নিহত কিশোরীর ফিরে আসা, ইমেজ রক্ষায় পুলিশের তদন্ত কমিটি গঠন

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে ধর্ষন ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তির দেড় মাস পরে জীবিত ফিরে আসা কিশোরির ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। আর এ ঘটনা অনুসন্ধান করে প্রকৃত রহস্য খুঁজে বের করতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) কে প্রধাণ করে গঠিত তদন্ত কমিটির বাকী দুই সদস্য হলেন সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) ও ডিআইও-১।


জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১৪) গণধর্ষণের পর হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ফেলে দেয়ার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে প্রেমিকসহ ৩ জন । ইতমধ্যে সে আসামীরা কারাভোগও করছে।তবে ঘটনার দেড়মাস পর থানায় জীবিত হাজির হল মৃত ধারণা করা সেই কিশোরী। রবিবার (২৩ আগস্ট) এমন ঘটনায় মেয়েকে জীবিত পেয়ে খুশিতে আত্মহারা তার বাবা মা।


এর আগে গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিল একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর সেই কিশোরী। অনেক খোজাখুজির পর মেয়েকে না পেয়ে গত ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন। তার বাবা পেশায় একজন পোশাক শ্রমিক। স্বামীর অভাবের সংসারে সুখের রেখা টানতে সেলাই মেশিনে বাসায় বসে কাজ করতেন মা রেখা আক্তার। পরিবারে কোন ছেলে না থাকলেও দুইটি মেয়েকেই লেখাপড়া করিয়ে প্রকৃত মানুষ গড়াই ছিল তাদের লক্ষ্য। বড় মেয়ে এবার এসএসসি পাশ করেছে। আর সেই ছোট মেয়েটি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তবে নিছক ঘটনায় অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছিল তার পরিবারে।
ওই সময় মেয়েকে হারিয়ে মামলায় সেই কিশোরীর বাবা জাহাঙ্গীর উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ তার মেয়েকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে বিভিন্ন সময় প্রেমের প্রস্তাব দিত। এতে বাধা দিলে মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয়। গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ফোনে ঠিকানা দিলে তার মেয়ে সেই ঠিকানায় যায়। পরে তাকে গাড়ি দিয়ে অপহরণ করে আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। এমন সন্দিহানের পর থেকেই তার মেয়ের কোন সন্ধান পায়নি তার পরিবার।


এ মামলার পর পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েটির মায়ের মোবাইলের কললিস্ট চেক করে রকিবের সন্ধান পায় পুলিশ। রকিবের মোবাইল নাম্বার দিয়ে আব্দুল্লাহ সে কিশোরীর সাথে যোগাযোগ করতো। ঘটনার দিনও ওই নাম্বার দিয়ে কল করে আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় রকিব, আব্দুল্লাহ ও নৌকার মাঝি খলিলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


আরও জানা গেছে, গত ৯ আগস্ট দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী জিসাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। এমন নৃশংস ঘটনার বিবরণ দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার তিন আসামি আব্দুল্লাহ (২২), রকিব (১৯) ও নৌকার মাঝি খলিল (৩৬)।
এদিকে রবিবার (২৩ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার সময় বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকার একটি মোবাইল ফোনের দোকান থেকে ছোট মেয়ের ফোন পায় কিশোরীর মা রেখা আক্তার। তখন মেয়ে জানায় সে বেঁচে আছে, ভালো আছে। তবে কিছু টাকার প্রয়োজন। এমন কথায় টাকা পাঠিয়ে উল্লেখিত এলাকায় দোকানটিতে ছুটে যান তার মা-বাবা। এছাড়াও এ অবিশ্বাস্য ঘটনায় মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে বিষয়টি অবহিত করে। এরপর তার বাবা-মা ছুটে যায় বন্দর থানাধীণ নবীগঞ্জ এলাকার সেই মোবাইল ফোনের দোকানটিতে। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর না ফিরার দেশে চলে যাওয়া ধারণা করা মেয়েকে চোখের সামনে দেখে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তার মা ও বাবা।

সেই কিশোরীর মা রেখা আক্তার আরো জানায়, আমি চাইনা কোন পরিবার এমন শাস্তি ভোগ করুক। আমি আমার মেয়েকে একবার দেখার জন্য দেড়মাস ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। আমার মেয়ে কি আসলেই মরে গেছে না বেঁচে আছে। আসামীরা জবানবন্দি দিলেও আমার মেয়ের কোন হদিস না পেয়ে হতাশায় ভোগছিলাম। আজ মেয়েকে পেয়ে আমি অনেক খুশি। আমি আমার মেয়েকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে চাই। আমি আর আদালতে দাড়াতে চাইনা। থানায় এসে ঘুরতে চাইনা।
অন্যদিকে সূত্রে জানা যায়, বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় ইকবাল ওরফে ইব্রাহিম নামে একটি ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গত দেড়মাস ধরে একই সাথে বসবাস করছে সে কিশোরী। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামীম বলেন, ইকবাল ও সে কিশোরী একে অপরের পরিচিত ছিলো। গ্রেফতারকৃত তিন আসামী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলো। রবিবার তার সন্ধান পাওয়া যায় সে ইকবাল নামের এক যুবকের সাথে ছিলো। পুলিশ ইকবালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে মামলার তদন্তকারী অফিসার শামীম আল মামুন অভিযুক্তদের জবানবন্দি প্রসঙ্গে জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ পাক্কারোড এলাকার গার্মেন্ট শ্রমিক জাহাঙ্গীরের ছোট মেয়ের সঙ্গে বখাটে আবদুল্লাহ তার বন্ধু ইজিবাইক চালক রকিবের মোবাইল দিয়ে ৩ মাস প্রেম করেছে। ঘটনার দিন ৪ জুলাই ঘোরাফেরার কথা বলে তাকে ইস্পাহানি ঘাটে ডেকে নেয় আবদুল্লাহ। এরপর বন্দরের বিভিন্ন স্থানে রকিবের ইজিবাইক দিয়ে ঘোরাফেরা করে।পরে রাত ৮টায় ইস্পাহানি ঘাটে এসে খলিলুর রহমানের নৌকায় উঠে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে নৌকার মধ্যেই আবদুল্লাহ প্রথমে কিশোরীকে ধর্ষণ করে। এরপর মাঝি খলিলুর রহমানও জোর করে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এতে সে কিশোরী বাকবিতণ্ডা করলে ক্ষিপ্ত হয়ে খলিলুর রহমান সেই কিশোরীর দুই পা চেপে ধরে আর আবদুল্লাহ গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর দুইজনে মিলে সেই ৫ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী কিশোরীকে শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে ফেলে দেয়

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ