নারায়ণগঞ্জ মেইল: আলোচিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিতর্ক বাড়ছে সিটি মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভীকে ঘিরে। ধর্মীয় উপাসনায়লয়ের জায়গা নিয়ে হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের জনগন আইভীর উপর নাখোশ। বিশেষ করে ঐতিহাসিক ডিআইটি মসজিদ প্রসঙ্গে মুসলমানরা এবং ঐতিহ্যবাহী জিউস পুকুর ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায় নাসিক মেয়র আইভীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। হিন্দুরাতো তাদের দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষায় ইতিমধ্যেই আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে দিয়েছেন। হিন্দুদের পক্ষে কথা বলায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহার নামে মামলাও করেছেন আইভী আর ডিআইটি মসজিদ রক্ষায় আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল।
জিউস পুকুর ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপড় বেজায় চটেছেন নারায়ণগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। দেবোত্তর সম্পত্তি দখল থেকে মেয়র ও তার পরিবারের লোকজনকে সরে যেতে এবং নিজের কৃতকর্মের জন্য হিন্দু সমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন ধর্মীয় সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। অন্যথায় আসন্ন নির্বাচনে মেয়রকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর দেওভোগ এলাকার ঐতিহাসিক জিউস পুকুর সংলগ্ন অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু সম্প্রদায়’ এর ব্যানারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘এড. খোকন সাহা এই দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়া বিগত কয়েকদিনে আপনারা এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ করেছেন। তাই আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটা প্রভাবিত করেছে। এর আগে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম এবং সুস্পষ্টভাবে বলেছিলাম যে, এটা দেবোত্তর সম্পত্তি। খোকন সাহা আপনাদের সামনে ৬ টি দলিল দেখিয়েছে। এটা প্রকৃতপক্ষে দেবোত্তর সম্পত্তি, মন্দিরের সেবায়েত নিজে বলেছেন, এই পুকুর সাড়ে ৩শ’ বছর আগের এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি’।
তিনি বলেন, এই সম্পাত্তির যে দলিলই হোক না কেনো, সেটি অবৈধ। কাজেই আমি বলবো, আজ এখনে যারা আন্দোলন করছে, এটা ন্যায় সংগত আন্দোলন। আপনাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এর কারণে আজ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক নেতৃবৃন্দ সকলে সংহতি প্রকাশ করেছেন। আজ যারা এই সম্পত্তিকে নিজের সম্পত্তি দাবি করছেস এটা খুবই নিন্দনীয়। মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বলবো, আপনার যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, তাহলে এই দেবোত্তর সম্পত্তি ছেড়ে দিবেন। কারণ আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি এবং লাখ লাখ মানুষ এই মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে। এর লক্ষ্য ছিলো বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব একটি আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে ধর্ম নিরপেক্ষ, শোষন মুক্ত গণতান্ত্রিক একটি দেশ কায়েম হবে। গনতন্ত্রের প্রধান লক্ষ্য হলো আইনের শাসন, যেখানে ধর্ম নির্বিশেষে সবার সমান অধিকার থাকবে।
এদিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারীর জুম্মার খুতবায় মাওলানা আব্দুল আউয়াল মেয়র আইভীর সমালোচনা করে বলেন, ‘উনি নারায়ণগঞ্জের মেয়র। মুসলিম পরিবারের মেয়ে হয়ে সিঁদুর লাগিয়ে মন্দিরে গিয়ে পুজা করছেন। সেই ছবি নাকি ভাইরাল হয়েছে। একজন আমাকে এনে দেখালেন। আপনি কোরবানী করেন না, অথচ ১০ মহরমে গরু জবাই করেন। মাজারপন্থী, শিরকপন্থীদের সমর্থন করেন আর কওমি মাদ্রাসা পন্থীদের সতিনের ছেলে মনে করেন। আপনি তো সেই আইভী। আপনার ইতিহাস উন্মোচন হচ্ছে। এগুলো কোন দিন মুসলমানেরা সহ্য করবে না’।
আব্দুল আউয়াল আরও বলেন, ‘এখন আবার আলোচনা শুনছি, ডিআইটি মসজিদের সামনে নাকি ফ্লাইওভার বানানো হবে আর শেখ রাসেল পার্কের দর্শনার্থী নারী-পুরুষ সব মসজিদের উপর দিয়ে চলাচল করবে। আপনারা বুঝতে পেরেছেন ব্যাপারটা? এখনও বুঝেন নাই? এখন উনার টার্গেট ডিআইটি মসজিদ নিয়ে যাওয়ার। মসজিদ নিয়ে নিজের মন মত বানাবে। আমাকেও বলেছিলেন, মসজিদটা তাকে দিয়ে দিতে। আর এখন আমি ‘সাধারণ সম্পাদক’ হওয়ায় তার মাথা তেলে বেগুনে জ্বলতে শুরু করেছে।’
আব্দুল আউয়ালের ভাষ্য, ‘আপনি মেয়র হওয়ার বহু আগে থেকেই এখানে এই মসজিদ সরকারি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই জায়গা আপনার বাবার না। রেলওয়ের জায়গা দখল করে যা মনে চায়, তাই করছেন। এখন আবার ডিআইটি মসজিদ নিয়েও আপনি যা মনে চায়, তাই করতে চাইছেন? ‘আইভী’ আপনি মনে রাইখেন, আমি আব্দুল আউয়াল চলে যেতে পারি। নারায়নগঞ্জের জনগণ কোন দিনও আপনাকে ছাড়বে না। হে ইমানদারেরা, ইমানের উপর বলিয়ান হও। এই ডিআইটি মসজিদের উপর যদি কেউ হাত দিবে, তার কবর রচিত হবে এই বাংলার জমিনে। ডিআইটি মসজিদের সামনে ফ্লাইওভার কোনদিনও বাস্তবাযয়িত হতে দিবো না।’
আইভীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তার (আইভী) অবস্থাটাও বুঝতে পারতেছি না। মাসদাইর গোরস্থানে দীর্ঘদিন একটা মাদ্রাসা ছিল। মাদ্রাসাটা ভেঙ্গে দিসো। মসজিদটা ভেঙ্গে সে একটা মসজিদ করছে। মসজিদে সে তার মন মত বেদাতি ইমাম ঢুকাইছে। আমাদের দীর্ঘ বছরের যে হক ইমাম ছিল তাকে উচ্ছেদ করেছে। সেখানে সে বলেছিল নিজস্ব অর্থায়নে মাদ্রাসাটা করে দিবে। এখন পর্যন্ত তারা মাদ্রাসাটা করে দিচ্ছে না। ইদানিং খবর পেলাম বাগে জান্নাত একটি মসজিদ মাদ্রাসা ভাঙ্গার জন্য প্রথম লোক পাঠাইছে। পরবর্তীতে সে নিজে যাইয়া বলেছে এটা ভেঙ্গে দিবে এটা সিটির জায়গায় আছে। এখানে শিশু পার্ক বানাবে। মসজিদ ভেঙ্গে মাদ্রাসা ভেঙ্গে শিশু পার্ক বানাইবো। ইদানিং আরও আলোচনা শুনতেছি ডিআইটি মসজিদের সামনে দিয়ে সে একটা ফ্লাইওভার বানাবে রাসেল পার্ক পর্যন্ত। সেদিন লোকজন এসে মেপে গেছে। পার্কের দর্শনাথীরা উপর দিয়ে যাবে। মসজিদের মুসল্লিরা নিচ দিয়ে যাবে।