নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার ডাক দিয়েছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমেই সে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি শাহাদাত বরণ করার পর যখন আবারো দেশকে নস্যাৎ করার জন্য স্বৈরশাসক এসেছে তখনই তার সুযোগ্য সহধর্মিনী সংগ্রামী নেত্রী এদেশের অগণতান্ত্রিক নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। তিনি এমনভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন কিন্তু কখনো তিনি প্রতিপক্ষকে আঘাত করেন নাই। সংগ্রামী চেতনা নিয়ে সংগ্রাম করে তিনি আপোষহীন নেত্রী হয়ে এদেশে আবারও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া, আলোচনা সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা গুলো বলেন।
রবিবার ( ২২ জানুয়ারি ) বিকেল তিনটায় সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক রোগমুক্তি ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়। পরে অসহায় শীতার্তদের মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, বর্তমান এই সরকারের আমলে ১৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। এদেশের গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত দুটি নির্বাচন ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নিজেদের অধিকার তারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নাই। বিনা ভোটে এবং রাতের ভোটে আজকে যারা ক্ষমতায় তারা ক্ষমতায় জবরদখলভাবে বসে আছে। যারা নিজেদেরকে এমপি বলেন, যারা আজকে নিজেদেরকে মন্ত্রী বলেন, তারা কেউ নির্বাচিত নয়। সবাই স্বঘোষিত নেতা। মানুষের যখন লজ্জা শরম হারিয়ে ফেলে, তখন মানুষ সবকিছুই করতে পারে। আজকে যারা এই সরকারের সব ক্ষমতায় অধিষ্ট তারা নিজেদের লজ্জা শরম খেয়ে ফেলেছেন। ক্ষমতা থেকে দাম্ভিকতা নিয়ে কথা বলেন। বিএনপিকে কটাক্ষ করে কথা বলেন। বলেন বিএনপি করে সাংগঠনিকভাবে শক্তি নাই, বিএনপি কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। এবং আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে না। তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলে।
আজকে আমি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই বিএনপি এমন একটি দল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাদের নেতাকর্মীদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন, দেশপ্রেম কাকে বলে এবং আন্দোলন সংগ্রাম কাকে বলে। আপোষহীনভাবে সংগ্রাম করে কিভাবে দাবি আদায় করতে হয়। আজকে যারা ১৪ বছর ধরে দেশকে লুণ্ঠন করে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন। সরকারের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামকে ভয় পায় এদেশে জনগণকে ভয় পায়। এজন্য দেখবেন এখন তাদের কথাবার্তা উলটপালট। ধারাবাহিকভাবে সঠিক কথা বলতে পারে না। তারা ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা কথা বলে বলে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। এদেশের মানুষের অধিকার যেভাবে তারা নষ্ট করেছে। ঠিক তেমনি এদেশে তারা লুণ্ঠন করেছে। বিদেশে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা পাচার করে দেশে এখন দুর্ভিক্ষের অবস্থা তৈরী করেছে। শুধু এমপি মন্ত্রীরা নয়, ড্রাইভার থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন ও পাচার করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। আজকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্য মূল্যের উধ্বগতি করে মানুষের গণজীবনকে তারা বিপন্ন করে ফেলেছে। অথচ তারা আজকে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। আজকে তারা গণতন্ত্র দিতে ভয় পায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে এ দেশের জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাদের জনসভায় এখন আর নেতাকর্মীরাও আসেনা। এখন তারা ভাড়া করে গার্মেন্টসের কর্মী ও দিন মজুরদেরকে। খাবারের টাকা দেয় তারপরও তাদেরকে ধরে রাখতে পারে না। মঞ্চ খালি হয়ে যায় এবং আশপাশে শূন্য হয়ে যায়। কারণ কি এর কারণ হচ্ছে মানুষ আজকে আর তাদেরকে বিশ্বাস করে না এবং পছন্দ করে না। চায় তাদের পরিবর্তন এ পরিবর্তনের কারণ অপকর্ম। কর্মের জন্য আওয়ামী লীগকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে আপনারা জানেন। এ সরকার বিরোধী দলকে ডাকতেছে আপনার আসন নির্বাচন করুন। আপনারা নির্বাচনে আসুন না আসলে আপনার এই হয়ে যাবেন সেই হয়ে যাবেন। তারা এইটা জানে যদি নির্বাচনে আসি আর যদি জনগণ ভোট দেয়। তাহলে তারা আর অবস্থায় নির্বাচিত হতে পারবে না এবং ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এর আগেও তারা দুটি নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করব। আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।
তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে দিনে ভোট দিয়েছেন আরেকবার রাতে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসেন। আজকে শুধু আমরা না যারা গণতান্ত্রকে বিশ্বাস করে কেউ আর তাদের নির্বাচনকে বিশ্বাস করে না। বিশ্বাস ভঙ্গের দায়ে তারা এখন মানুষের কাছে ঠকবাজ ও ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে পরিচিত। তাদের এই পরিস্থিতি দেখে স্বৈরাশাসকতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দেশের লুণ্ঠন ও দুরবস্থা দেখে দেখে আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমান সুদূর প্রবাসে থেকেও দেশের গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করার বিএনপির পক্ষ থেকে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। এই ১০ দফা দাবি বিএনপি দাবিনা এদেশের জনগণের দাবি। দেশের মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের দাবি। রাষ্ট্রকে মেরামত করতে ২৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। আজকে আমাদের দল থেকে যেকোনো কর্মসূচিতে দেওয়া হয় সেখানেই হাজার হাজার ও লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে সেখানে সমবেত হয়। তারা এসব দেখে ভীত। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার গায়েবী মামলা দিয়েছে।তারা এসব দেখে ভীত। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার গায়েবী মামলা দিয়েছে। নেতাকর্মীদেরকে হত্যা , গুম খুন করেছে। যখনই বিএনপি’র কোন কর্মসূচিতে তার ৫-৭ দিন আগে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি- ধামকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় । এতো হুমকি-ধামকির ও ভয়ভীতি দেখানোর পরে যে কোন কর্মসূচিতে বিএনপির হাজার হাজার মানুষ এসে জড়ো হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম টিটু, মাশুকুল ইসলাম রাজিব, লুৎফর রহমান খোকা, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ইউসুফ আলী ভূঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান হুমায়ূন, সদস্য সচিব বাছির উদ্দিন বাচ্চু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল হাই রাজু, বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন, নজরুল ইসলাম মাদবর, আড়াইহাজার পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ লিটন, সোনারগাঁও পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব মোতালেব মিয়া কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সহিদুর রহমান স্বপন, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ডা. শাহীন মিয়া, সদস্য সচিব মো. কায়সার রিফাত, জেলা মহিলা দলের সাবেক সভানেত্রী নুর নাহার বেগম, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রহিমা শরীফ মায়া, জেলা জাসাসের সভাপতি সিরাজুল হক, জেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ জাকারিয়াসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।