নারায়ণগঞ্জ মেইল: ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। রক্তস্নাত বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এদিনে বীর বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। তাই বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সহ সকল দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও যুবদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। আর পাকিস্তানি বাহিনীর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ দুই যুগের পাকিস্তানি শোষণ আর বঞ্চনার। নির্যাতন, নিষ্পেষণের কবল থেকে মুক্ত হয় বাঙালি জাতি।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেটির উদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের মহামুহূর্তটি সূচিত হয়েছিল আজকের এই দিনে। ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সৈন্য প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করেছিল। ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিত্ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন। দেনদরবার নয়, কারও দয়ার দানে নয়, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের পর নত মস্তকে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় মেনে নেয়। পৃথিবীতে নতুন একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। আর এই বিজয়ের মহানায়ক হিসাবে যিনি ইতিহাসে চির অম্লান ও ভাস্বর হয়ে আছেন তিনি হলেন মেজর জিয়াউর রহমান। যিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিকামী বাঙালি জাতি উদ্দেশ্যে যুদ্ধের ঘোষণা করেন।
আনন্দ অনেকভাবেই আসতে পারে জীবনে। কিন্তু মাতৃভূমির পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির জন্য প্রাণ উৎসর্গ করা যুদ্ধজয়ের আনন্দের কোনো তুলনা হয়! ৫৫ হাজার বর্গমাইলের এই সবুজ দেশে ৪৩ বছর আগে আজকের এই দিনে উদিত হয়েছিল বিজয়ের লাল সূর্য। মুক্তিপাগল বাঙালি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলো। যে সূর্য কিরণে লেগে ছিল রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়ের রং। সেই রক্তের রং সবুজ বাংলায় মিশে তৈরি করেছিল লাল সবুজ পতাকা। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্ন অর্জনে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণ একদিনে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে এই জাতির ঘাম ঝরানো সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের মহান সেনাপতি হিসেবে কাউকে বিবেচনা করতে গেলেই উচ্চারিত হয় মেজর জিয়ার নাম। জিয়া মানেই বাংলাদেশ। জিয়া মানেই স্বাধীনতা। জিয়া মানেই আমাদের নতুন অস্তিত্ব। ৫৫ হাজার বর্গমাইল জুড়েই তাঁর অস্তিত্ব বিদ্যমান।
ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসনামলে বাঙালি রক্ত দিয়েছে। লড়াই করেছে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে। সোয়া ২শ’ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম ও লড়াইয়ে রক্ত দিয়েছে এই বাঙালি জাতি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনেও ছিলো বাঙালিদের অবদান। বাঙালিরাই ছিলো পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর। কিন্তু কয়েক বছরেই বাঙালির স্বপ্নভঙ্গ হয়। যে শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে তারা ইংরেজদের বিতাড়িত করেছিলো সেই একই রকম শোষণ বঞ্চনার মুখোমুখি হয়ে পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই। শুরু হয় সংগ্রামের নতুন যুগ। পাকিস্তানীরা এ ভূখন্ডের মানুষকে তাদের তাঁবেদার মনে করতো। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই তারা বঞ্চিত করতো বাঙালিদের।
এমনকি নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতেও তারা অস্বীকার করতো। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণ অভ্যুত্থান এ সবই ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচন সব পরিণতিকে দিয়ে দেয় চূড়ান্ত রূপ। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। এরপর জিয়াউর রহমান বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত সেই যুদ্ধের ঘোষণা। এই ঘোষণা জাতির মনে বয়ে আনে অন্য এক প্রেরণা, জাগিয়ে তোলে মুক্তির উন্মাদনা। প্রায় ৯০ হাজার পাকিস্তানী বাহিনী আজকের এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে পরাজয় বরণ করে।