নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বর্তমানে লড়াই হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সাথে বিএনপিতে সদ্য যোগদান করা শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদের। একদিকে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের দীর্ঘ ১৭ বছরের ত্যাগ তিতিক্ষা অপরদিকে শিল্পপতি মডেল মাসুদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। এখন দেখার বিষয় ত্যাগের সাথে টাকার লড়াইয়ে কে জিতে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত ১৭ বছরের সরকার বিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের রাজপথের সবচেয়ে আলোচিত নাম হচ্ছে এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। সরকার বিরোধী যে কোনো কর্মসূচিতে সবার আগে থাকতেন তিনি। নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে পুলিশের সাথে লড়াই করেছেন, পুলিশের হামলার স্বীকার হয়েছেন, এমনকি জেলও খেটেছেন একাধিকবার তবুও রাজপথ থেকে সরে আসেননি।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় চরম সাহসিকতার সাথে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার ও তার এলিট বাহিনীর বিপক্ষে গিয়ে আইনী লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে। ক্ষমতাশীণদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এবং কোটি টাকার লোভনীয় অফারকে দুপায়ে মাড়িয়ে তিনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়ে গেছেন এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যন্ত আইনী লড়াই চালিয়ে গেছেন যা এখনও নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বিরল ঘটনা হিসেবে সমাদৃত হয়ে আছে।
এছাড়াও গত ১৫ বছর ফ্যাসিষ্ট সরকারের দেওয়া অসংখ্য মিথ্যা মামলায় আসামী হওয়া বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মামলা বিনা খরচে লড়ে গেছেন এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। নারায়ণগঞ্জ আদালতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এই আইনজীবী নেতা। আইনী সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে কে কার লোক এটা কখনো বিবেচনা করেননি তিনি। এমনও ঘটনা ঘটেছে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে যে বিএনপি নেতাকে তিনি জামিন করিয়েছেন সে নেতা ঐদিনই তার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, এমনকি সাখাওয়াতের বহিস্কারও দাবি করেছেন। তবুও তিনি পিছপা হননি।
রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি স্বচ্ছ ব্যক্তিত্বের কারনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করছেন এডভোকেট সাখাওয়াত। দলের ভারপ্রাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুদৃষ্টির পাশাপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীদেও আস্থা ও ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন তার অবস্থান।
অপরদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের দুঃসময়ের অবসান ঘটে। সেই সাথে আগমন ঘটে কিছু হাইব্রিড সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের যাদের গত ১৭ বছর দেখা যায়নি। এরা উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছেন, বিভিন্ন মিটিং মিছিলে সামনের সারিতে জায়গা নিচ্ছেন।
বিএনপি’র তৃণমূল মনে করে, দুঃসময়ে যারা বিএনপির ঝান্ডা ধরেছিলেন, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, সুসময় তাদেরকেই মূল্যায়ন করতে হবে। কোন অতিথি পাখিকে তারা মেনে নেবেন না বিএনপির হাই কমান্ডের কাছে তাদের এই একটাই প্রত্যাশা।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে দীর্ঘদিন যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তাদেরকে হতাশ করে দিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের মনোনয়ন চাইছেন। এ লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি তিনি বিশাল আয়োজন করে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন যা দেখে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
তৃণমূল মনে করে বিএনপির গত ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে একদিনের জন্যও রাজপথে দেখা যায়নি মডেল মাসুদকে। বরং সে সময়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের সভা সমাবেশে প্রায়ই দেখা মিলেছে তার। দুঃসময়ের আন্দোলন সংগ্রামে যখন সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে তখন মাসুদুজ্জামান মাসুদ পুরোপুরি ব্যবসায়ী মেজাজে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে ব্যবসা করেছেন, কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী আন্দোলনের মিটিং মিছিলে একবারের জন্যও দেখা মিলেনি মডেল মাসুদের। সারাদেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সরকারের মামলা হামলায় জর্জরিত হলেও মডেল মাসুদকে কোনদিন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বিরক্ত করেনি। দলের দুঃসময় কেটে যাওয়ায় মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন এই ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের আমলে কামানো কোটি কোটি টাকা নিয়ে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন কেনার প্রতিযোগিতায়।
তবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দিনে যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেই দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। যারা আওয়ামী লীগ আমলে মামলা হামলা খায়নি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন আর মোটা টাকার মালিক হয়েছেন, তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হলে তারা মানবেন না। এবারের দলীয় মনোনয়ন যাতে টাকায় বিক্রি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে দলের হাই কমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।