নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সরকারী দল আওয়ামীলীগের রাজনীতি। দুই প্রভাবশালী নেতা সাংসদ একেএম শামীম ওসমান ও সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর পাল্টাপাল্টি আক্রমনাত্মক বক্তব্যের রেশ ছড়িয়ে পরছে তাদের অনুসারিদের মাঝে। ফলে পুরানো সেই কোন্দল আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে গুছিয়ে উঠতে শুরু করেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।
ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, পরপর তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। দীর্ঘদিন যাবত সরকারে থাকলেও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব এখনও নিরসন করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে দুই শীর্ষ নেতা সাংসদ একেএম শামীম ওসমান ও নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নারায়ণগঞ্জের পুরো আওয়ামীলীগকে রীতিমত দ্বিখন্ডিত করে রেখেছে। উত্তর মেরু ও দক্ষিন মেরু নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। সাংসদ শামীম ওসমান পপন্থীদের উত্তর মেরু ও মেয়র আইভী পন্থীদের দক্ষিন মেরু নামে অভিহিত করা হয় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে। এই মেরুকরনের ফলে একই দলের রাজনীতি করেও তারা এখন একে অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। উভয় গ্রুপের নেতাদের বক্তব্যে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা থাকে সব সময়। সেই ঘায়েল করার বক্তব্য মাঝে মাঝে এতটাই অআক্রমনাত্মক হয়ে উঠে যা পুরো নারায়ণগঞ্জের টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়। অতি সম্প্রতি সেরকমই আরেকটি আলোচিত সমালোচিত ঘটনার স্বাক্ষি হয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী।
গত ৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সরকারী তোলারাম কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে ইঙ্গিত করে বলেন, রাজনীতি মানে এখন ব্যবসা হয়ে গেছে, ধান্ধা হয়ে গেছে। শত কোটি টাকার বাড়ি বানায় অথচ ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে ১০ লাখ টাকাও নাই। এনবিআর কি করে, দুদক নামে কোনো বস্তু আছে তাও আমি জানি না। কই তদন্ততো দেখি না। আমি মুখ খুলতে চাইনা, সময় হলে সব বলবো।
সাংসদ শামীম ওসমানের এই ব্কব্যের কড়া জবাবও দেন সিটি মেয়র আইভী। গত ৭ মার্চ বিকেলে শেখ রাসেল নগর পার্কে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আয়োজনে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৯ বছর স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের এক পর্যায়ে শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে আইভী বলেন, আমি আমার বাবার সম্পদ বিক্রি করে বাড়ি নির্মাণ করেছি, আপনার মত চুরি করে বাড়ি বানাই নাই। মেয়র আইভী আরো বলেছিলেন, তোলারাম কলেজে ফরম ফিলাপ করতে পারেন নাই টাকার জন্য। আজকে কোটি কোটি টাকার মালিক। জাহাজ আছে ১৬-১৭টা। এই জাহাজের মালিক রাতারাতি কিভাবে হলেন। কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন। সেটাতো নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে চায়। মেয়র আইভী বলেন, শত শত কোটি টাকা পাচার করে দিয়েছেন দুবাই মালেশিয়াতে।
তাদের দুইজনের এরূপ উত্তপ্ত বক্তব্যে ফের সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহলে। বছরের পর বছর যাবত চলে আসা এই দুই পরিবারের বিরোধ এভাবেই তারা চাঙ্গা রাখায় দলের নেতাকর্মীদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পরছে বলে অভিমত তাদের। দীর্ঘদিন সরকারী দলে থাকায় এখনই এ ধরনের মত পার্তক্য নিরসন করে ফেলা উচিত বলেও মনে করেন সকলে।
অপরদিকে ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে বিএনপি কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্ষমতার মুখ আর দেখা হয়নি। এ দীর্ঘ সময়ে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের মামলা হামলায় বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী জর্জরিত। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরাও জেল জুলুম মাথায় নিয়েই আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছে দীর্ঘদিন। এ সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মাঝে নেতৃত্ব নিয়ে প্রতিযোগিতা চলতে চলতে তা দ্বন্দ আর কোন্দলে রূপ নেয়। ফলে দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও তা প্রকট আকার ধারন করতে থাকে।
এদিকে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও এবার গণদাবিতে রাজপথে নেমেছে বিএনপি। দেশে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে দলটি। সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি শহরের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেছে। এসব কর্মসূচিতে দলের শীর্ষ পর্যায়ের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন। আর নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও নিজেদের মাঝে সকল বিভেদ আর বিভক্তি ভুলে গিয়ে একই মঞ্চে উপবিষ্ট হয়েছেন। যা দেখে উজ্জীতি হয়ে উঠেছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের মতে এই ধারা অব্যহত রাখতে পারলে ভবিষ্যতে সরকার পতনের আন্দোলনেও ঐক্যবদ্ধ রূপ প্রকাশ পাবে এবং নারায়ণগঞ্জ থেকেই তার সূচনা হবে বলে বিশ্বাস তৃণমূলের।