নারায়ণগঞ্জ মেইল: জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক প্রয়াত আবুল জাহের চেহলাম উপলক্ষ্যে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তাঁর স্মৃতিচারন করতে গিয়ে কেঁদেছেন এমপি সেলিম ওসমান। তিনি বলেছেন এই প্রথম আমি বন্দরে আসলাম আমার জাহের ভাই আমার পাশে নাই। আজ আসার পথে কেউ আমাকে ফোন করে খোঁজ নেয়নি ভাই আপনি কোথায় আছেন, ওমুক রাস্তা দিয়ে আসলে তাড়াতাড়ি আসতে পারবেন। সবশেষ যখন বন্দরে উনার জানাজা দিতে আসলাম তখনও উনি মৃত লাশ হয়ে আমার সামনেই ছিলেন। বলে কেঁদে ফেলেন এমপি সেলিম ওসমান। এ সময় তার কণ্ঠ ভারী হয়ে যায়। এমপি সেলিম ওসমানের পাশাপাশি এসময় উপস্থিত অনেককেই চোখের জল মুছতে দেখা গেছে। এমপি সেলিম ওসমান ছাড়াও প্রয়াত আবুল জাহের এর স্মৃতিচারন করতে কেঁদেছেন বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ, বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। এ সময় কান্না ধরে রাখতে না পেরে মাঝ পথেই বক্তব্য দেওয়া ছেড়ে দেন আতাউর রহমান মুকুল ও খালেদ হায়দার খান কাজল।
বুধবার ১৯ আগস্ট বাদ আসর নাসিম ওসমান মডেল হাইস্কুল মাঠে প্রয়াত আবুল জাহের এর পরিবারের উদ্যোগে চেহলাম উপলক্ষ্যে উক্ত দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এর পক্ষে ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী এমপি, ও মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলুর পক্ষে আহসান আদেল রহমান এমপি তাদের প্রেরিত শোক বার্তা পাঠ করে প্রয়াত আবুল জাহের এর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান আরো বলেন, জাহের ভাই এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি কোনদিন আমার কাছে নিজের জন্য কিছু চাননি। এই করোনা কালেও তিনি আমার অফিসে গিয়ে রাত ২/৩ টা পর্যন্ত বসে থাকতেন। বন্দরের মানুষের কথা বলতেন। কোন কাজটা করলে বন্দরের মানুষের উপকার হবে। সকাল বেলা উঠে জাহের ভাইকে ফোন করে খোজ খবর নেওয়া আমার একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছিলো। মঙ্গলবার আমি দিনাজপুর ছিলাম, সকালের জাহের ভাইকে ফোন করে বসি। ওপাশ থেকে জাহের ভাইয়ের কন্ঠ না পেয়ে স্মরণ হলো জাহের ভাই যে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। জাহের ভাই আমাদের মাঝে নেই এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা। জাহের ভাইয়ের শূন্যস্থান পূরন হওয়ার নয়। তবে আমি সানাউল্লাহ সানুকে দায়িত্ব দিতে চাই জাহের ভাই যেভাবে বন্দরের মানুষের কথা গুলো, প্রয়োজনীয়তা গুলো আমার কাছে পৌছে দিতো। রশিদ ভাই মুকুলকে নিয়ে আমাকে সকল কাজে সহযোগীতা করতো ঠিক তেমনি ভাবে যেন আমাকে সহযোগীতা করেন। এতে করে জাহের ভাইয়ের আত্মাও শান্তি পাবে যে তার অবর্তমানে তার বন্দরের মানুষের দু:খ দুদর্শার লাগবে আমরা কাজ করছি। আপনারা সবাই জাহের ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন উনি যেন জান্নাত বাসী হয়।
প্রয়াত আবুল জাহের এর আত্মার মাগফেরাত করে তাঁর সর্ব কনিষ্ট মেয়ের বিয়ে প্রসঙ্গ টেনে স্মৃতিচারন করনে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী।
স্মৃতির চারন করে বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ বলেন, জাহের ভাই তার কর্মজীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সততার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি নিজেও সৎ থেকেছেন অন্যকেউ সৎ রাখার চেষ্টা করেছেন। আজকে উনি আমাদের মাঝে নাই। আমরাও হয়তো একদিন সবাই চলে যাবে। কিন্তু আমাদের কাছে এখনো কিছু দায়িত্ব রয়ে গেছে। জাহের ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ গুলো আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন।
বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য, রশিদ ভাই, জাহের ভাই এবং আমি যখন এক টেবিলে আলোচনায় বসতাম তখন আমাদের কখনো মনেই হয়নি আমরা ভিন্ন ভিন্ন দল করি। আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা একটি পরিবার। এই দেশ আমাদের আমরা সবাই মিলে দেশ উন্নয়নের কাজ করছি। আমাদের মাঝে কোন মান অভিমান ছিল না। অনেক হয়তো মনে করতে পারে এমপি সাহেব আমাকে চাপ দিয়ে নির্বাচন করতে দেননি। কিন্তু তা না আমিই রশিদ ভাইকে বলেছি ভাই নির্বাচনটা এবার আপনি করেন। আমাদের মাঝে সম্পর্কটা এমন ছিল। আজকে জাহের ভাই আমাদের মাঝে নাই। আমি এমপি সাহেবকে একটা দায়িত্ব দিতে চাই। আপনার নিজের তিনটি সন্তান তাদের দায়িত্ব আপনার। আজকে থেকে আপনাকে আরো ৭টি সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে। জাহের ভাইয়ের অবর্তমানে আপনি উনার ৭টি সন্তানের দায়িত্ব নিবেন। এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বক্তব্য দেওয়া ছেড়ে দেন আতাউর রহমান মুকুল।
বক্তব্য দিতে এসে শুরুতে কেঁদে ফেলেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল। কাদতে কাদতে তিনি বলেন আমি কিছু বলতে পারবো না আপনারা সবাই জাহের ভাই এর জন্য দোয়া করবেন।
দোয়া মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এর সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক আফজাল হোসেন, জেলা সেচ্ছাসেবক পার্টির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফয়সাল আহম্মেদ সাগর, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, প্রয়াত আবুল জাহের এর সহধর্মিনী, পাঁচ মেয়ে, জামাতা, দুই ছেলে সহ আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টি, বিএনপি নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা।
উল্লেখ্য, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভূগছিলেন। রোববার ২৬ জুলাই অসুস্থ্য অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে। ১৫ আগস্ট তিনি মৃতুবরণ করেন। তিনি ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য। এছাড়াও তিনি দীর্ঘ ২২ বছর বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।