নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের বর্তমান কমিটির সাথে পাল্লা দিয়ে এতোদিন মহানগর যুবদলের ব্যানারে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করেছেন মাজহারুল ইসলাম জোসেফ। এবার তার সাথে যোগ হয়েছেন মহানগর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মমতাজ উদ্দিন মন্তু, বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান, আহবায়ক সদস্য সহিদুল ইসলাম, সদর থানা যুবদল নেতা বাপ্পি শিকদারসহ মহানগর যুবদলের একটা বড় অংশ। এতে করে মহানগর যুবদলের বিদ্রোহী অংশ শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে।
সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বর্তমান কমিটির বিভিন্ন কর্মকান্ডে ক্ষোভ জানিয়ে যুবদলের একটি বৃহৎ অংশ আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে একপক্ষ আরেক পক্ষের বিপক্ষে বক্তব্য প্রদান করছে এবং সেই বক্তব্যের কাউন্টারও দেওয়া হচ্ছে। মহানগর যুবদলের মূল ধারার বিপরীতে বিদ্রোহী গ্রুপের শোডাউন দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মূলধারা থেকে বিদ্রোহী গ্রুপে যোগ দিচ্ছেন অনেকে।
ঘটনা সূত্রপাত গত ১৮ অক্টোবর। বিএনপিতে সদ্য যোগদানকারী শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদকে প্রধান অতিথি করে মহানগর যুবদলের ব্যানারে যুব সমাবেশের আয়োজনকে কেন্দ্র করে। ওই অনুষ্ঠান মহানগর যুবদলের বর্তমান কমিটির একটা বড় অংশ বয়কট করে রাজনৈতিক উন্নয়নে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সংগঠনের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল এবং সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদের নেতৃত্বে যুবদলের একটি অংশ মাসুদুজ্জামান মাসুদের পক্ষে অবস্থান নিলেও মহানগর যুবদলের একটি বৃহত্তম অংশ মাসুদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। সজল-সাহেদের নেতৃত্বে মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্যের কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই সেই সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন।
সেদিনের সেই যুব সমাবেশে অনুপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমল, মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, জাকির হোসেন সেন্টু, আক্তার মৃধা, আহবায়ক সদস্য শহিদুল ইসলাম, আরমান, মিনহাজ মিঠু, কামরুল হাসান মাসুদ, এরশাদ আলী, ফয়জুল্লাহ সজল, আলী ইমরান শামিম, তরিকুল ইসলাম, শাহীন শরীফ, মাগফুর ইসলাম পাপন, জুবায়ের আলম ঝলক, সাঈফ হাসান রিপন, কাউসার আহমেদ, এডভোকেট শাহিন খান, কাজী নাহিদুল ইসলাম সাদ্দাম, সম্রাট হাসান সুজন, আশরাফুল হক তান্না, ফয়সাল আহমেদসহ অনেকে।
এরপর গত ২৫ অক্টোবর বন্দরে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের উদ্যোগে যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। সেই মিলনমেলায় যোগ দেয় মহানগর যুবদলের সাবে ক আহ্বায়ক মমতাজ উদ্দিন মন্তু, বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ মহানায়ক সাগর প্রধানসহ মহানগরের যুবদলের একটি বড় অংশ। সেই অনুষ্ঠানে মহানগরের যুবদলের বর্তমান কমিটির আহবায়ক এবং সদস্য সচিবের উদ্দেশ্যে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন সাগর প্রধান।
এরপর গত ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নারানগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক মনিরুল ইসলাম সজল এবং সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের নেতৃত্বে শহরে বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি মাজহারুল ইসলাম জোসেফ এবং সাগর প্রধানের নেতৃত্বে শহরে আরেকটি শোভাযাত্রা বের হয়। এদিনই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের ব্যানারে চিটাগাং রোড এলাকায় শোভাযাত্রা করেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম। একদিনে মহানগর যুবদলের তিনটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে মহানগর যুবদলের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।
মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক সজল এবং সদস্য সচিব সাহেদ মহানগর যুবদলের একটি বড় অংশকে মাইনাস করে রাজনীতি করতে চাচ্ছেন যা ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে নেতাকর্মীদের মনে। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এখন মহানগর যুবদলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং বিদ্রোহী গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। মহানগর যুবদলের এই বিরোধ মিটানো না গেলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২৯ আগষ্ট মনিরুল ইসলাম সজলকে আহবায়ক, সাগর প্রধানকে সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব করে ঘোষনা করা হয় মহানগর যুবদলের তিন সদস্যের আহবায়ক কমিটি।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সজল-সাহেদের নেতৃত্বে মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মূল সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর শুরু হয় ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ। এ লক্ষ্যে পরপর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে কর্মীসভাও অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু হঠাৎ করে মাঝপথে এই কার্যক্রম হোঁচট খেয়ে পড়ে। আটকে যায় কর্মী সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায় ইউনিট কমিটির গঠনের কার্যক্রম। নেতাকর্মীদের কাছে যুবদলের পদ পদবী সোনার হরিণ হয়েই থাকলো।
