নারায়ণগঞ্জ মেইল: শুক্রবার রাতেই দেশে ফিরছেন মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার বাংলাদেশের নাগরিক রায়হান কবীর। স্থানীয় সময় রাত ১১ টায় মালয়েশিয়া পুলিশ তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তার পৌঁছানোর কথা।
এর আগে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমকে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দিজাইমি দাউদ জানিয়েছেন রায়হানকে শুক্রবার রাত ৯ টায় বিমানবন্দরে নেওয়া হবে।
রায়হানের আইনজীবি সুমিতা শান্তিনি কিষনা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, শুক্রবার রাতে পুত্রজায়া ইমিগ্রেশন অফিস থেকে রায়হানকে সরাসরি বিমানবন্দরে নেওয়া হবে। এর আগে রায়হানের করোনা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে তার নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় বিমানের টিকেট করা হয়। বিমানবন্দরে পাঠানোর আগে রায়হানের জিনিসপত্র ব্যাগ সেখানে আনা হয়।
এমন খবরের পর ছেলের গ্রেফতারের খবর শুনে দিন-রাত কেঁদেছেন রাশিদা বেগম। এবারও কাঁদলেন। তবে এই কান্না আনন্দের। দীর্ঘদিন পর ছেলে ফিরছে মায়ের কোলে। বললেন, ‘কতদিন পর ছেলে ফিরতেছে। এই আনন্দ বলে বুঝাতে পারবো না।’
মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জের তরুণ রায়হান কবির অবশেষে দেশে ফিরছেন। স্থানীয় সময় রাত ১১টায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি রওনা হবেন বলে জানা গেছে। রাত ১টার দিকে ঢাকায় নামার কথা রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রায়হান কবিরের বাবা পোশাক শ্রমিক শাহ্ আলম সংবাদকে বলেন, ‘এয়ারপোর্টের দিকে রওয়ানা দিয়েছে। রাতের ফ্লাইটে আসবে। আমরা এয়ারপোর্টে যাবো তাকে নিতে। প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভোরের মধ্যেই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসবো।’
জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরন নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গত ২৪ জুলায় বাংলাদেশি নাগরিক রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করে মালয়েশিয়া পুলিশ। টানা ১৪ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর গত ৬ আগস্ট পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশ আরো ১৪ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বুধবার (১৯ আগস্ট) তার রিমান্ড শেষ হয়।
লকডাউন চলাকালে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী শ্রমিকদের দেশটির সরকারের নীপিড়নমূলক আচরনের কথা গত ৩ জুলাই আন্তজার্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে জানান। আল জাজিরা তাদের ইংরেজি অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল লকডআপ ইন মালয়েশিয়ান লকডাউন-১০১ ইস্ট শীর্ষক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়। আল- জাজিরায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালে অভিবাসীদের আটক ও জেলে পাঠানোর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে বক্তব্য দেন রায়হান কবীর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ তাকে গত ২৪ জুলাই গ্রেফতার করে।
অভিবাসন নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করা সংগঠনগুলো ওই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং রায়হানের মুক্তির দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তারা যৌথ চিঠি লেখেন। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশে ২১ সংগঠনসহ আন্তজার্তিক বিভিন্ন সংগঠন হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এই গ্রেফতারের নিন্দা জানায়।
গ্রেফতারের আগে রায়হান এক ভিডিও বার্তায়ও বলেছিলেন, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। তিনি যা বলেছেন তা মিথ্যা নয়। প্রবাসীদের ওপর চরম বৈষম্যও নীপিড়নের কথা তিনি বলেছেন।
তিনি আরও বলেছিলেন, বিদেশে থাকা সকল প্রবাসী কর্মী ভালো থাকুন এবং সম্মান নিয়ে বাস করুন। ওই ভিডিওতে তিনি বাংলাদেশের সকল স্তরের নাগরিককে পাশে চেয়েছিলেন।