নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ এবং জেলা বিএনপির সভাপতি মো: গিয়াসউদ্দিন এই আসনের বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন হলেতো উনি (শামীম ওসমান) পালিয়ে যাবেন, নির্বাচন করবেন না। এ ধরনের সন্ত্রাসী মূলক, হুমকি ধামকিমুলক বক্তব্য সে সব সময়ই দিয়ে আসছে। তার এসবক হুমকিতে এখন আর কেউ ভয় পায়না।
‘চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বিএনপিকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করবো’ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের এই বক্তব্যের জবাবে গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমি একটা কথা দৃঢতার সাথে বলতে পারি যদি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মত নির্বাচন করতে না পারে এই সরকার, জনগণের ভোটে এমপি নির্বাচিত হবে এমন নির্বাচন যদি হয়, যে কোনো অজুহাতে সে নির্বাচনী করবে না, সে পালায় যাবে, নির্বাচনই করবে না। তার সন্ত্রাসী বাহিনীও দুর্বল হয়ে গেছে। তারাও আর এ ধরনের হুমকি ধামকি মূলক বক্তব্য পছন্দ করেনা কিন্তু সাহস করে কেউ বলতে পারে না।
তিনি বলেন, সে করেছে তার পরিবার করেছে হত্যার রাজনীতি। মানুষকে হত্যা করার রাজনীতি করে আসছে। তারা জুলুম নির্যাতনের রাজনীতি করে আসছে এবং চাঁদাবাজি, মাস্তানি, টেন্ডারবাজি, অবৈধভাবে সম্পদ আহরণ করা এবং বিদেশে সম্পদ পাচার করাই তাদের কাজ। নারায়ণগঞ্জের এমন কোন সেক্টর নাই যেখানে তার লোকজন চাঁদাবাজি করে না। তবে আওয়ামী লীগের সবাই না, শুধুমাত্র তার পদ লেহন করে, তার কথায় চলে এমন ব্যক্তিদের দিয়ে ডিস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে, জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলো থেকে চাঁদাবাজি করে সে এবং তার ফ্যামিলির লোকজন। এই হল তার রাজনীতি। তার রাজনীতি দেশের কল্যাণে বা জনগণের কল্যাণে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে জন্য নয়।
‘তিনি বলেছেন ২৪ ঘন্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের তারাই দেবে এটা তো কোন রাজনৈতিক কথা হলো না রাজনীতি উনি মোকাবেলা করবেন রাজনৈতিকভাবে। নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষের কাজ করে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করে তাকে বিরোধীদলের মোকাবেলা করতে হবে। সেটা না করে সে হুমকি দিচ্ছে পুলিশ ছাড়াই ২৪ ঘন্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিএনপিতে তাড়িয়ে দিতে পারে। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই আমি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলতে চাই, এ ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে সে যে সকল কথা বলে, তা কোনদিনও বাস্তবায়ন করতে পারবে না কারণ নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি অনেক মজবুত। বিএনপির নেতৃবৃন্দ, কর্মী এবং সমর্থক যথেষ্ট পরিমাণে শক্তিশালী, জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। জন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তারা। সে কারণে জনগণকে ভয় পেয়ে তাদের নেতাকর্মীরাও আজ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই এই বিদায় লগ্নে এসে এসব হুংকার দিয়ে তাদের দুর্বল হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের একটু চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে, এছাড়া সে আজ পর্যন্ত কোন কিছু করতে পারে নাই’।
তিনি আরো বলেন, একজন রাজনীতিবিদ রাজনীতি করবে দেশের কল্যাণে মানুষের কল্যাণে। কিন্তু রাজনীতি করতে গিয়ে কেউ যদি সন্ত্রাসী হয়ে যায় বা সন্ত্রাসী-আচরণ করে তাহলে এ ধরনের উশৃংখল এবং হুমকি মূলক কথাবার্তা বলতে পারে। এ ধরনের কথাবার্তা বলার কারনেই মানুষ আজ আওয়ামী লীগ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, আওয়ামীলীগকে আর পছন্দ করছে না। এদেশের সাধারণ মানুষ বিনয় পছন্দ করে, উগ্র এবং সন্ত্রাসীমূলক কোনো আচরণ কিংবা কথাবার্তা তারা পছন্দ করে না।
তিনি যার সম্বন্ধে কথা বলেছেন সেই আব্দুল মতিন চৌধুরী ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উনার নেতৃত্বে তখন শুধু নারায়ণগঞ্জ বিএনপি না সারা বাংলাদেশের বিএনপি কাজ করতো। তিনি অনেক বড় মাপের একজন নেতা ছিলেন। এত বড় মাপের একজন নেতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া শিষ্টাচার বহির্ভূত। শ্রদ্ধেয় আব্দুল মতিন চৌধুরী যতদিন রাজনীতি করে গেছেন ততদিন সকল দলের নেতাকর্মীদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করেছেন। তিনি বিএনপির মন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও বিরোধী দলের কেউ যদি গ্রহণযোগ্য কোন মতামত দিতো, তিনি সেটা শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। এমন একজন নেতা যিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন, মুসলমান হিসেবে হলেও তো তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলা উচিত না। তার এ ধরনের বক্তব্য মানুষ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবে।
ফতুল্লায় সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই পানির নিচে তলিয়ে যায় অথচ নারায়ণগঞ্জ জেলার মধ্যে বন্দর, সদর ও সিদ্ধিগঞ্জ থানার লোকজন উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে এবং উন্নত জীবন যাপন করছে । শুধুমাত্র সে তার ব্যক্তি স্বার্থে ফতুল্লার কোন উন্নয়ন করছে না। ফতুল্লার উন্নয়নের জন্য আমরা চেয়েছিলাম ফতুল্লাকে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করতে কিন্তু তিনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তা করতে দিচ্ছে না। মানে মানুষের কল্যাণ হয় এমন কাজের বিপক্ষে থাকেন তিনি শুধুমাত্র তার ব্যাক্তি স্বার্থের জন্য।
আমরা চাই বিএনপির একটা সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করতে। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষের কল্যাণে, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। আমরা জনগনকে সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করে রাজনীতি করতে চাই। আগামী নির্বাচনে যাতে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচিত করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, গত ৯ সেপ্টেম্বর শহরের চাষাঢ়া রাইফেল ক্লাবে এক কর্মী সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেন, ওরা বলে পুলিশ ছাড়া মাঠে আসতে। আমি পুলিশের কাছে অনুরোধ করছি সব পুলিশ প্রশাসন ওদের পক্ষে থাকেন। চব্বিশ ঘণ্টায় বিএনপিকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করবো। আপনাদের হয়তো মনে নেই আপনাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মতিন চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে এসে আমাদের অনুমতি ছাড়া নামতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমি এক বছর ধরে বলছি। রাজনীতিতে একটি হিসেব নিকেশের ব্যাপার আছে। আমরা খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি। চারিদিকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যারা এই ষড়যন্ত্র করছে তারা একাত্তরে বিরোধিতা করেছিল, আমাদের মা বোনদের পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল। আমাদের দায়িত্ব এ দেশকে রক্ষা করা। সেসময় স্লোগান ছিল বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। আজকের স্লোগান বীর বাঙালি ঐক্য গড়ো বাংলাদেশ রক্ষা করো। যারা লাফালাফি করে বলছে সরকার ফেলে দেবে। অনেকদিন ধরেই এগুলো শুনছি আমাদের মা শেখ হাসিনা আপনার মাকে নিয়ে অশ্লীল স্লোগান দিলে। আপনি কী ছেড়ে দিবেন।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে এখন রাস্তায় জাতির পিতার কন্যাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে মিছিল করে। মিছিল করুক আপত্তি নেই। তবে তারা যে ভাষায় গালি দেয় তা মেনে নেয়া যায় না। মামুনুল হক ইস্যুতে কতিপয় লোক শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে পায়ের নিচে পিষে ফেলতে চায়। আমার কর্মীরা ছাত্রলীগ যুবলীগ জবাব দিতে চাইল। আমি বললাম থামো দেখি বাকি নেতা নেত্রীরা কী করে। অনেক বড় বড় নেতা নেত্রী তো আছে। তাদের বললাম আমার সাথে থাকার দরকার নেই জাতির পিতার কন্যার জন্যে হলেও মাঠে নামুন।
তিনি বলেন, আমরা একটা ছোট্ট দেশ। আমরা হাটিহাটি পা পা করে উঠে দাঁড়াচ্ছি। ভৌগলিক কারনে আমরা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হয়ে দাঁড়িয়েছি। এখানে খেলা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন বিশ্বে এত খারাপ অবস্থার পরেও ২০৪০ সালের মধ্যে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেই না। আমরা নারায়ণগঞ্জে নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করি। এখানে যারা আছি তারা বলতে পারবেন এ নারায়ণগঞ্জ ভূমিকা পালন করে। অন্য কারও সার্টিফিকেট দরকার নেই। বঙ্গবন্ধু নিজে তার আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন। প্রতিটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ।
শামীম ওসমান আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে বলেন, সেদিন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ দেখিয়ে দেবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের ঘাটি ছিল আছে থাকবে। বিএনপি খালি বলে পুলিশ ছাড়া আসতে, আমি বলি পুলিশকে আপনারা সব তাদের সাথে থাকেন, ওদের জন্য আমরাই যথেষ্ট।
আগামী নভেম্বর মাসের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ মাসে আর ২০ দিন, অক্টোবরে আর ৩০ দিন। এরপর নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা। তখন সবাই সমান। আপাতত আসুন আমরা সবাই এক থাকি। আপনারা ১৬ তারিখ দেখিয়ে দেবেন, আমরা এমন আওয়াজ তুলব যা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। সেদিন আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খানকে দাওয়াত করব। আশা করি কোন ব্যস্ততা না থাকলে উনি উপস্থিত থাকবেন।