নারায়ণগঞ্জ মেইল: বহুল আকাঙ্ক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে বিএনপি। চূড়ান্ত ঘোষণায় দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে গ্রীন সিগন্যাল পাওয়ার দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং মহানগর বিএনপির এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। দলের দুঃসময়ে তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দল তাদেরকে মূল্যায়ন করবে এমনটাই আশ তৃণমূলের। দলীয় হাইকমান্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেও এমনটি জানা গেছে।
অনুসন্ধান বলছে, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গিয়াসউদ্দিন এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। দক্ষ নেতৃত্বগুণ, কর্মী বৎসল এবং দুঃসময়ের হাল ছেড়ে না দেয়ার মানসিকতার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে এখন পছন্দের তালিকায় সবার উপরে অবস্থান করছেন এই দুই নেতা আসন্ন নির্বাচনে তাই এ দুজনের হাতে ধানের শীষ দেখতে চান তারা।
জানা যায়, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। এজন্য ওসমান পরিবারের প্রধান টার্গেট ছিলেন তিনি। তাছাড়া ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে গিয়াসউদ্দিনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন শামীম ওসমান। তাই গিয়াসউদ্দিনের প্রতি তার ক্ষোভের মাত্রাটাও ছিলো বেশি।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছে ওসমান পরিবার কিন্তু বিদেশে বসেও তারা ষড়যন্ত্রের অংক কষছে। এবারেও তাদের প্রধান টার্গেট গিয়াসউদ্দিনকে ঠেকানো। গিয়াসউদ্দিন যাতে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন না পায় সেজন্য নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কলকাঠি নাড়ছেন গডফাদার শামীম ওসমান।
এদিকে এসব ষড়যন্ত্রকে পাত্তা না দিয়ে ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক এই সাংসদ। একের পর এক সভা সমাবেশ করছেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন। লোকে লোকারণ্য হয়ে যাচ্ছে গিয়াসউদ্দিনের সভা সমাবেশগুলো। গিয়াস ঠেকাতে বিদেশে বসে শামীম ওসমান যতো চেষ্টাই করছেন, সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিচ্ছেন জাঁদরেল রাজনীতিবিদ মোঃ গিয়াসউদ্দিন।
পর্যবেক্ষণ বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকে সাবেক সভাপতি মোঃ গিয়াসউদ্দিন জাতীয় এবং দলীয় কর্মসূচিগুলো নিজ নেতাকর্মীদের নিয়ে একাই পালন করছেন। জেলা বিএনপির অনুষ্ঠানে খুব একটা তাকে দেখা যাচ্ছে না।
তৃণমূল পর্যায়ে অসম্ভব জনপ্রিয় গিয়াসউদ্দিনের রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। এদেরকে নিয়ে প্রতিদিনই ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। নিজ এলাকা ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জের পাশাপাশি সোনারগাঁ, সদর, বন্দর, এমনকি আড়াইহাজার, রূপগঞ্জেও যাচ্ছেন তিনি। কখনো দলীয় কর্মসূচি পালনে, কখনো অসুস্থ নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতে আবার কখনোবা সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।
যেখানেই যাচ্ছেন গিয়াসউদ্দিন সেখানেই নেতাকর্মীদের ঢল নামছে। সেখানে তিনি ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইছেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামী দিনে সুখী সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ধানের শীষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি।
গিয়াসউদ্দিনের এই আহবান বেশ সাড়া ফেলেছে ভোটারদের মাঝে। কারণ এই এলাকার মানুষকে বিগত দিনে ফ্যাসিস্ট ওসমান বাহিনীর সন্ত্রাস আর জুলুমের নির্মম শিকার হতে হয়েছে। তাই তারা সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ চায়। যারা দিনের আলোতে বিএনপি করেছে আর রাতের অন্ধকারে ওসমান পরিবারের সাথে আঁতাত করে চলেছে তাদেরকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চায় না নারায়ণগঞ্জের মানুষ। ওসমান বাহিনীর বিরুদ্ধে বিগত দিনে যার আওয়াজ সবচেয়ে উপরে ছিলো তাকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান তারা। জনসমর্থন গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে থাকায় সুবিধা করতে পারছে না ওসমান পরিবার। গিয়াস ঠেকানোর সব কৌশল একের পর এক ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে আর ক্ষমতার স্বাদ পায়নি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ সময়ের মধ্যে স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ফলস্বরূপ হাসিনার পালিত পুলিশ বাহিনীর দেওয়া অসংখ্য মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে দিনের পর দিন তাদেরকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাযাবর জীবন যাপন করতে হয়েছে, জেল খাটতে হয়েছে বারবার।
এ সময়ে নারায়ণগঞ্জের রাজপথের সবচেয়ে আলোচিত নাম হচ্ছে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। সরকার বিরোধী যে কোনো কর্মসূচিতে সবার আগে থাকতেন তিনি। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে পুলিশের সাথে লড়াই করেছেন, পুলিশের হামলার স্বীকার হয়েছেন, এমনকি জেলও খেটেছেন একাধিকবার তবুও রাজপথ থেকে সরে আসেননি।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় চরম সাহসিকতার সাথে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার ও তার এলিট বাহিনীর বিপক্ষে গিয়ে আইনী লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে। ক্ষমতাশীণদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এবং কোটি টাকার লোভনীয় অফারকে দুপায়ে মাড়িয়ে তিনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়ে গেছেন এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যন্ত আইনী লড়াই চালিয়ে গেছেন যা এখনও নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বিরল ঘটনা হিসেবে সমাদৃত হয়ে আছে।
এছাড়াও গত ১৫ বছর ফ্যাসিষ্ট সরকারের দেওয়া অসংখ্য মিথ্যা মামলায় আসামী হওয়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মামলা বিনা খরচে লড়ে গেছেন এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জ আদালতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই আইনজীবী নেতা। আইনী সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে কে কার লোক এটা কখনো বিবেচনা করেননি তিনি। এমনও ঘটনা ঘটেছে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে যে বিএনপি নেতাকে তিনি জামিন করিয়েছেন সে নেতা ঐদিনই তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, এমনকি সাখাওয়াতের বহিস্কারও দাবি করেছেন। তবুও তিনি পিছপা হননি।
রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের কারনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করছেন এডভোকেট সাখাওয়াত। দলের ভারপ্রাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুদৃষ্টির পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদেও আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন তার অবস্থান।
