নারায়ণগঞ্জ মেইল: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা সফল করতে মত বিনিময় সভার আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের আওতাধীন বিভিন্ন পূজা মন্ডপের প্রতিনিধিগণকে নিয়ে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে চাষাড়াস্থ গোপাল জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময় সভায় শুরুতে ওপেন ফ্লোরে মাইক দিয়ে দেয়া হয়। এতে করে উপস্থিত বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিনিধিগণ তাদের স্ব স্ব পূজা মণ্ডপের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। মন্ডপ এলাকায় ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করাসহ বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সকল সমস্যার কথা মন দিয়ে শোনেন জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা এবং সাধ্যমত সমাধানের আশ্বাস দেন।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, বাংলাদেশ অসম্প্রদায়িক ভাতৃত্ববোধের দেশ। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এখানে মিলেমিশে বাস করে। সকলের উৎসব-পার্বণে আমরা সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করি। এদেশের লাল সবুজ পতাকায় সকলের সমান অংশগ্রহণ রয়েছে। তবে একটি অসাধু চক্র আমাদের এই ভ্রাতৃত্ববোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা উপায়ে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হিন্দুদের মন্দির ভাঙ্গা হচ্ছে। মন্দিরের সম্পত্তি দখল হচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নির্যাতন করা হচ্ছে। এটা কোন শুভ লক্ষণ নয়। এতে করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই আতঙ্কের মধ্যেই চলে এসেছে শারদীয় দুর্গোৎসব। আমরা আশা করি এবং বিশ্বাস করি সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে এ আতঙ্ক দূর হবে এবং সুন্দর ও সফলভাবে দুর্গোৎসব পালিত হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেয়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো পুরোপুরি দূর হয়ে যায়নি। তাই আমরা গতবারের মতো এবারও সীমিত পরিসরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গোৎসব পালন করব। ধর্মীয় পূজা-অর্চনার মাধ্যমে স্বাত্তিক পূজা পালনের চেষ্টা করবো। সকল প্রকার আনুষ্ঠানিকতা বর্জন করবো। পূজা হবে কিন্তু উৎসব হবে না। সূর্যের আলো থাকতে থাকতেই আমরা বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন করবো। বিজয়া দশমীতে নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কে কোন শোভাযাত্রা হবে না। উচ্চস্বরে কোন গান বাজবে না। পূজা মন্ডপে শুধুমাত্র ধর্মীয় সংগীত বাজানো হবে।
ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিখন সরকার শিপন বলেন, ফেসবুক ব্যবহারে আমরা সবাই সচেতন থাকবো। কোন প্রকার গুজবে সায় দেব না। নিজে কোনো গুজব ছড়াবে না, অন্যকেও গুজব ছড়ানো থেকে বিরত রাখবো। কোন পূজামণ্ডপে যদি সমস্যা হয় তাহলে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্থানীয় কমিটিকে অবগত করতে হবে। সেই সাথে প্রতিটি মণ্ডপে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা পালনে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই মহামারী দূর হয়ে গেলে আমরা আবার জাঁকজমকপূর্ণভাবে আনন্দ উল্লাসের সাথে দূর্গা উৎসব পালন করবো। সকলকে শারদ শুভেচ্ছা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় এসময়ে আরোও উপস্থিত ছিলেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, মহানগরের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, ফতুল্লা থানা কমিটির সভাপতি রঞ্জিত মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক শিবু দাস, সোনারগাঁওয়ের সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক এড. প্রদীপ ভৌমিক, বন্দরের সভাপতি শংকর দাস, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মন, রূপগঞ্জের সভাপতি গনেশ পাল, আড়াইহাজারের সভাপতি হারাধন চন্দ্র দে, পূজা পরিষদ নেতা হিমাদ্রি সাহা হিমু, সুশীল দাস, তপন দাস, তপন গোপ সাধু, সঞ্জয় দাস, অভিরাজ সেন সজল, কৃষ্ণ আচার্যসহ জেলা ও মহানগর এবং উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।