জেলা বিএনপিকে বয়কটের ঘোষনা মান্নানের

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিকে বয়কটের ঘোষনা দিয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। জেলা বিএনপি আয়োজিত কোনো কর্মসূচিতে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি ও এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আর অংশ নেবেনা বলেও জানিয়েছেন তিনি। জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে গেলে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সঠিক মূল্যায়ন করা হয়না বলে অভিযোগ মান্নানের। তার নির্দেশেই গত ২৭ মে তারিখে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী অংশগ্রহন করেনি বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে গেলে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়না। তাই আমি সবাইকে না করেছি জেলা ব্এিনপির কর্মসূচিতে যেতে। আমরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে শত শত লোক নিয়ে যাবো আর সেখানে ওয়ানম্যান শো জেলার নেতারা মাদবরি করবেন, তা হতে পারেনা। আমরা জেলার চেয়ে বেশি লোক নিয়ে থানায় কর্মসূচি করবো। এ বিষয়ে সেন্ট্রালকে কোনো জবাব দিতে হলে আমি দেবো কিন্তু জেলার কর্মসূচিতে আর সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরা যাবেনা।

আজহারুল ইসলাম মান্নানের এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক মনিরুল ইসলাম রবি নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই তাই কোনো মন্তব্য করতে পারছিনা। যদি কোনো অভিযোগ পাই তাহলে উনার সাথে বসে সমাধানের চেষ্টা করবো।

তবে সরেজমিনে জেলা বিএনপির গত কয়েকটি পোগ্রাম কাভার করে দেখা গেছে সোনারগাঁ বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম টিটু ও সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়াও পৌর বিএনপির সভাপতি সেক্রেটারী ও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মজিবর রহমানকেও বক্তব্য দেওয়য়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সোনারগাঁ থেকে পাঁচজনকে মঞ্চে দাড়িয়ে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি ও অংগ সংগঠনে একক কতৃত্ব স্থাপনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আজহারুল ্ইসলাম মান্নান। সোনারগাঁয়ে মান্নান বিরোধী সকল মতকে মাইনাস করে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যে দলের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ অনেক নেতাকে তিনি বাদ দিয়ে তার পছন্দ মতো লোকদের দিয়ে কমিটি সাজাচ্ছেন। এক্ষেত্রে অনেক বিতর্কিত লোককে তিনি কমিটির নেতৃত্বে নিয়ে আসছেন। সম্মেলনের নামে আইওয়াশ করে তার নিজের লোকদের দিয়েই কমিটি গঠন করছেন। তার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করেছেন যে মোশারফ হোসেনকে তার বিরুদ্ধে সোনারগাঁ বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগের শেষ নেই। বিগত সময়ে সরকারী দল আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্যাতন করার অভিেেযাগ রয়েছে মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে। তাছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষেও ভোট চেয়েছেন এই মোশারফ। গত এক যুগ সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে দেখা মিলেনি মোশারফের কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতাদের সাথে তাকে দেখা যেতো প্রায়শই।

এছাড়াও তার কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি করা হয়েছে নজরুল ইসলাম টিটুকে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে এই টিটুও একজন বিতর্কিত নেতা। তার পরিবারের সবাই স্থানীয় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত। তার ছেলে কাজী লিটু জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলো। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতেও এ ধরনের বিতর্কিত লোকদেরই নেতৃত্ব দিয়েছেন মান্নান।

এমনকি বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বেও তার নিজের মন মতো লোক বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিলের নামেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন মান্নান। গত ১৫ এপ্রিল সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের ব্যানারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে মান্নান অনুসারীরা। অথচ সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না উপজেলা যুবদলের আহবায়ক সহিদুর রহমান স্বপনসহ কমিটির বেশীরভাগ নেতা। মান্নানের গৃহপালিত যুবদল নেতা উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ ভূইয়াকে সভাপতি করে আয়োজন করা হয় ইফতার মাহফিলের। সংগঠনের আহবায়ককে না জানিয়ে কমিটির বেশীরভাগ সদস্যকে অনুপস্থিত রেখে সে সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠান আয়োজন পুরোপুরি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। অথচ সকল নিয়ম কানুনকে বুুড়ো আঙ্গুল দেখান মান্নান।

গত ১২ এপ্রিল আয়োজন করা হয় সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ইফতার মাহফিল অথচ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনের আহবায়ক সালাউদ্দিন সালু এবং সদস্য সচিব নাসিরউদ্দিনসহ কমিটির সিংহভাগ নেতা। একটি সংগঠনের আহবায়ক আর সদস্য সচিবকে ছাড়া সে সংগঠনের ব্যানারে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায় কিনা সে প্রশ্ন ছিলো সোনারগাঁয়ের সর্বত্র কিন্তুু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে যাওয়া আজহারুল ইসলাম মান্নানের। অনিয়মই যেনো তার কাছে নিয়মে পরিনত হয়েছে।

একইভাবে গত ১১ এপ্রিল আয়োজন করা হয় সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল য়েখানে উপস্থিত ছিলেন না সংগঠনের আহবায়ক জাকারিয়া। আহবায়ককে না জানিয়েই শুধুমাত্র নিজের লোক দিয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন মান্নান। ছাত্রদলের এ আয়োজন নিয়েও সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে সোনারগাঁ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সর্বত্র। কিন্তু তাতে কোনো মাথা ব্যাথা নেই মান্নানের। তিনি শুধু সোনারগাঁ বিএনপিতে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত রয়েছেন। কোনো নিয়ম কানুনের ধার ধারছেন না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ