নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নামফলক ভেঙ্গে ফেলার অভিযোগ খোকার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে পড়েছেন সরকারি দলের নেতারা। দিচ্ছেন হুঁশিয়ারি করছেন গালমন্দ। অনেকে বলছেন খোকার কারণে চিড় ধরতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির সম্পর্কে। খোকার বিরুদ্ধে দেয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে সত্যতা মিলেছে এ ধারণার।
লিয়াকত হোসেন খোকা একজন আইন প্রনেতা হয়ে নিজেই আইন হাতে তুলে নিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি ফোজদারি অপরাধ করেছেন। আমি তোলারাম কলেজের জিএস ছিলাম, এমপি খোকা কোথায় পড়াশোনা করেছেন আমি জানিনা। কোন স্কুল বা কলেজে পড়েছে তা কেউ বলতে পারবেনা। পঞ্চম শেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। যে কারনে তিনি গা এর জোরে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে চাইছেন।
শুক্রবার বিকেলে সোনারগাঁয়ে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম ফলক ভেঙে ফেলার ঘটনায় জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম পরবর্তীতে আরো বলেন, আনোয়ার হোসেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন, তোলারাম কলেজের জিএস ছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় এখন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি হয়েছেন। তিনি এমনিতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হননি; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে দিয়েছে। আর সেই আনোয়ার হোসেনের নাম ফলক টোকাই খোকার মত (নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা) পোলায় ভেঙে ফেলে; এই দুঃসাহস কোথা থেকে পেল। আওয়ামীলীগের কাধে ভর দিয়ে এই খোকা এমপি হয়েছে। নচেৎ ওর বাবার চৌদ্দ গোষ্ঠীর ক্ষমতা আছে নাকি এমপি হওয়ার। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে বিধায় এমপি হতে পেরেছে। ভোট দেক, ও (এমপি খোকা) ৫ হাজার ভোট পাবে কিনা সন্দেহ। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
তিনি আরো বলেন, সোনারগাঁয়ে যদি আওয়ামীলীগের এমপি থাকতো তাহলে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো না। এবং আনোয়ার হোসেনের নাম কেন আমাদের নামও যদি থাকতো সেই নামের উপরে আওয়ামীলীগের নামের উপরে ইজ্জত করে কথা বলতো।
গত ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশে সোনারগাঁও জি আর ইনিস্টিটিউশনের মূল গেইটের সামনে থাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের নাম ফলক ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। আমরাতো আওয়ামীলীগের ৫টি আসনে নৌকা চেয়েছি। কিন্তু মহাজোটের কারণে সেখানে জাতীয় পার্টির এমপিকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে কর্মসূচি পালনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল বলেন, আনোয়ার হোসেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি তিনি তো জনগণের সেবার জন্য জেলার বাইরে গিয়ে উন্নয়ন করেননি। তার এই নাম ফলক ভেঙে ফেলার ঘটনা অবশ্যই শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান দিপু বলেন, এমপি খোকা যা করেছে সেটা শিষ্টাচার বহির্ভূত। আমি এমপিকে অনুরোধ করবো অনতিবিলম্বে সেই ফলক স্থাপন করতে।
সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, এটা একটা জঘন্য ও ঘৃণ্য কাজ। কোন সুস্থ্য মস্তিস্কের মানুষ এই কাজ করতে পারেনা। উনি (এমপি খোকা) হচ্ছে আওয়ামীলীগের অনুকম্পা। আওয়ামীলীগের অনুকম্পা এমপি হয়ে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় যেখানে সরকারের উন্নয়নের নাম ফলক সেখানে উনার ব্যক্তির তো এখানে কিছু নাই। আনোয়ার সাহেব নৌকা প্রতিকের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এছাড়া তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি। আর উনি (এমপি খোকা) অনুকম্পার এমপি হয়ে উনাকে দিয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করিনা। কারণ উনি বিএনপির তাবেদার হিসেবে এখনো সোনারগাঁয়ে আছেন। বিএনপির সমস্ত লোকজনদের ইস্টেবলিষ্ট (প্রতিষ্ঠা) করার জন্য বিএনপির সমস্ত লোক জাতীয় পার্টিতে প্রবেশ করায়। আর বিএনপির লোকজন মূলত আওয়ামীলীগের উন্নয়ন দেখে খুশি হতে পারেনা। তাই তারা এটা মেনে নিতে পারেনা। সে (এমপি খোকা) বিএনপির প্রেতাত্মা হিসেবে সোনারগাঁয়ে আছে। বিএনপির প্রেতাত্মার এর চেয়ে বড় কিছু করার নাই। তারা এটাই করবে এটাকে আমরা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছি। কিন্তু কাজটা অত্যন্ত জঘন্য হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজস্ব ফান্ডের টাকার দোহাই দিয়ে তিনি এটা ভেঙেছে। রাজস্ব ফান্ড কি কারো বাবার থাকে। নাকি সরকারের রাজস্ব ফান্ড। সরকার কে আওয়ামীলীগ? আওয়ামীলীগের সরকার। রাজস্ব ফান্ড থাকলে আওয়ামীলীগের রাজস্ব ফান্ডে কাজ হয়েছে। উনি উনার বিএনপির ক্যাডার দিয়ে এই কাজটা করেছেন। এই কাজের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নাই। ক্ষমতার দ্বম্ভ উনাকে পাইয়া বসছে। উনি তো টেরটা পাচ্ছেনা। উনি কেওরে কল্লা ফালায় দেয় কেওরে খুন করে ফেলে কেউরে পকেটে ঢুকায়। এই ক্ষমতার দম্ভ বেশিদিন থাকবেনা। একটা কথা আছে ‘উই পোকার পাখা গজায় মরিবার তরে’। উনার পাখা গজায়া গেছে।
তিনি আরো বলেন, এখানে আওয়ামীলীগের সাংসদ নাই, সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের কমিটি একটা ষড়যন্ত্রের শিকার। এখানে স্বচ্ছ লোকজন যাতে আওয়ামীলীগ করতে না পারে সেজন্য একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এক হচ্ছে আমাদের সাংসদ নাই, দুই হচ্ছে আমাদের কোন সাংগঠনিক ভিত্তি নাই। যার কারণে আজকে এই ধরনের অপকর্ম করে সে পার পেয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম এরশাদের ক্ষমতার আমলে এরশাদকে (হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ) সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে আটকিয়ে দিয়েছি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। তখন এরশাদের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমপি আমাদের সমীহ করে চলতে হতো। ওই সময় আমাদের সাংগঠনিক এরকম একটা শক্তি ছিল। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের নৌকার সাংসদ নাই। আমাদের পোড়া কপাল দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও আওয়ামীলীগের এমপি নাই। আমরা হলাম অভাগা আওয়ামীলীগার। এই কারণে আমাদের কপালে এই লাঞ্ছনা। নতুবা কারো বাবার ক্ষমতা ছিলো কারো বুকের পাটা ছিলো আওয়ামীলীগের থাকাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগের নাম ফলক ভেঙে ফেলবে।
সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম বলেন, যদি এমপি খোকা এ ধরনের কাজ করে থাকে এটা ভুল হয়েছে। এটা মোটেও সমুচীন হয়নি। কারো উন্নয়ন কাজের নাম ফলক ভাঙার বিষয়টা অবশ্যই ভুল হয়েছে। আনোয়ার হোসেন আওয়ামীলীগের সিনিয়র পারসন উনার নাম ফলক ভাঙার বিষয়টা ভুল হয়েছে এটা কাম্য না। দীর্ঘদিন ধরে এখানে আওয়ামীলীগের সাংসদ না থাকায় এখানে আওয়ামীলীগ গ্রুপ ও উপগ্রুপে বিভক্ত আছে। আমাদে