নারায়ণগঞ্জ মেইল: দরজায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য দলের হাই কমান্ডে লবিংয়ের পাশাপাশি নিজস্ব কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগের প্রাথমিক কাজটুকু সেরে ফেলছেন অনেকেই। তবে এদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির দলীয় প্রতীক পেতে টাকার বস্তা নিয়ে নেমেছেন। মূলত যারা বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন না বরং সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে অগাধ টাকার মালিক হয়েছেন তারাই টাকা দিয়ে বিএনপির মনোনয়ন কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। দলীয়ম মনোনয়ন পেতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত তারা টাকা ছিটিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তারা সফল হন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি আসনে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন তিনজন ব্যবসায়ী। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফতুল্লার ব্যবসায়ী মোঃ শাহ আলম। যিনি বিগত সময়ে কল্যাণ পার্টির নেতা ছিলেন। সেখান থেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে এই আসনেই নির্বাচন করেছিলেন কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় না আসায় আর রাজনৈতিক মাঠে তাকে দেখা যায়নি। এমনকি ঘোষণা দিয়ে বিএনপির সকল পদ পদবী থেকে পদত্যাগ করেছিলেন শাহ আলম।
দুঃসময়ের আন্দোলন সংগ্রামে যখন সারা দেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে তখন শাহ আলম পুরোপুরি ব্যবসায়ী মেজাজে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে পাল্লা দিয়ে সমান তালে ব্যবসা করেছেন, কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী আন্দোলনের মিটিং মিছিলে একবারের জন্যও দেখা মিলেনি শাহ আলমের। সারাদেশে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সরকারের মামলা হামলায় জর্জরিত হলেও শাহ আলমকে কোনদিন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ বিরক্ত করেনি। দলের দুঃসময় কেটে যাওয়ায় আবারো মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছেন এই ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের আমলে কামানো কোটি কোটি টাকা নিয়ে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন কেনার প্রতিযোগিতায়।
তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দিনে যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেই দলীয় মনোনয়ন দিতে হবে। যারা আওয়ামী লীগ আমলে মামলা হামলা খায়নি, আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন আর মোটা টাকার মালিক হয়েছেন, তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হলে তারা মানবেন না। এবারের দলীয় মনোনয়ন যাতে টাকায় বিক্রি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে দলের হাই কমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আসন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৫ যা সদর এবং বন্দর থানা নিয়ে গঠিত। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে এই আসনকে ধরা হয় পুরো জেলার চালিকাশক্তি হিসেবে। তাই এই আসনের দিকে লোলুপ দৃষ্টি থাকে সব সময়। এবারো দুজন শিল্পপতি এই আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন। এদের মধ্যে একজন হচ্ছে মডেল গ্রুপের কর্ণধার মাসুদুজ্জামান মাসুদ ওরফে মডেল মাসুদ এবং অপরজন হচ্ছেন প্রাইম গ্রুপের মালিক আবু জাফর বাবুল ওরফে প্রাইম বাবুল।
এই দুই ব্যবসায়ীর বিগত দিনে কোন রাজনৈতিক অবদান নেই। কোনো দলের সাথেই তারা সম্পৃক্ত ছিলেন না বরং আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন। বিএনপির মিটিং মিছিলে না থাকলেও নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমানের সাথে একই মঞ্চে প্রায়ই দেখা গেছে তাদের। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরপরই তাদের আবির্ভাব। নতুন করে ভোল পাল্টে ব্যবসায়ী থেকে বনে যান পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। বিএনপির কিছু বিপথগামী উচ্ছিষ্টভোগী নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে করছেন শোডাউন, আয়োজন করছেন ভুরিভোজের। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে বিএনপির একাধিক ত্যাগী এবং রাজপথের লড়াকু প্রার্থী থাকায় এই দুই ব্যবসায়ীর সকল টাকাই যে জলে যাচ্ছে তা নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায়।