নারায়ণগঞ্জ মেইল: নতুন বছরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে ক্ষমতাসীন দলের জনপ্রতিনিধিরা কাজ করবে এমন প্রত্যাশা ছিল নগরবাসীর। কিন্তু ২০২১ সালটা শুরুতেই নারায়ণগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিভাজন হতাশ করেছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে। মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা ও পরবর্তিতে আড়াইহাজার ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা নিয়ে নতুন করে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, আড়াইহাজার আওয়ামীলীগের কমিটি একক ভাবে নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখেছেন স্থানীয় সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু আর ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের কমিটিতে বিএনপি, ভূমিদস্যুদের স্থান দিয়ে ত্যাগী নেতাদের হতাশ করেছেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম. সাউফুল্লাহ বাদল। মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরোধে বিপাকে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। মুখে মুখে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার আশ^াস দিলেও তা বাস্তবে রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা। মন্ত্রী, সাংসদগণ, মেয়র পৃথকভাবে দাবী করে আসছেন তারা ব্যাপক উন্নয়ণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে নানা সমস্যায় জর্জরিত নারায়ণগঞ্জবাসী। নতুন বছরের জরাজির্ণতা আর রাজনৈতিক মান-অভিমান তথা পরস্পর বিরোধী অবস্থান ভুলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে দলমত র্নিবিশেষে সকল জনপ্রতিনিধিরা যার যার অবস্থানে থেকে নতুন প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করবেন এটাই প্রত্যাশা ছিল নারায়ণগঞ্জবাসীর।
কিন্তু বছরের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর দায়ের করা মামলার পর ইতিমধ্যে নেতাদের বিরোধ সংঘর্ষে রূপ নিতে যাচ্ছে। আর মামলার জবাব মামলা দিয়েই দিবেন বলে মন্তব্য করেছেন খোকন সাহা। এছাড়াও সাংসদ শামীম ওসমান, মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী পৃথক বলয়ে অবস্থান করে দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের কারণে নারায়ণগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরাও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে নারায়ণগঞ্জ সমিতি নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে ওসমান পরিবার বিরোধীরা একজোট হয়ে মাঠে নেমেছেন।
যদিও নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের ভূমিকা অতুলনীয়। এরপরও জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরোধে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে। জানাগেছে, একসময়ের প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিল। সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ইংরেজ বেনিয়ারা শুধুমাত্র ব্যবসা করে অর্থ উর্পাজনের লক্ষ্যে সাতসমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে আস্তানা গেড়ে ছিল। ইংরেজ বেনিয়ারা নারায়ণগঞ্জ থেকে ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা দেশে নিয়ে যেতো। সেই ঐতিহ্যমন্ডিত নারায়ণগঞ্জ এখন হতশ্রী শহরে পরিনত হয়েছে। বিগত ৪৪ বছরে নারায়ণগঞ্জ হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। স্বাধীনতার পর থেকে একে একে মেইল,ট্রেন, স্টিমার র্সাভিস, নৌ-বন্দর, পাটশিল্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা-বানিজ্য অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছে। এখন একমাত্র নীটশিল্প ছাড়া নারায়ণগঞ্জের গর্ব করার মতো কিছু নেই বললেই চলে। অথচ বাংলাদেশের সকল আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা হয়েছে এই নারায়ণগঞ্জ থেকে। কিন্তু সেই নারায়ণগঞ্জে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরোধ এখন চরমে।