নারায়ণগঞ্জের তিতাস গ্যাস অফিসে যত অনিয়ম

নারায়ণগঞ্জ মেইল: ফতুল্লার তল্লায় মসজিদে গ্যাসের লিকেজের কারণেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ঘোষনা দিয়েছে সিআইডি। তিতাস গ্রাস কর্তৃপক্ষে দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। বিস্ফোরণের পর পরই এসি’র কারণে এঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হলেও পরিক্ষা নিরিক্ষা শেষে বলা হচ্ছে গ্যাসের কারণেই এমনটা হয়েছে। এরই মধ্যে মসজিদের পাশে গ্যাস লাইনে ৬টি লিকেজ পাওয়া গেছে। আর বিস্ফোরণে এরই মধ্যে ৩১জন মারা গেছে। তিতাস কর্তৃপক্ষ এতো মৃত্যুর দায় এরাতে পারে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


যদিও নিজেদের দোষ স্বীকার না করে উল্টো নানা প্রকার মন্তব্য করেছে কর্তৃপক্ষ এদিকে, তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের পর তিতাস গ্যাস কর্তৃকক্ষের নানা অনিয়মের তথ্য প্রকাশ হচ্ছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গ্যাস সংযোগ সংস্কারের নামে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকলেও অসাধু কর্মকর্তাদের আতাঁত করে দালাল চক্র এখনো অবৈধ ভাবে বাসা-বাড়িতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গ্যাস সংযোগ দিচ্ছেন। আর সেই অবৈধ সংযোগ থেকে প্রতিমাসে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। চাষাড়া বালুর মাঠে অবস্থিত তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় এখন অনেকটা দালালদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কেননা দালালদের মাধ্যমেই অবৈধ সংযোগ দেয়া হয়।


সূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকায় গ্যাস সরবরাহের জন্য ১৯৬৪ সালে গঠিত হয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। লাকড়ির চুলা বা কেরোসিনচালিত স্টোভের পরিবর্তে গ্যাসের চুলায় রান্নার সুযোগ পেয়ে খুব স্বস্তিবোধ করেছিলেন ঢাকাবাসী। পরে এই সুযোগ নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিস্তৃত হলেও তিতাস গ্রাহকদের সেই স্বস্তি আর থাকেনি। দিনে দিনে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। বছর বছর গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলেও গ্রাহক সেবার মান যাচ্ছেতাই। আমলে নেয়া হয় না গ্রাহকদের গুরুতর সব অভিযোগও। তিতাসের এনফোর্সমেন্ট টিম গ্যাস লাইনের সমস্যা অনুসন্ধান ও সমাধানের দিকে নজর না দিয়ে বরং প্রকৃত বিল গোপন করা, অবৈধ সংযোগ, মিটার টেম্পারিং ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পেছনেই বেশি সময় ব্যয় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ সংযোগ বাণিজ্য তিতাসের অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখানেই বেশি দুর্নীতি হয়। নারায়ণগঞ্জে শত শত শিল্প প্রতিষ্ঠান অবৈধ গ্যাস সংযোগের মাধ্যমেই চলছে। ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাতারাতি ধনী হয়ে যাচ্ছেন। ঘুষ পেয়ে তিতাসের অসাধু লোকজন আবাসিকে নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না করে শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি যত্নবান হয়। টাকার অঙ্কে শিল্প-কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো ও কমানো হয়। কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় একেবারেই গ্যাস সরবরাহ করা হয় না। আর এভাবেই সিস্টেম লস তিতাসের নিয়মে পরিণত হয়েছে।


অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ গ্যাস সংযোগে তিতাসের লোকজনের আগ্রহের কারণে বৈধভাবে সংযোগ পাওয়া গ্রাহকদের জন্য এখন কষ্টসাধ্য। চোরাই লাইনেও গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে। সাধারণতো রাতের আঁধারে ‘অবৈধ ও চোরাই’ সংযোগগুলো দেয়া হয় যা তিতাসের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আতাঁত করেই। ঠিকাদার এবং নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো ঘুষ দেয়া হলেই সংযোগ মেলে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে তিতাসের গ্যাস লাইনের পাইপের বেহাল দশা। প্রায়ই গ্যাস লাইনের পাইপ লিকেজ হওয়ার খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু তা নিয়ে চিন্তিত নন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। অনেক ক্ষেত্রে লিকেজের বিষয় জানালেও ঘুষ দাবী করা হয়। আর সেই ঘুষ না দেয়ার কারণেই তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যেমসজিদের সিঁড়ি ঘেষা রাস্তাসহ তিনটি পয়েন্টে মাটি খুঁড়ে ছয়টি লিকেজ পাওয়া গেছে। অথচ এই লিকে অভিযোগ পাওয়ার পর সংস্কার কলে এই দূর্ঘটনা টতো বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ