নারায়ণগঞ্জ মেইল: সারা বিশ্ব কাঁপছে মহামারি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে। বাংলাদেশেও গত মাস থেকে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। এক দফা লকডাউন শেষ করে আবারো সর্বাত্মক লকডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সেই সাথে করোনা সচেতনতার পাশাপাশি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলির কোথাও মানা হচ্ছে না এ বিধি নিষেধ। নারায়ণগঞ্জের প্রধাণ প্রধাণ সড়কগুলোর উপরেই পড়ে আছে ময়লা আবর্জনা। কোথাও বা এসব আবর্জনার স্তূপ পঁচে সেখান থেকে নির্গত হচ্ছে দুর্গন্ধ। ময়লার উপড়ে অসংখ্য মাছির ভন ভনানি আর পঁচা আবর্জনার ভ্যাঁপসা গন্ধে নাক চেপেও হাঁটার উপায় নেই এই পথ দিয়ে। এমন চিত্রই দেখা যাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বঙ্গবন্ধু সড়ক, নবাব সিরাজ উদ দৌলা সড়ক এবং নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের বেশ কিছু স্থানে। নারায়ণগঞ্জ শহরকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হলেও প্রতিষ্ঠানটির জন্মলগ্নের ১০ বছরেও নগরীতে দেখা মেলেনি ময়লা ফেলার স্থায়ী জায়গা বা ডাষ্টবিনের। ফলে প্রধান সড়কের উপড়েই গৃহস্থালী বর্জ্যসহ বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরার পঁচা বাসি খাবার, মৃত পশু পাখির উচ্ছিষ্ট অংশসহ পঁচনশীল এবং অপঁচনশীল সব বর্জ্য ফেলা হচ্ছে প্রধান সড়কের উপড়েই। অপরদিকে এসব ময়লা অপসারণে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরতদের গাফিলতিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে সড়ক গুলোতে। বিষয়টি নিয়ে নাসিকের উপড় ক্ষুদ্ধ সচেতন মহল।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠনের অর্ধ যুগেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো শহরে রয়ে গেছে স্থায়ী ডাষ্টবিনের অভাব। প্রতি অর্থ বছরেই নগরীর উন্নয়নে নাসিকের বড় বাজেট ঘোষণা করা হলেও কোন বাজেটেই থাকেনা ডাষ্টবিন সমস্যার সমাধান। ফলে নগরীর প্রধান সড়কগুলোকেই ময়লা ফেলার উপযুক্ত করে তুলছেন স্থানীয়রা। নগরীর প্রতিটি সড়কেই দেখা মিলবে এমন ময়লার ভাগাড়। বেলা গড়িয়ে দুপুরেও এসব ভাগাড় থেকে ময়লা নিতে দেখা যায় নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। এর মাঝেও সময়টুকুতে ময়লার তীব্র গন্ধে পথ চলতে হয় নগরবাসীকে।
সরজমিনে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে দেখা যায় ময়লার স্তুপ জমে আছে সড়কের পাশেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এখনো আসেনি ময়লা নিতে। একটু সামনে এগোতেই কালিবাজারে নবাব সিরাজ উদ দৌলা সড়কের উপড়ে দেখা গেলো সিটি করপোরেশনের দুটি ট্রাকে করে ময়লা নিয়ে যাচ্ছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। তখন সময় দুপুর ৩টা। এতো বেলা করে ময়লা অপসারণের বিষয়টিকে ভালো ভাবে দেখেননি একজন পথচারী।
এদিকে কিছুদিন পূর্বে জেলা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে শহরের দ্বিগুবাবুর বাজার সংলগ্ন মীর জুমলা সড়কের উপড় জমে থাকা ময়লার ভাগাড় পরিষ্কার করে সড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও সড়কের উপড়ে আবারও বাজারের বর্জ্য পদার্থ ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করছেন ব্যবসায়ীরা। সময়মত নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা অপসারণ করতে না আসায় এই ভাগাড়ের আয়তন বেড়েই চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে যে কোন সময় মীর জুমলা সড়ক অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে যাওয়ার শংকা প্রকাশ করছে সচেতন মহল।
শুধু প্রধান সড়কগুলোই নয়, নাসিকের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লাগুলোতে গেলেও চোখে পড়বে সড়কের উপড়ে গৃহস্থালী বর্জ্যরে স্তূপ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্দিষ্ট ডাষ্টবিন না থাকায় যার যেখানে খুশি ময়লা ফেলে যাচ্ছে আশপাশের লোকজন। ফলে সড়কে ময়লার স্তূপ সৃষ্টি হয়ে সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে করে অতিষ্ট এলাকাবাসী। নিয়মিত কর পরিশোধ করেও এমন নোংরা পরিবেশ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাছে কারোই কাম্য নয় বলেও দাবী জানান তারা।
ময়লার স্তূপ দেখা গেছে নবাব সলিমুল্লাহ সড়কেও। খানপুর জোড়া পানির ট্যাংকির একটু সামনে এগুতেই দেখা যাবে ময়লার ভাগাড়। যেখানে গৃহস্থালী বর্জ্য ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন ডায়গনিষ্টিক সেন্টারের রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন, রক্তমাখা ব্যান্ডেজসহ বিভিন্ন পদার্থ দেখা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বেশিরভাগ সময়েই সকাল গড়িয়ে দুপুরে ময়লা অপসারণে আসে নাসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এদের কিছু বলতে গেলেই এরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, ‘অফিসে গিয়া জানান।’ এসময় কয়েকজন দোকানদার এ প্রতিবেদককে জানান, নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে প্রতিমাসেই ময়লা অপসারণের জন্য দোকানগুলো থেকে চাঁদা তুলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়া হয় এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। এর পরেও নির্দিষ্ট সময়ে ময়লা নিতে অনীহা প্রকাশ করে তারা। এদিকে ময়লার দুর্গন্ধে একদিকে যেমন নিজেরা অতিষ্ট, অপরদিকে দোকানে আসা ক্রেতাদেরকেও পরতে হয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। বিষয়টিও স্থায়ী সমাধান চেয়েছেন তারা।