম খন্দারের ৫ প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে ফোরামের দায়িত্ব পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নিয়েছেন এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের অনুসারীরা। আর তাই এবারে বিএনপি প্যানেলের নেপথ্য নায়ক হিসেবে তাকেই থাকতে হবে ফ্রন্টলাইনে।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী নেতা হলেন এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল। নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে তার নেয়া যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন। বিশেষ করে শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পুরানো বার ভবন ভেঙ্গে ফেলে নতুন ডিজিটাল বার ভবন তৈরীর উদ্যোগ জেলা বারের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রতিপক্ষ বিএনপির আইনজীবীদের সাথে নিজ দলের একটি পক্ষেরও ঘোর বিরোধীতার মুখে যে অবিচল ধৈর্য আর সাহসীকতার সাথে নতুন ভবন তৈরীর কাজ শুরু করেছিলেন জুয়েল তা দলমত নির্বিশেষে সকল আইনজীবীর কাছে ছিলো প্রশংসনীয়।

এক সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির কোন ফান্ড ছিলো না, ছিলো না মৃত্যুর পরে সে আইনজীবীর পরিবারের জন্য কোন বরাদ্দ। ঠিক মতো বার কাউন্সিলের টাকা পরিশোধ না করায় এড. সুলতানউদ্দিনের মতো আইনজীবীর পরিবারও বার কাউন্সিলের বরাদ্দকৃত ৫ লক্ষ টাকা থেকে হয়েছিলেন বঞ্চিত। এসব বিষয় মনিটরিং করার কথা এবং সঠিক ডাটাবেজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি কখনো। নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীদের বসার জন্য ছিলো জরাজীর্ণ একটি তিনতলা ভবন। সে ভবনে ঠাঁই হতো না সবার, ফলে পাশে টিনশেডের মধ্যে গাদাগাদি করে বসতেন আইনজীবীরা।

তবে গত চার বছরে পাল্টে যেতে শুরু করেছে সেসব চিত্র। এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল জেলা বারের তৎকালীণ সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীণ আইনজীবীদের জীবন মান উন্নয়নের কাজে হাত দেন। পাশে পান তৎকালীণ যুগ্ম সম্পাদক এড. মোহসীন মিয়াকে। কালের পরিক্রমায় ২০১৭-১৮ সালের নির্বাচনে পাশ করে এ জুটিই হয়ে যান বারের আইনজীবীদের অভিবাবক। সে থেকে শুরু করে গত কয়েক বছরে আইনজীবী সমিতির কার্যক্রমে আমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেরেন তারা। তাদের সবচেয়ে বড় এচিভম্যান্ট হলো আইনজীবীদের জন্য ‘বেনাভোলেন্ট’ ফান্ড গঠন করা যাতে বর্তমানে প্রায় ১০ কেটি টাকার উপরে জমা হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলার আইনজীবীদের জন্য একটি ডিজিটাল বার ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা ছিলো এ জুটির একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যার সুফল এখন বারের সকল আইনজীবী ভোগ করছে।

নারায়ণগঞ্জ বারের উন্নয়নে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের পাশাপাশি আইনজীবীদের সাথেও একটি অন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল। দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছেই সমান গ্রহনযোগ্য জুয়েলের রয়েছে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। আর সে জনপ্রিয়তা দিয়ে তিনি নিজের জন্যে যেমন ভোট আনতে পারেন তেমনি আওয়ামী প্যানেলের জন্যেও পারেন বিজয় ছিনিয়ে আনতে। যার প্রতিফলন দেখা গেছে গত বছরের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে। তাই এবারেও সেই গুরু দায়িত্ব তার উপরই ন্যাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েলকে এই প্যানেলের রূপকার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ