নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ ইস্যুতে বিরোধ দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলে। সংগঠনের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল এবং সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদের নেতৃত্বে যুবদলের একটি অংশ মাসুদুজ্জামান মাসুদের পক্ষে অবস্থান নিলেও মহানগর যুবদলের একটি বৃহত্তম অংশ মাসুদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গত ১৮ অক্টোবর মাসুদুজ্জামান মাসুদকে প্রধান অতিথি করে মহানগর যুবদলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। সজল-সাহেদের নেতৃত্বে মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্যের কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই সেই সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন।
সেদিনের সেই যুব সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমল, মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, জাকির হোসেন সেন্টু, আক্তার মৃধা, আহবায়ক সদস্য শহিদুল ইসলাম, আরমান, মিনহাজ মিঠু, কামরুল হাসান মাসুদ, এরশাদ আলী, ফয়জুল্লাহ সজল, আলী ইমরান শামিম, তরিকুল ইসলাম, শাহীন শরীফ, মাগফুর ইসলাম পাপন, জুবায়ের আলম ঝলক, সাঈফ হাসান রিপন, কাউসার আহমেদ, এডভোকেট শাহিন খান, কাজী নাহিদুল ইসলাম সাদ্দাম, সম্রাট হাসান সুজন, আশরাফুল হক তান্না, ফয়সাল আহমেদসহ অনেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন দুইজন ব্যবসায়ী। নারয়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর থানা নিয়ে গঠিত এই আসনকে ধরা হয় পুরো জেলার চালিকাশক্তি হিসেবে। তাই এই আসনের দিকে লোলুপ দৃষ্টি থাকে সব সময়। এবারো দুজন শিল্পপতি এই আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন। এদের মধ্যে একজন হচ্ছে মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ এবং অপরজন হচ্ছেন প্রাইম গ্রুপের মালিক আবু জাফর বাবুল ওরফে প্রাইম বাবুল।
এই দুই ব্যবসায়ীর বিগত দিনে কোন রাজনৈতিক অবদান নেই। কোনো দলের সাথেই তারা সম্পৃক্ত ছিলেন না বরং আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। বিএনপির মিটিং মিছিলে না থাকলেও নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের সাথে একই মঞ্চে প্রায়ই দেখা গেছে তাদের। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরপরই তাদের আবির্ভাব। নতুন করে ভোল পাল্টে ব্যবসায়ী থেকে বনে যান পুরোদস্তর রাজনীতিবিদ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদের পক্ষে নিয়মিত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল এবং সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ। গত ১৮ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের খানপুরে বার একাডেমি স্কুল মাঠে মহানগর যুবদলের আয়োজনে যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ।
সজল সাহেদের এই আয়োজনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় মহানগর যুবদলে। কারণ মহানগর যুবদলের মাদার সংগঠন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে এই অনুষ্ঠানের অতিথি করা হয় নাই বরং ৫ আগস্টের পূর্বে যার কোনো অস্তিত্ব ছিল না সেই মাসুদুজ্জামান মাসুদকে যুবদলের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করায় যুবদলের একটা বড় অংশ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি।
মহানগর যুবদলের যুব সমাবেশে অনুপস্থিত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক নিয়ম মানা হয় নাই। মহানগর যুবদল যদি মূল দলের কাউকে অনুষ্ঠানে অতিথি করে তাহলে অবশ্যই মহানগর বিএনপির আহবায়ক এবং সদস্য সচিবকে অতিথি তালিকায় রাখতে হবে কিন্তু নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল সেই সাংগঠনিক নিয়ম পালন করেনি। তাছাড়া মাসুদুজ্জামান মাসুদ ৫ আগস্টের পরের নেতা আর এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু গত ১৫ বছর রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করা লড়াকু সৈনিক। তাদেরকে বাদ দিয়ে হাইব্রিড কাউকে মেনে নেয়া সম্ভব না। তাই তারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৯ আগষ্ট মনিরুল ইসলাম সজলকে আহবায়ক, সাগর প্রধানকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব করে ঘোষনা করা হয় মহানগর যুবদলের তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সজল-সাহেদের নেতৃত্বে মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মূল সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর শুরু হয় ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ। এ লক্ষ্যে পরপর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কর্মীসভাও অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু হঠাৎ করে মাঝপথে এই কার্যক্রম হোঁচট খেয়ে পড়ে। আটকে যায় কর্মী সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায় ইউনিট কমিটির গঠনের কার্যক্রম। নেতাকর্মীদের কাছে যুবদলের পদ পদবী সোনার হরিণ হয়েই থাকলো।