নারায়ণগঞ্জ মেইল: নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া ভাবে বাল্কহেড-কার্গো জাহাজ চলাচলের কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। আর কত প্রাণ গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ রোববার (২০ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার আল-আমিন নগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় ফের মুন্সিগঞ্জগামী এম এম আশরাফ উদ্দিন নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছে।
এরআগে গত বছরের ৮ জুলাই এক কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছিল। এতে নারী ও শিশুসহ ৩৪ জনের প্রাণহানি হয়। এছাড়াও প্রতিনিয়ত শীতলক্ষ্যায় নো-দুর্ঘটনা ঘটছে। অভিযোগে রয়েছে, নৌ পুলিশ যথাযথ ভাবে দায়িত্ব অবহেলার কারণে নৌ দুর্ঘটনা বাড়ছে। সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরকে আলাদা করে করে রেখেছে শীতলক্ষ্যা নদী। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ শীতলক্ষ্যা নদী পারাপার হতে হয়। শীতলক্ষ্যায় নৌযান চলাচলে শৃঙ্খলা না থাকায় প্রতিনিয়তই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। যাত্রী নেওয়ার কথা ১০ জন; কিন্তু মাঝিরা নৌকায় উঠাচ্ছেন ২৫-৩০ জন যাত্রী। ফলে স্বস্তির যাত্রা নিমেষেই পরিণত হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায়। রবিবার দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদীতে পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় ফের মুন্সিগঞ্জগামী এম এম আশরাফ উদ্দিন নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনাস্থালে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ার পথে এমনই ঝুঁকিপূর্ণ নৌযাত্রা দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ বন্দর ১ নং খেয়াঘাটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটের নৌকার মাঝিরা অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ঝুঁকি নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী পারাপার করছে। নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করেই মাঝিরা এই ঝুঁকিপূর্ণ নৌ যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত এ ঘাটে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেছে। সাদেক নামে আরেক যাত্রী বলেন, অনেক সময় দেখা যায় নদী দিয়ে আসা বালুবাহী ট্রলার বেপরোয়াভাবে চলাচলের জন্য প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হওয়া এসব ঢেউয়’র পানিতে নৌকা মাঝ নদীতে ডুবে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী উঠানোর কারণেই এমনটি হয়।
জানাগেছে, শীতলক্ষ্যা নদীতে বেপরোয়া গতিতে তিন-চার সারিতে বাল্কহেড (বালু বহনকারী বড় ট্রলার) চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। আতঙ্কে থাকেন ইঞ্জিনচালিত সাধারণ ট্রলার ও নৌকার মাঝি-যাত্রীরা। বাল্কহেডের চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে নৌ পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি সাধারণ মানুষের। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বন্দর সেন্ট্রাল ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীসহ খেয়া পারাপারের ট্রলার ও নৌকা চলতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরপরই ঘাট থেকে ট্রলার ও নৌকা ছেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে দ্রুত গতিতে চলছে বাল্কহেড। মাঝেমধ্যে দেখা যায় ট্রলার ও নৌকার খুব কাছাকাছি দিয়ে দ্রুত গতিতে চলছিল বাল্কহেড। বিকেলের পর থেকে নদীতে বাল্কহেড চলাচলের সংখ্যাও বেড়ে যায়। দুর্ঘটনার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশের কাছে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও স্থানীয় মাঝি ও লোকজন জানিয়েছেন, বাল্কহেডের ধাক্কায় মাসে চার থেকে পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে।
সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে লক্ষাধিক যাত্রী পারাপার হন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক। খেয়াঘাটে ২০০ নৌকা চলাচল করে। জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকা। এ ছাড়া ইঞ্জিনচালিত ট্রলার আছে ১২টি। জনপ্রতি ভাড়া ২ টাকা। সকাল ৭টা থেকে সাড়ে আটটা, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। এই ঘাটে নিয়মিত নৌকা ও ট্রলার চালান এমন ব্যক্তিরা বলেছেন, শীতলক্ষ্যা দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ বাল্কহেড চলাচল করে। বালুমহাল থেকে বাল্কহেডগুলো বালু নিয়ে রূপগঞ্জ, পূর্বাচলের বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি ও বালুর গদিঘরে সরবরাহ করে। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ও বিশৃঙ্খল ভাবে বাল্কহেড চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ থাকায় ঝুঁকি নিয়েই নদী পারাপার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশ ফাড়ির ওসি মনিরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ মেইলকে বলেন, আজকে ভীষন ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে পপরে কথা বলবো।