নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে জমে উঠেছে নির্বাচন কেন্দ্রীক রাজনীতি। বড় দুই দলের মাঝেই চলছে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আশ্রয় নিচ্ছেন নানা কৌশলের। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ একেএম শামীম ওসমান তার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। বিএনপির ভিতরেই গিয়াসবিরোধী জোট তৈরীর চেষ্টা করছেন শামীম ওসমান।
ঘটনার বিবরনে প্রকাশ, গত বছরের ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে নতুন আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়। সে কমিটিতে আহবায়ক করা হয় সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: গিয়াসউদ্দিনকে। জাঁদরেল এই নেতাকে দায়িত্ব দেয়ায় উজ্জীবিত হয়ে উঠে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এতোদিন অনেক নেতাকেই এ পদে দায়িত্ব দেয়া হলেও তৃণমূলকে চাঙ্গা করতে সকলেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই এবার অভিজ্ঞ এই নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে শেষ চেষ্টা করেছে বিএনপি। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৭ জুন নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক সাংসদ মো: গিয়াসউদ্দিন।
এদিকে গিয়াসউদ্দিন জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ায় পর থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পরেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। কারণ সামনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এ আসনে শামীম ওসমানের জন্যে মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারেন মো: গিয়াসউদ্দিন- এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সূত্রে মতে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো: গিয়াসউদ্দিনের রয়েছে এ আসনে শামীম ওসমানকে পরাজিত করার অভিজ্ঞতা। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মো: গিয়াসউদ্দিন নারায়য়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদিও এ নির্বাচনের কিছুদিন আগে পর্যন্ত গিয়াসউদ্দিন আওয়ামীলীগেরই প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। শামীম ওসমানের কারনে এ আসন থেকে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে তিনি নির্বাচনের কিছুদিন আগে বিএনপিতে যোগ দেন এবং বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন।
সূত্র বলছে, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় মো: গিয়াসউদ্দিনের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন বাকিদের চেয়ে গিয়াস্উদ্দিনের রাজনৈতিক সক্ষমতা অনেক বেশি। দলীয় ভোট ছাড়াও নিরপেক্ষ অনেক মানুষের পছন্দে রয়েছেন তিনি। বিশেষ করে এ অঞ্চলে শামীম ওসমান বিরোধীদের প্রথম পছন্দ মো: গিয়াসউদ্দিন। তাদের মতে এই আসনে শামীম ওসমানকে ঠেকানোর সামর্থ রয়েছে কেবল গিয়াসউদ্দিনেরই। আর তাই তাকে নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে বর্তমান সাংসদ একেএম শামীম ওসমানকে।
তৃণমূলের মতে, কঠিন প্রতিপক্ষ মোকাবেলায় তাই বিএনপিতেই গিয়াস বিরোধী জোট তৈরীর চেষ্টা করছেন সাংসদ শামীম ওসমান। আর এই জোটের নেপথ্য নায়ক হিসেবে উঠে এসেছে এ আসনের সাবেক সাংসদ মো: আলী ও সাবেক ধানের শীষের প্রার্থী মো: শাহ আলমের নাম। তারা দুজন পর্দার আড়ালে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের গিয়াসবিরোধী জোটে অন্তভূক্তির চেষ্টা করছেন। আর মাঠে থেকে তা নেতৃত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। আর পুরো পরিকল্পনায় তাদের সহযোগী হিসেবে থাকছেন সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, আড়াইহাজার বিএনপি নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন ও ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা রিয়াদ মো: চৌধুরী। এরা সকলে মিলে বিএনপিতে গিয়াসউদ্দিনকে প্রতিহত করে শামীম ওসমানের জয়ের পথ সুগম করতে কাজ করছেন বলেই ধারনা তৃণমূলের।
