দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যুবদলের পাল্টা কমিটি!

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের বিদ্রোহী গ্রুপ নামে পরিচিত খোরশেদ অনুসারীরা এবার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির বিপরীতে পাল্টা কমিটি ঘোষনা করতে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার মাজহারুল ইসলাম জোসেফকে সভাপতি ও রানা মুজিবকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর যুবদলের বিদ্রোহী কমিটি ঘোষনা করা হতে পারে। এ লক্ষ্যে মঙ্গলবার ২৯ মার্চ শহরের উকিলপাড়ার একটি বাসায় গোঁপন মিটিংও করেছেন তারা এবং বিদ্রোহী কমিটির খসড়া চুড়ান্ত করে ফেলেছেন।

কমিটি করার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কবে নাগাদ তা ঘোষনা হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারেননি বিদ্রোহী কমিটির নেতৃত্বে থাকা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। এ বিষয়ে জানতে চাইতে তিনি নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, কমিটি করার বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপ আছে তাই এ বিষয়ে গতকাল আমরা বসেছিলাম। আমরা কালকে আবারো বসবো, আমি চাইছি সকলের সাথে সমন্বয় করে একটা সুষ্ঠ সমাধানে আসতে। তাছাড়া দল , কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সর্বোপরী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়টিও ভাবতে হবে। দলের এই দু:সময়ে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেইতো চলবে না। সকল দিক বিবেচনা করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে পাল্টা কমিটি ঘোষনা করা হলে তা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হবে কিনা জানতে চাইলে জোসেফ বলেন, তাতো হবেই। তাইতো সকল দিক বিবেচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক মমতাজউদ্দিন মন্তু নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, বিদ্রোহী বলতে কোনো কথা নেই, বিদ্রোহী মানে বিশৃঙ্খলাকারী। যুবদলে বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো স্থান নেই।

জানা যায়, গত বছরের ১৬ নভেম্বর মমতাজউদ্দিন মন্তুকে আহবায়ক এবং মনিরুল ইসলাম সজলকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভ কমিটি ঘোষনা করেছিলো কেন্দ্রীয় যুবদল। এই কমিটি ঘোষনার পর থেকেই সাবেক কমিটির সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের অনুসারীরা ক্ষোভে ফেটে পরেন এবং কমিটির বিরোধীতা শুরু করে দেন। এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে জঘন্য ভাষায় বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে নিজেদের বিদ্রোহী যুবদল নামে মিটিং মিছিল চালিয়ে যেতে থাকেন। আর এ গ্রুপের নেতৃত্বে যুক্ত হন এক সময়ের ছাত্রদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জোসেফ যিনি গত প্রায় ১৫ বছর যাবত রাজনীতিতে ছিলেন নিস্ক্রিয়।

এদিকে খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বিগত প্রায় ১০ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটিতে একাধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলেন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। নিজের অনুগত লোকদের দিয়ে কমিটি করতেন এবং ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিতেন খোরশেদ। গুঞ্জন আছে নিজের কর্মচারী দারোয়ান মালি ড্রাইভার আর চাকর বাকরদের কমিটিতে পদ দিয়েছেন তিনি অথচ রাজপথের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে করেছেন অবহেলা।

তাছাড়া মহানগর যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিশাল বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে খোরশেদের বিরুদ্ধে। সিদ্ধিরগঞ্জের কমিটির জন্য মমতাজউদ্দীন মন্তুর কাছ থেকে ৫ লাখ এবং বন্দরের আহমদ আলীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয়ায় ঘটনতো পুরোপুরি ওপেন সিক্রেট। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময় দশ হাজার বিশ হাজার করে যার কাছ থেকে যেমন পেরেছেন তেমনটাই নিয়েছেন খোরশেদ।

মহামারী করোনা কালীন সময়ে খোরশেদ নানা জনহিতকর কাজ করেছেন কিন্তু কোথাও যুবদলের ব্যানার ব্যবহার করেননি। তিনি টিম খোরশেদ নাম দিয়ে নিজেকে প্রচার করেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কিংবা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে কোথাও কোনো কর্মসূচি পালন করেননি অথচ দিনের পর দিন নিজের প্রচার চালানোর জন্য যুব দলের নেতাকর্মীদেরকে ব্যবহার করেছেন।

সর্বশেষ খোরশেদ যুবদলে নিজের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য এমন একজনকে আহ্বায়ক হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন যাকে গত ১৫ বছরে একদিনও রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি। একসময় ছাত্রদলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জোসেফকে ১৫ বছর পর রাজপথে নামিয়ে নিজ বলয়ে যুবদলের কমিটি রাখতে চেয়েছিলেন খোরশেদ। কিন্তু নিষ্ক্রিয় জোসেফকে কোনভাবেই মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে এত সব অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছিল কেন্দ্রীয় যুবদলের টেবিলে। তার কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছিল কেন তিনি বিএনপি কিংবা যুবদলকে কোথাও হাইলাইট না করে নিজের প্রচার চালিয়েছেন। এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি খোরশেদ। তাছাড়া দিনের-পর-দিন মহানগর যুবদলে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার খেসারত হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবদলের গুড লিস্ট থেকে নাম কাটা যায় খোরশেদের। যার ফলাফল নতুন ঘোষিত কমিটিতে খোরশেদ অনুসারী কাউকেইই রাখা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে সভাপতি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। কমিটির বাকী সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহ সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সাধারণ সম্পাদক মমতাজউদ্দিন মন্তু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু।

আংশিক কমিটি ঘোষনার ৫ মাস পর খোরশেদকেই সভাপতি রেখে ২০১ সদস্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাতিল করে দেয়া হয় মহানগর যুবদলের কমিটি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ