আইনজীবীর বাড়ি দখলের অভিযোগ মেয়র আইভীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে

নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় আইনজীবীর জমি দখল ও বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জলের বিরুদ্ধে। উজ্জল সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর আপন ছোট ভাই।

অভিযোগে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার কামাল মোল্লার উপস্থিতিতে করপোরেশনের ভেকু দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর টিনশেড বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। দখলকালে  যুবলীগ নেতার দেড় শতাধিক সমর্থক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ফতুল্লা থানা পুলিশকে খবর দিলেও কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আইনজীবী।

ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘১৯৮২ সালে আমার দাদা সমশের আলী উক্ত দাগের ৪৩ শতাংশ সম্পত্তি থেকে পৌনে ২২ শতাংশ ক্রয় করেন। বাকি জায়গা ক্রয় করেন মেয়র আইভরি বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা। ১৯৭৫ সালে মাপ নিয়ে তাদের জায়গা বুঝে নিয়ে চুনকা সাহেব নকশায় স্বাক্ষর করে দেয়াল নির্মাণ করেন। সম্প্রতি চুনকার ছেলে ও মেয়র আইভীর ভাই আলী রেজা উজ্জল আমাদের বাড়িতে জায়গা পাবে বলে দাবি করে আসছে। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মেয়র আইভীর ভাই ও মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জলের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে’।

এ আইনজীবীর অভিযোগ, ‘সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ভেকু ও উচ্ছেদকর্মী নিয়ে আসেন সার্ভেয়ার কামাল মোল্লা। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা ভেকু দিয়ে আমাদের ঘর ভাঙা শুরু করে। আমি মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে গেলে যুবলীগ নেতা উজ্জল ছিনিয়ে নেয় এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরে বাসার ফোন দিয়ে ৯৯৯-এ কল দিলে ফতুল্লা থানা পুলিশের এসআই কামাল হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন। তখন যুবলীগ নেতা উজ্জল এসআইকে সাইডে নিয়ে কথা বলার পর তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে চলে যান’।

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা সিটি করপোরেশন এসে উচ্ছেদ করে এমন নজির কোথাও নেই। সেই মহা অমানবিক কাজটি আজ হয়ে গেল আমার সঙ্গে। তারা আমার টিনশেড বাড়ির রুমগুলো ভেকু দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাইনি। এ ব্যাপারে আমি উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেব’।

সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বলেন, ‘কালাম মোল্লা সিটি করপোরেশনের বেতন ভুক্ত সার্ভেয়ার। সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ হলে আমাদের পক্ষ থেকে সার্ভেয়ার যায়। কিন্তু মেয়রের ব্যক্তিগত জমিতে তিনি কেন গেলেন বা কার নির্দেশে গিয়েছেন, সেটা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন। আর ভেকু সিটি করপোরেশন থেকে ভাড়া দেওয়া হয়’।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রথমে তিনি বলেন, ‘সম্পত্তিটি আমার বাবার। এর মালিক আমার ভাইয়েরা। তাদের জিজ্ঞেস করুন’।

পরবর্তীতে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখলে সিটি করপোরেশন যেতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘এক বছর ধরে তাদের বলা হচ্ছে জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা ছাড়েনি’।

আইভী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনাদের বিচার করতে পারলে মহল্লার বিচার করতে পারব না কেন?

তিনি স্বীকার করেন যে, সিটি করপোরেশনের সার্ভেয়ার ভেকু তিনিই পাঠিয়েছেন।

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কেন ফেরত গেল এবং পুলিশ যাওয়ার পর ফের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুজ্জামান বলেন, ‘এমন কিছুই আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব’।

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে কেন ফেরত গেল এবং পুলিশ যাওয়ার পর ফের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাকিবুজ্জামান বলেন, ‘এমন কিছুই আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব’।

ঘটনাস্থলে যাওয়া এস আই কামাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষকে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে বলি। কোনো ধরনের কাজ না করার জন্য নিষেধ করে চলে আসি। পরে কি হয়েছে আমি জানি না’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি ওসি সাহেবকে বলেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম’।

সূত্র: দৈনিক দেশ রূপান্তর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

নারায়ণগঞ্জ মেইলে এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

সর্বশেষ