নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের নিস্ক্রিয়তায় আবারো প্রশ্ন উঠেছে। পদ পাওয়ার আগে তিনি যেমন নিস্ক্রিয় ছিলেন পদ পাওয়ার পরেও তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ তৃণমূলের। বিশেষ করে বর্তমানে চলমানর এক দফা আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন থেকে শুরু করে পুরো অনুষ্ঠান তদারকি করে সফল করার যে গুরু দায়িত্ব পালন করার কথা সাধারণ সম্পাদককে, খোকন তার ধারেকাছেও যেতে পারছেন না। এমনকি জনসভাগুলোর সঞ্চালনাও ঠিক মতো করতে পারেন না।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গোলাম ফারুক খোকনের যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিলো সেটা করতে দেখা যাচ্ছে সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবকে। তৃণমূল থেকে মাঠ পার্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত কাজ করা রাজিব জেলা বিএনপির প্রতিটা কর্মসূচি সাবলিলভাবে পরিচালনা করে প্রানবন্ত করে তুলছে। বিক্ষোভ মিছিল কিংবা জনসমাবেশ, পদযাত্রা কিংবা অবস্থান ধর্মঘট, ঢাকা কিংবা নারায়ণগঞ্জে যে কর্মসূচিই দেয়া হয় নেতাকর্মীদের সকলের সাথে সমন্বয় করে সফল করে তোলেন রাজিব। চমৎকার বাচন ভঙ্গির মাধ্যমে বড় বড় সভা সমাবেশগুলো স্বচ্ছন্দে উপস্থাপনা করে সকলের নজর কাড়িতে সক্ষম হয়েছেন মাসুকুল ইসলাম রাজিব। আর তাই তাকে এখন তৃণমূল নেতাকর্মীরা তাকে জেলা বিএনপির ‘সেকেন্ড ম্যান’ ভাবতে শুরু করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৭ জুন অনুৃষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন দুইজন। একজন ছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন ও আরেকজন তষনকার যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব।
এই দুজনের মধ্যে গোলাম ফারুক খোকন রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না। তিনি এতদূর এসেছেন দীপু ভুঁইয়ার কাঁধে চড়ে। খোকন হচ্ছে জেলা বিএনপিতে দীপু ভুঁইয়ার ড্যামি প্রার্থী। রূপগঞ্জের রাজনীতিতে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে চলেন দিপু ভূঁইয়া। আর তাই তিনি এবং তার অনুগত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা নেই বললেই চলে আর জেলখানার চার দেয়ালে কখনোই বন্দি থাকতে হয়নি দীপু ভূঁইয়া কিংবা গোলাম ফারুক খোকনকে।
নেতাকর্মীদের মতে, গত ১৫ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এসময় রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে খুব একটা দেখা মিলেনি গোলাম ফারুক খোকনের। বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর টাকার জোরে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন খোকন। সেই নেতার আশীর্বাদেই হয়েছিলেন যুবদলের আহ্বায়ক এবং পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ন পদ।
অপরদিকে আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবের রয়েছে বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস। নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের রাজনীতির আইকন ধরা হয় রাজীবকে। সরকারি তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মাসুকুল ইসলাম রাজীবের আছে বিশাল এক কর্মী বাহিনী, যাদেরকে নিয়ে বিগত সময়ে রাজপথে আন্দোলনের ঢেউ তুলেন রাজিব। আর এসব কারণে সরকারি দল ও পুলিশের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন রাজিব। প্রায় অর্ধশতাধিক মামলার আসামি রাজিব জেল খেটেছেন অসংখ্যবার। এতো কিছুর পরেও রাজপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি বরং আরো বলিষ্ঠ হয়ে ফিরে এসেছেন। আর তাই রাজিবের মত সাহসী আর কর্মীবান্ধব নেতাকেই জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রথম পছন্দ ছিলেন মাঠ পর্যায়ের কর্মী সমর্থকদের।
তৃণমূল মনে করে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে নির্বাচন হলে সাধারণ সম্পাদক পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতো গোলাম ফারুক খোকন ও মাসুকুল ইসলাম রাজিবের মধ্যে। এমনকি রাজিবের জয়ের সম্ভাবনাই ছিলো বেশি। খোকনের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে রূপগঞ্জের ধনকুবের দিপু ভূইয়া টাকার বস্তা নিয়ে ছোটেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দরবারে। দিপু ভূইয়ার টাকা পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতারাও রাজিবকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে একের পর এক চেষ্টা চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে দল থেকে বহিস্কারের হুমকি দিয়ে সম্মেলনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। দলের স্বার্থে দেশের স্বার্থে রাজিব সব কিছু মেনে নেন। কিন্তু মেনে নিতে পারেননি তার ভক্ত সমর্থকরা। টাকার কাছে রাজপথের অবদানকে হারতে দেখে তৃণমূলের পক্ষে মেনে নেওয়াও সম্ভব ছিলো না। আর এভাবেই রাজিবের মতো দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতা থাকার পরেও খোকনের মতো একজন নিস্ক্রিয় লোক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়ে গিয়েছিলেন শুধুমাত্র টাকার জোরে।