নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিতর্কিত নেতা আতাউর রহমান মুকুল বিএনপি’র গঠনতন্ত্র বোঝেন না এবং মানেন না। তিনি প্রকৃত রাজনীতিবিদ হলে যে দলের রাজনীতি করেন সে দলের গঠনতন্ত্র মেনে চলতেন। তিনি সাংগঠনিক লোক না তাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও বোঝেন না। তিনি যদি সাংগঠনিক লোক হতেন তাহলে তার জানা থাকা উচিত ছিলো কোনো ইউনিট কমিটি গঠন করতে হলে আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। তাদের দুজনের বাইরে কমিটির গঠনে কেউ স্বাক্ষর করার ক্ষমতা রাখেন না। কমিটি গঠনে আহবায়ক সদস্য সচিব ছাড়া অন্য কারো স্বাক্ষর করার এখতিয়ার নেই- এই সহজ বিষয়টা যে বোঝে না বা মানে না তাকে রাজনীতিবিদের পর্যায়ে ফেলা যায় না।
আতাউর রহমান মুকুল কর্তৃক বন্দর থানা ও বন্দর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে এভাবেই কথাগুলো বলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) মুঠোফোনে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আব্দুস সালাম।
আব্দুস সালাম আজাদ আরো বলেন, আতাউর রহমান মুকুল মহানগর বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তাই এখন তিনি কোনো পদে নেই। যিনি নিজেই পদহীন, যার নিজেরই কোনো পদ নেই তিনি কি করে আরেকজনকে পদ দিতে পারবেন, তিনি কি করে নতুন কমিটি গঠন করতে পারবেন। আতাউর রহমান মুকুল কমিটি গঠনের ক্ষমতা রাখেন না, তাই তার গঠিত কমিটি সম্পুর্ন অবৈধ। এটা তার পারিবারিক কমিটি হতে পারে, সামাজিক কমিটি হতে পারে কিন্তু এটা দলের কোনো কমিটি না, বিএনপি’র কোনো কমিটি না। বিএনপির কমিটি হবে বিএনপি’র গঠনতন্ত্র মেনে, কোনো ব্যক্তির ইচ্ছায় নয়।
এদিকে বিএনপির মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দলের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় মুকুলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলের এই চরম গুরুত্বপূর্ণ সময় যখন সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করার ডাক দিচ্ছে দলের হাই কমান্ড তখন অদৃশ্য ইশারায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন মুকুল। নিরীহ বিএনপি’র নেতা কর্মীদেরকে ভুল বুঝিয়ে মুকুল বিএনপির ঐক্য নষ্ট করে প্রতিপক্ষকে সুবিধা করে দিচ্ছেন বলেই মনে করে তৃণমূল তাই অবিলম্বে মুকুলকে বিএনপির সকল পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা ।
সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করা আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের। বিএনপির গুরুত্বপূর্ন পদে থেকেও তিনি প্রায় এক যুগ যাবত সরকারী দলের নেতাদের তাবেদারি করেছেন, এমনকি তার থেকে নানাভাবে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচিগুলোতে অংশ না নিলেও সরকারী দলের অনুষ্ঠানে মিছিল নিয়ে শোডাউন করতেন। সেই ‘লাঙ্গল মার্কা’ মুকুল নিশ্চয়ই নতুন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপি সাজার চেষ্টা করছে বলে আশংকা তৃণমূলের। কয়েক বছর আগে একটি অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ গালি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা, যে অনুষ্ঠানে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয় সে গালি হজমের পাশাপাশি মুচকি হাসিও দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। ২০১৫ সালের ১৬ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানকে ‘কুকুর’ বলে গালাগাল করেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতা গোপীনাথ দাস। সে অনুষ্ঠানের মঞ্চে অতিথি হিসেবে বসে ছিলেন বিএনপি নেতা আতাউর রহমান মুকুল। তিনি হাসিমুখে সে গালি হজম করেন কোনো প্রতিবাদ করেননি।
এছাড়াও গত ১৫ বছর যাবত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। সরকারি দলের হামলা-মামলার শিকার হয়েছে জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন আত্মগোপনে পালিয়ে থেকেছে কিন্তু এসব কিছুই পোহাতে হয়নি আতাউর রহমান মুকুলকে। তিনি দিব্যি শহরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন। তাকে দেখা গেছে সরকারি দলের বড় বড় নেতাদের সাথে সভা-সমাবেশে অথচ দেখা মিলেনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে।
এমনকি গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন মুকুল। বন্দরের কেন্দ্রগুলো থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। প্রকাশ্যে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকারি দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছেন মুকুল- এমন অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ ধরনের গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাকে সিটি নির্বাচনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, যা বিএনপি নেতাকর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আর তৈমূরকে সহযোগিতা করায় এটিএম কামালকে দল থেকে বহিস্কার করা হয় অথচ এটিএম কামালের মতো মুকুলও সরাসরি তৈমূরকে নির্বাচনে সহযোগিতা করেছিলেন কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। তৈমূরের নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে মুকুল বলেছিলেন ‘তৈমূূরের পক্ষে কাজ না করলে নারায়ণগঞ্জ থেকে বের করে দেয়া হবে’।