মামলায় ঝুলে আছে মহানগর বিএনপির কমিটি

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি জেলা বিএনপির অন্তর্ভূক্ত করায় ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি গুলজার হোসেন খান। সে মামলায় বিএনপির মহাসচিব মীর্জ ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বিবাদী করা হয়েছিলো। আদালত মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মহানগর বিএনপির সকল কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন।

এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি এখন নেতাকর্মীদের মাঝে। কিন্তু আদালতের মামলা থাকায় তা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। বর্তমান কমিটির সভাপতি এড. আবুল কালাম দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতিতে প্রায় নিস্ক্রিয়। বছরের বেশীরভাগ সময়ই তিনি অসুস্থ থাকেন। আর সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারনে বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় মহানগর বিএনপির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে দ্বিতীয় আর তৃতীয় সারির নেতাদের দিয়ে। আর তাই অবিলম্বে আদালতে মামলা নিস্পত্তি করে কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী গুলজার হোসেন খান নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ি সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে মহানগর কমিটি গঠন হওয়ার কথা। বিএনপির সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এই নিয়ম পালন করছে। কিন্তু মূল দল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রীকভাবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ডকে মহানগরের অধীনে না দিয়ে জেলা বিএনপির অধীনে দিতে চাইছে। তাই আমরা ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের সরনাপন্ন হয়েছি। কিছুদিন আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি ঘোষনা করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। আমরা এই এই কমিটিকে অবৈধ দাবি করে এই কমিটির সকল কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেছি। সোমবার ১৪ মার্চ এ বিষয়ে শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চাই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি মহানগরের অধীনে থাকুক।

আদালত সূত্রে জানাগেছে, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ১০নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলজার খান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক (সাবেক পৌর এলাকা) বিএনপি নেতা নূরে আলম শিকদার বাদী হয়ে একই আদালতে মামলাটি করেন। মামলার শুনানি শেষে পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে কেন কমিটি অবৈধ হবে না জানিয়ে বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন আদালত। পরদিন ১৩ নভেম্বর বুধবার আদালত থেকে এ সংক্রান্ত নোটিশ বিবাদীদের হাতে পৌঁছানো হয়। এ বিষয়ে আদালতে বিবাদীরা জবাব দেন।

এরপর গত ১৯ নভেম্বর বিরোধীয় কমিটির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদালতের কাছে কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করেন বাদী গোলজার হোসেন। ওই আবেদনের বিষয়ে ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আদালতে কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন।

জানা যায়, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৪ এর (ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা/থানা, পৌরসভা, মহানগর, জেলা- এই শব্দগুলো বাংলাদেশ সরকার/ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দেওয়া অর্থই বুঝাবে।’ অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত এসব এলাকা নিয়েই বিএনপির কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মহানগরীর মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত এলাকা জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেখানে মহানগর কমিটিতে রাখা হয়নি। আর সিটি কর্পোরেশন গঠন করেন সরকার এবং এখানে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করেন। ফলে মহানগর বিএনপির কমিটি সুস্পষ্টভাবে দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভুত কমিটি গঠন করা হয়েছে মর্মে বাদী পক্ষের আইনজীবী আদালতে উপস্থাপন করেন।

শুনানিতে বিবাদী পক্ষ স্থগিতের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান। এর আগে আদালতে মামলার বাদী গোলজার হোসেন শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন করেন।

জানা গেছে, দলের গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করায় মামলায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে মোকাবেলা বিবাদী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামালকে মুল বিবাদী করা হয়। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সীমানা ও গঠনতন্ত্র মানা হয়নি বলেও অভিযোগ করে ওই মামলা করা হয়।

মামলা দায়েরের পর বাদী গোলজার হোসেন খান অভিযোগ করেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটিতে অল্প ক’জন নেতা স্থান পেলেও মহানগরের কমিটিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোর্রেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত ১০টি ওয়ার্ডের কোনো নেতাই পদ পদবি পাননি। এই ১০টি ওয়ার্ডের মূল দলের নেতাকর্মীরা দলীয় পদ পদবির ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হচ্ছেন। দলের জন্য প্রাণপন কাজ করলেও দলের নেতারা তাদের কোনো পরিচয় দিচ্ছেন না। আমাদেরকে পদ পদবি যেন দেয়া হয় সেজন্যই এ মামলা। আমরা তো জাগোদল থেকেই যুক্ত বিএনপির সঙ্গে।

অন্যদিকে আরও জানাগেছে, ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ মহানগর আংশিক কমিটি গঠন করা হয় এবং একইদিন কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সভাপতি ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটি গঠনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ডকে জেলা বিএনপির সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড রয়েছে। জেলা বিএনপির আওতাধীন এলাকা বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন, সদর মডেল থানার আরও দুটি ইউনিয়নকে মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ওই সময় স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন- জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনভিত্তিক সুবিধার বিষয়টি হিসেবে করেই দুটি কমিটি গঠন করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ