নারায়ণগঞ্জ মেইল: আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিলেন শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকার পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর হাত থেকে সদস্যপদ গ্রহণ করেন তিনি।
এদিকে শিল্পপতি মডেল মাসুদের বিএনপিতে যোগদানের খবরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে। দীর্ঘ ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকা নেতাকর্মীরা কোনভাবেই মডেল মাসুদকে মেনে নিতে পারছেন না। দলের দুঃসময়ে যাকে কাছে পাওয়া যায়নি, দলের সুসময়ে তাকে মেনে নেয়া সম্ভব না বলে জানিয়েছে তৃণমূল। আর মডেল মাসুদের মত শিল্পপতিদের দলে ভিড়িয়ে বিএনপির রাজনীতিতে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এমনটাই অভিমত তাদের।
তৃণমূল সূত্রে প্রকাশ, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে রাজপথে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে পুলিশের হামলা মামলা আর নির্যাতন সহ্য করেও রাজপথ ছেড়ে যায়নি তারা। বছরের বেশিরভাগ সময় ঘরবাড়ি আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে পালিয়ে যাযাবর জীবন যাপন করতে হয়েছে, প্রায়ই থাকতে হয়েছে কারাগারে। তবুও জিয়ার আদর্শ আর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অবিচল ছিলেন তারা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের দুঃসময়ের অবসান ঘটে। সেই সাথে আগমন ঘটে কিছু হাইব্রিড সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের যাদের গত ১৭ বছর দেখা যায়নি। এরা উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছেন, বিভিন্ন মিটিং মিছিলে সামনের সারিতে জায়গা নিচ্ছেন।
বিএনপি’র তৃণমূল মনে করে, দুঃসময়ে যারা বিএনপির ঝান্ডা ধরেছিলেন, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, সুসময় তাদেরকেই মূল্যায়ন করতে হবে। কোন অতিথি পাখিকে তারা মেনে নেবেন না বিএনপির হাই কমান্ডের কাছে তাদের এই একটাই প্রত্যাশা।
তবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে দীর্ঘদিন যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তাদেরকে হতাশ করে দিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে শিল্পপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের মনোনয়ন চাইছেন। এ লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি তিনি বিশাল আয়োজন করে ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন যা দেখে তৃণমূল নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
তৃণমূল মনে করে বিএনপির গত ১৭ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে একদিনের জন্যও রাজপথে দেখা যায়নি মডেল মাসুদকে। বরং সে সময়ে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের সভা সমাবেশে প্রায়ই দেখা মিলেছে তার। দুঃসময়ের আন্দোলন সংগ্রামে যখন সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে তখন মাসুদুজ্জামান মাসুদ পুরোপুরি ব্যবসায়ী মেজাজে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে ব্যবসা করেছেন, কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী আন্দোলনের মিটিং মিছিলে একবারের জন্যও দেখা মিলেনি মডেল মাসুদের। সারাদেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সরকারের মামলা হামলায় জর্জরিত হলেও মডেল মাসুদকে কোনদিন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বিরক্ত করেনি। দলের দুঃসময় কেটে যাওয়ায় মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন এই ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের আমলে কামানো কোটি কোটি টাকা নিয়ে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন কেনার প্রতিযোগিতায়।
তবে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দিনে যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেই দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। যারা আওয়ামী লীগ আমলে মামলা হামলা খায়নি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন আর মোটা টাকার মালিক হয়েছেন, তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হলে তারা মানবেন না। এবারের দলীয় মনোনয়ন যাতে টাকায় বিক্রি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে দলের হাই কমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।