নারায়ণগঞ্জ মেইল: নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অধিবাসীরা বর্তমানে প্রায় সকল নাগরিক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। এতোদিন নগরবাসী এসব বিষয়ে নানা অভিযোগ অনুযোগ করেও কোন সুফল পায়নি। বিশেষ করে শহরের প্রধাণ সড়কে প্রতিদিনই তীব্র যানজট, রাস্তায় ময়লা আর বেওয়ারিশ কুকুর ও রাতে মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। আর তাই নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের প্রশ্নে এখন অনেকটাই কোনঠাসা নাসিক মেয়র আইভী।
জানা যায়, নানামুখি সমস্যায় নাকাল নগরবাসী। ঘরে মশা, বাইরে কুকুর এবং পথে চলতে গেলে ময়লার তীব্র দুর্গন্ধ, সেই সাথে রয়েছে যানজট আর ফুটপাতের হকার সমস্যা। সব মিলিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দারা। নগরীর উন্নয়নে ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দর-সিদ্ধিরগঞ্জের বিশাল অংশ নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। উদ্দেশ্য ছিল মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ও একটি সৌন্দর্য্যবান্ধব নগরী উপহার দেয়া। তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, নাসিক গঠনের পর প্রায় ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারেনি নাসিকবাসী। বিষয়টি নিয়ে বেশ ক্ষুদ্ধ সচেতন মহল। প্রতি অর্থবছরেই নাসিকের বাজেটে উন্নত নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে তার কোনটিই দেখা যায়নি।
জানা যায়, ২০১১ সালে পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার পর গত দুই মেয়াদে সিটি নির্বাচনে মেয়রের আসনে আসীন হয়ে আছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নগরবাসীর জীবন মান উন্নয়ন এবং নারায়ণগঞ্জকে একটি উন্নত নগরী হিসেবে গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মেয়র আইভী, ক্ষমতার ৯ বছরেও নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতির পূর্ণ সুফল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এখনো নানাবিধ সমস্যায় প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যনজট, ময়লা, মশা এবং কুকুরের উৎপাত নিয়ে অসহনীয় ভোগান্তিতে রয়েছে নাসিকের বাসিন্দারা।
সূত্র বলছে, সিটি এলাকা হওয়া সত্তেও নগরীর ব্যস্ত সড়কগুলোর পাশেই পরে থাকে হোটেল ও গৃহস্থালী পঁচা বাশি খাবার এবং ময়লা আবর্জনা। যেখান থেকে মৃত পশু পাখির উচ্ছিষ্ট টেনে হিচড়ে সড়কের উপড় ফেলে খাচ্ছে একদল কুকুর। আবর্জনার স্তূপ থেকে নির্গত হচ্ছে পঁচা দুর্গন্ধ। পাশেই নাকে মুখে হাত চেপে যাতায়ত করছে সাধারণ মানুষ। চিরচেনা এই চিত্রটি দেখা যাবে নগরীর ব্যস্ততম সড়ক নবাব সিরাজ উদ দৌলা, নবাব সলিমুল্লাহ এবং বঙ্গবন্ধু সড়কের বেশ কিছু স্থানেই। সড়কের আশপাশে কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেলার স্থায়ী কোন ডাষ্টবিন না থাকায় যত্র তত্র আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে স্থানীয়রা। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রাপথে সাধারণ যাত্রীদেরকে। গৃহস্থালী ও ঘরোয়া হোটেল রেস্টুরেন্ট ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়গনিষ্টিক সেন্টারে রোগীদের কাজে ব্যবহৃত ইনজেকশন, রক্তমাখা চাদর ইত্যাদি বস্তু পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে পূর্বে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পরেও স্থায়ী ডাষ্টবিন নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে নগরীর ব্যস্ততম সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনার জন্য স্থায়ী ডাষ্টবিনের বিষয়টি এখনো অবদি রয়ে গেছে পরিকল্পনাধীন।
এদিকে গেলো বছর ডেঙ্গুর প্রভাবে গোটা দেশ যখন নড়েচড়ে বসে, তখন মশক নিধনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন তোড়জোড় চালালেও নতুন বছরের শুরু থেকেই মশক নিধনে ঝিমিয়ে পড়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নাসিকের প্রতিটি এলাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে মশার উপদ্রব। দিনের বেলায় মশার উপদ্রব কিছুটা কম হলেও সন্ধ্যের পর থেকেই মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠে নগরবাসী। সচেতন মহলের অভিযোগ, মশক নিধনে নাসিকের নিয়ম মাফিক কর্মকান্ড পরিচালিত না থাকায় দিনকে দিন মশার উপদ্রব বেড়েই চলেছে। কিছু কিছু এলাকায় দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রব বেশ চোখে পড়ার মতো।
অপরদিকে হাইকোর্ট থেকে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কুকুর নিধনে নাসিকের অনীহার কারণে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ। নাসিকের প্রতিটি পাড়া মহল্লাতেই মূর্তমান আতংক হয়ে দাড়িয়েছে কুকুর আতংক। দলবেধে ছুটে চলা এসব প্রাণীগুলো দিনকে দিন এতোটাই ভয়ানক হয়ে উঠছে যে, সড়কপথে চলতে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন সচেতন মহল। আর বিষয়টি নিয়ে নাসিক কর্মকর্তারা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে সামনে দাড় করিয়ে দেয়ায় সমস্যাটির সঠিক সমাধান খোঁজে পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। ফলে প্রতিনিয়তই কুকুর আতংক নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
তাছাড়া নারায়ণগঞ্জের প্রধাণ সড়কগুলোতে নিত্যই লেগে থাকছে বিকট যানজট। নাসিকের উদাসিনতায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ রিক্সা আর যত্র তত্র গড়ে উঠা অবৈধ অটো ও টেম্পু ষ্ট্যান্ডই এসব জানজটের মূল কারন বলে উঠে এসেছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে এ বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
সচেতন মহলের অভিযোগ, নিয়মিত নাসিকের কর পরিশোধের পরেও নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। শীঘ্রই চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে নাসিককে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে ভুক্তভোগী মহল।