এক টিপুতেই ছারখার তৈমূর বলয়, নেপথ্যে কালাম!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ার রাজনীতিতে মহা বিপর্যয় ঘটে গেছে এড. তৈমূর আলম খন্দকারের। এক সময়ে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির আইনজীবীদের একমাত্র অভিভাবক এড. তৈমূরের আজ কোন অবস্থানই অবশিষ্ট নেই। সর্বশেষ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্বাচনে তৈমূরের ৫ প্রার্থীর সবগুলোই বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের আদালতপাড়ার রাজনীতিতে এড. তৈমূর আলম খন্দকারের রীতিমতো কবর রচনা হয়ে গেলো বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সেইসাথে তৈমূরের এই বিপর্যয়ের জন্যে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে চিরকালীন বিতর্কিত এক চরিত্র এড. আবু আল ইউসুখ খান টিপুকে দায়ী করছেন তারা। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাবেক এমপি এড. আবুল কালামের নির্দেশনায় টিপু তৈমূর বলয়ে ভাঙ্গণের সৃষ্টি করে তৈমূকে খাদের কিনারায় এনে দাড় করিয়েছেন বলে অভিমত তাদের।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিািট গঠন কিংবা জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন, সব কিছুর একক নিয়ন্ত্রণ ছিলো এড. তৈমূর আলম খন্দকারের হাতে। তিনি মুখে যেটা বলতেন সেটাই আইনে পরিনত হতো। সিনিয়র জুনিয়র সকল বিএনপি মনা আইনজীবীই ছিলেন তার অন্ধ অনুসারী। সকলে তাকে শ্রদ্ধা করতেন এবং নির্দেশনা মেনে চলতেন।

নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় তৈমূরের এই একক নিয়ন্ত্রণ সহ্য হয়না বিএনপির আরেক সিনিয়র আইনজীবী নেতা এড. আবুল কালামের। আদালতপাড়ার রাজনীতিতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিতর্কিত নেতা এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে কৌশলে ঢুকিয়ে দেন তৈমূর শিবিরে। টিপু নিতান্তই ভালো মানুষের মুখোশ পরে তৈমূর শিবিরে নিজের অবস্থান তৈরীর পাশাপাশি যে সকল সিনিয়র আইনজীবীর সাথে তৈমূরের সবচেয়ে আন্তরিক সম্পর্ক ছিলো তাদের সাথে তৈমূরের দুরত্ব সৃষ্টিতে নানা ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। তৈমূর অন্ত:প্রাণ যে সকল বিএনপির আইনজীবী ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে তৈমূরের কানে বিষ ঢেলে দীর্ঘদিনের মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর কাজটি খুবই সন্তর্পণে করে যান টিপু। সেই সাথে তৈমূরের অনুগত সিনিয়র আইনজীবীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে তৈমূর অনুগত কিছু বেয়াদব আইনজীবীকে নিয়ে একটি বিদ্রোহী গ্রুপ সৃষ্টি করেন এই টিপু। এই বেয়াদবদের দিয়ে তৈমূরের খুব কাছের সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে নানা প্রকার অসৌজন্যমূলক আচরণ করাতে থাকেন টিপু যাতে করে তারা তৈমূর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তৈমূর বলয়ে থেকেই তৈমূরের কাছের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে করা বিদ্রোহী গ্রুপকে প্রতিষ্ঠিত করেন টিপু আর এভাবেই তৈমূর শিবিরে গ্রুপিং সৃষ্টি করে ভেঙ্গে খান খান করে দেন। এই বেয়াদব বিদ্রোহী গ্রুপের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে নিরব হয়ে পরেন অনেক সিনিয়র আইনজীবী নেতা। মনে প্রাণে তারা তৈমূরকে ভালোবাসলেও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যার ফলশ্রুতিতে তৈমূর বলয়ের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন টিপু যার আইনজীবী সনদের বয়স মাত্র তিন বছর। আর এভাবেই এড. আবুল কালামের প্রেসক্রিপশনে তৈমূর বলয় পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেন বিতর্কিত নেতা এড. টিপু।

সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র চীরকালীণ বিতর্কিত এক চরিত্রের নাম আবু আল ইফসুফ খান টিপু। তার ব্যবহার আর আচরণে নিজ দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেও তিনি একাধীকবার লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। অনেকটা পরজীবী উদ্ভিদের মতো কোন না কোন নেতার ঘাড়ে সওয়ার হয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় থাকেন টিপু যার কারনে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে ‘পাকনা টিপু’ নামেই বেশী পরিচিত তিনি। নানা ঘাটের জল খেয়ে গত কয়েকবছর যাবত নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. আবুল কালামের ছায়াতলে আশ্রিত আছেন এই বিতর্কিত নেতা।

গত কয়েক বছরে এই টিপু এড. আবুল কালামের পক্ষ হয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র অনেক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের শায়েস্তা করতে এড. আবুল কালাম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন এই পাকনা টিপুকে। গত সিটি নির্বাচনের পর থেকেই এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান। আর এর ফলে এড. সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে টিপুকে দিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছেন এড. আবুল কালাম। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক বিতর্কিত পোষ্ট দিয়ে এড. সাখাওয়াতের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছেন টিপু। এমনকি মহানগর যুবদলের তৎকালীণ আহবায়ক সিটি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এ আসনে নির্বাচনের ঘোষনা দেওয়ার পরে খোরশেদের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের বাজে প্রচারনা চালিয়েছিলেন এই টিপু।

সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি’র টিকিটে তিনবার এমপি হন এড. আবুল কালাম। এরই ধারাবাহিকতায় গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। এই মনোনয়ন দৌড়ে আবুল কালামের প্রতিদ্বন্দি হিসেবে ছিলেন বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের তিনবারের সফল কাউন্সিলর মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এ আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় প্রথমে এড. আবুল কালামের সাথে এড. সাখাওয়াত হোসেনের নাম চলে আসার পর থেকেই ঘুম হারাম হয়ে যায় কালামের। সাখাওয়াতকে ঠেকানোর মিশনে নেমে পরেন এই কৌশলী রাজনীতিবীদ। সাখাওয়াতকে ঘায়েল করতে আবুল কালাম এক সময়ে সাখাওয়াতের আশ্রয় প্রশ্রয়ে লালিত পালিত মহানগর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে নিজের কব্জায় নিয়ে আসেন। আর টিপুকে ব্যবহার করে শুরু করেন সাখাওয়াতকে অপমান-অপদস্ত করার মাধ্যম চরিত্র হননের প্রকৃয়া। যার প্রথম ধাপে সাখাওয়াতকে ওসমান পরিবারের সাথে জড়িয়ে দুই কোটি টাকা গ্রহনের নাটক সাজানো হয়। যদিও পরে টিপু তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। এরপর থেকে টিপু কালামকে খুশি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে একেক দিন একেক আঙ্গিকে চালিয়ে গিয়েছেন সাখাওয়াত বধের অপপ্রচার। যাতে সাখাওয়াতের চেয়ে কালাম টিপুর বিকৃত মানষিকতার দুর্বল দিকটিই ফুটে উঠছে বলে মনে সবাই।

এরপর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশার ঘোষনা দেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডের তিনবারের সফল কাউন্সিলর মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। খোরশেদের এই ঘোষনা আসে আবুল কালামের নিজস্ব দূর্গ বন্দর এলাকা থেকে। নির্বাচনের ঘোষনার পাশাপাশি খোরশেদ আবুল কালামকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছিলেন ‘আমি কিন্তু সাখাওয়াত না যে ফু দিবেন রাস্তা আটকাবেন আর আমি ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবো’। খোরশেদের এই বক্তব্যের পর আবুল কালাম চোখে সরষে ফুল দেখতে শুরু করেছিলেন এবং অনুগত পাকনা টিপুকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন খোরশেদের চরিত্র হননের নোংরা অপকর্মে। টিপুও অনুগত কর্মচারীর মতো শুরু করে দিয়েছিলেন ফেসবুকের মাধ্যমে আকারে ইঙ্গিতে খোরশেদের চরিত্র হনন। নানা ছলে বলে চালিয়ে গিয়েছেন খোরশেদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার।

টিপুর এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে নিজস্ব কর্মী, সমর্থক ও শুভানাধ্যায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন খোরশেদ। খোরশেদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছিলেন, “বিশেষ অনুরোধ: আমার সহযোদ্ধা ও যারা আমাকে ভালবাসেন,পছন্দ করেন তারা দয়া করে কোন ব্যাক্তির নামে সরাসরি কিংবা আকারে ইংগিতে বাজে কমেন্টস ও পোস্ট করবেন না। কোন বাজে কমেন্টসের উত্তর দিবেন না। দয়া করে অপরের বিরোধীতা না করে, নিজেদের কর্মকান্ড মানুসের কাছে তুলে ধরলে আমাদের প্রকৃত উপকার হবে। নতুবা আমাদের সংগ্রামের পথ কঠিন হবে। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ