“প্রাথমিক” আর “চূড়ান্ত” মনোনয়নের ফাঁদে ছিন্নভিন্ন বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ মেইল: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সারাদেশে ২৩৭ টি আসনে দলীয় প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। গত ৩ নভেম্বর এই প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় এই তালিকাকে প্রাথমিক তালিকা হিসেবে উল্লেখ করে পরবর্তীতে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

দলের এই ঘোষণার পর থেকেই সারাদেশে বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে বিভেদ, বিভক্তি আর কোন্দলের সৃষ্টি হয়। যারা প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন তারা এই প্রাথমিক ঘোষণাকে চূড়ান্ত ঘোষণা মনে করে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়ে সকলকে তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান কিন্তু যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন তারা চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত প্রার্থীর পক্ষে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে শুরু হয়ে গেছে চরম অসন্তোষ।

নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করে বিএনপি। ঘোষণার পর থেকে এই চারটি আসনের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রে দৌড়ঝাপ করছেন। এমনকি সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীরা একজোট হয়ে ঘোষিত মনোনয়ন বাতিল করার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর লিখিত আবেদনও করেছেন। সেই সাথে প্রায় প্রত্যেক দিনই নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এতে করে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি এবং ঐক্য ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। যা আসন্ন নির্বাচনে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিস্টরা। বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বিএনপি’র এই অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে বাজিমাত করে ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

দলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন এভাবে সরাসরি মনোনয়ন ঘোষণা করা উচিত হয়নি। সব সময় যেভাব করা হয় এবারও সেভাবেই করা দরকার ছিলো। প্রথমে সবাই দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতো, পরে দল আলাদা আলাদা সবার সাথে সাক্ষাৎকার নিতো এবং পরে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করতো। এতদিন এভাবেই চলে এসেছে, এভাবে করলে নেতাকর্মীদের মনে কোনো বিভ্রান্তি থাকতো না কিন্তু এবার যেভাবে ঘোষণা করা হলো তা সত্যি বিভ্রান্তিকর কারণ ঘোষণার সময় বলা হয়েছে এটা প্রাথমিক মনোনয়ন তালিকা। এই প্রাথমিক কথাটার মাঝেই সকল সমস্যা লুকিয়ে আছে। ঘোষণার সময় যদি বলে দিতো এটাই চূড়ান্ত মনোনয়ন তাহলে হয়তো কোনো বিভ্রান্তি থাকতো না। তখন সকল নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমে যেতো কিন্তু যেহেতু এখনো চূড়ান্ত মনোনয়ন বাকি আছে তাই সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরাই চূড়ান্ত ঘোষনার অপেক্ষায় রয়ে গেছেন। সেইসাথে তাদের নিজস্ব বলয়ের নেতাকর্মীরাও প্রাথমিক ঘোষণার সাথে একমত হয়ে প্রার্থীর সাথে প্রচারণায় নামছেন না। যা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব কোন্দল বেড়েই চলছে।

এদিকে যাদেরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে তারা বাকি প্রার্থীদের এবং তাদের সমর্থকদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। যারা না আসছেন তাদেরকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী হিসেবে উল্লেখ করছেন। আর এভাবে একই দলে দুই তিনটি ভাগ হয়ে যাচ্ছে। তাই দ্রুত এ বিষয়ে দলের হাই কমান্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ