নারায়ণগঞ্জ মেইল: শহরের ফুটপাত ফের দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে হকাররা। হকারদের কাছ থেকে সুবিধা আদায়কারী চাঁদাবাজদের ইন্দনে ফুটপাতে বসতে হকাররা আন্দোলনও করছে। ফুটপাতে কোন হকার বসতে না পারে সেজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে সদর থানা পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের কঠোর নির্দেশনায় ফুটপাত হকার মুক্ত রাখতে নিয়তিম পুলিশী টহল চলছে। তাই ফুটপাতে বসতে না পেরে শহরে আন্দোলনে নেমেছে হকাররা। যার ফলে হকার ইস্যুতে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে নগরবাসী। ফুটপাতে হকার বসাকে কেন্দ্র করেই ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী শহরে সংর্ঘেষর ঘটনা ঘটেছিল।
অভিযোগে রয়েছে, হকারদের উস্কানী দিচ্ছে কয়েকজন ব্যক্তি। মূলত শহরে হকার ইস্যুর নেপথ্যে রয়েছে কোটি টাকার চাঁদাবাজি। আর এই চাঁদার টাকার ভাগ যায় হকার নেতা, রাজনৈতিক নেতা, অসাধু পুলিশ, প্রভাবশালী ও কথিত সাংবাদিকদের পকেটে। ফলে কখনই স্থায়ীভাবে ফুটপাথ হকারমুক্ত সম্ভব হচ্ছে না। বছরের পর বছর ধরে উচ্ছেদের নামে চলে ইঁদুর-বিড়াল খেলা। তবে বর্তমানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান থাকায় হকাররা সুবিধাভোগীদের উস্কানীতে শহরে বিক্ষোভ করে সড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। চাঁদা ভোগকারীদের সহযোগিতা থাকায় হকাররা কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ফুটপাথ দখল করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। যদিও জরুরি অবস্থার সময় নাসিক ফুটপাথ হকারমুক্ত রাখতে চাষাঢ়ায় হকার্স মার্কেট করে দিয়ে পৌনে ৭শ’ হকারকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। কিন্তু আবার ফুটপাত হকারে ভরে যায়। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়তে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হকার ইস্যুর মূল কারণ মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি। শহরের চাষাঢ়া গোল চত্বরের চারপাশ এবং শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া থেকে মন্ডলপাড়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে প্রধানত সবচেয়ে বেশি হকার বসে। এছাড়া শহীদ মিনার, শায়েস্তা খান সড়ক, চেম্বার রোড, ২নং রেল থেকে ১ নং গেইট, ১ নং গেইট থেকে কালিরবাজার, কালিবাজার থেকে ব্যাংকের মোড়, লুৎফা টাওয়ার গলি, প্রেসিডেন্ট রোড গলিতে ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে আসছে হকার। এই সব স্থানে প্রায় দেড় হাজার দোকান। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে ৫ শতাধিক। যারা কখনো উচ্ছেদের কবলে পড়ে না। বেশিরভাগ সময় উচ্ছেদের শিকার হয় বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইপাশের ফুটপাতের দোকানীরা। এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ আবার অস্থায়ী। কেউ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ শুধু বিকালে কেউ বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বসে। কিন্তু চাঁদা দিতে হয় সবাইকে সমানতালে।
ফুটপাতের এই সব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়। তবে দোকান বুঝে বা ব্যবসার ধরন বুঝে দৈনিক সর্বনিম্ন ৯০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। বেশ কয়েকজন হকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাঁদার টাকার পরিমাণে ভিন্নতা রয়েছে। যারা শরবত বিক্রি করেন তাদের দিতে হয় ৫০ থেকে ২০০ টাকা। যারা ডিম বিক্রি করেন তাদের দিতে হয় ৩০-৫০ টাকা। চটপটি দোকানিকে ১০০ টাকা, যারা বড় করে জামা-কাপড়, জুতা, ইলেক্ট্রনিক্স দোকান, মোবাইল এক্সেসরিজ, ফলের দোকান তাদের দিতে হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে হকারদের নেতৃত্বে থাকা রহিম মুন্সি, আনোয়ার মুন্সি, দুলাল মুন্সি, আসাদুল ইসলাম ও গোবিন্দ বেশ কয়েকজন। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ফুটপাতের এরিয়া অনুযায়ী চাঁদা তুলে থাকেন। আর সেই চাঁদার টাকা সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। আর সেই সুবিধাভোগীরাই শহরের ফুটপাতে হকার বসানোর পায়তারা করছে।