নারায়ণগঞ্জ মেইল: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও সকল পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং ভোলায় ছাত্রদলের সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার ( ১১ আগষ্ট ) দুপুর দুইটায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে পল্টনের আয়োজিত বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে বিশাল মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলের সামনেই ছিলেন আড়াইহাজার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদ। জেলা বিএনপির ব্যানারে নজরুল ইসলাম আজাদকে দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেই সাথে শংকাও প্রকাশ করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের মতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নব্য কিং মেকার নজরুল ইসলাম আজাদ হচ্ছেন কমিটি বাণিজ্যের মূল হোতা। তাই আগামীতে জেলা বিএনপির কমিটিতে অযোগ্যদের স্থান করে দিতেই নজরুল ইসলাম আজাদের জেলা বিএনপির ব্যানারে অংশগ্রহণ বলে মনে করছেন তারা।
তৃণমূল মনে করে, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হতো প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জ। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সবসময়ই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সে চিত্র এখন অনেকটাই মলিন হয়ে পরছে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সেই আগ্রসী রূপ এখন আর নেই। কমিটি বানিজ্য আর দ্বন্দ কোন্দলের কারনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি এখন খাদের কিনারে পৌছে গিয়েছে। আর এ দুরবস্থার জন্যে নেতাকর্মীরা দায়ী করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নব্য কিংমেকার নজরুল ইসলাম আজাদকে। আজাদের ডুয়েল পলিটিক্সের শিকার হয়ে মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন আর সুবিধাবাদীরা তাদের জায়গা দখল করছে। ফলে দুর্বল হয়ে পরছে দলের সাংগঠনিক কাঠামো, ভেঙ্গে পরছে চেইন অব কমান্ড।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সাথে পরিচয় ছিল নজরুল ইসলাম আজাদের। কোকোর মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী শর্মিলি রহমানের সাথে ঘনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন ধুরন্ধর আজাদ। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনে নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে এখন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম নজরুল ইসলাম আজাদ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের বাড়ি আড়াইহাজার হলেও সমগ্র নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন তিনি। আর এ কারণে নারায়ণগঞ্জে যেখানেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি হচ্ছে, সেখানেই কিং মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন আজাদ। আজাদের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাচ্ছে না বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ কোনো সংগঠনের ইউনিট কমিটিও। ফলে সর্বত্র এখন আজাদ আতঙ্ক বিরাজ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে নজরুল ইসলাম আজাদের পরিচয় কমিটি ম্যাকার হিসেবে। বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠনের সময় হলেই নজরুল ইসলাম আজাদ দোকান খুলে বসেন এবং বিভিন্ন দামে পদ-পদবী কেনাবেচা করেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এজন্য কমিটি বাণিজ্যের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি নিয়ে একাধিকবার আজাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিলো বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা, করেছিল আজাদকে লাঞ্ছিত।
এদিকে নজরুল ইসলাম আজাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে সরকারি দলের উপর মহলেও। যে কারণে আজাদের কথার বাইরে গেলে প্রশাসন দিয়ে হেনস্তা করান বিএনপি নেতাকর্মীদের- এমন গুঞ্জন রয়েছে পুরো নারায়ণগঞ্জ জুড়ে। আর তাই আজাদের পছন্দমত লোকজনকেই দেয়া হচ্ছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আবার যারা কমিটিতে আসতে চাইছেন তারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন আজাদের দরবারে। কমিটি বাণিজ্য আগে গোপনে হলেও আজাদের কল্যাণে না এখন ওপেন সিক্রেট। আজাদ খুশি থাকলে কমিটিতে পদ মিলবে, তানাহলে মিলবে না।
নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে তার নিজ এলাকা আড়াইহাজারে বিক্ষোভ হয়েছে। নেতাকর্মীরা তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। এমনকি নজরুল ইসলাম আজাদকে আড়াইহাজারে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। আর তাই এ ধরনের একজন মুখোশধারী নেতাকে জেলা বিএনপির ব্যানারে মিছিল করতে দেখে ক্ষোভ দানা বাঁধছে তৃণমূলের মনে। তারা কমিটি বাণিজ্যের হোতা নজরুল ইসলাম আজাদকে জেলা বিএনপির ব্যানারে দেখতে চায় না।